অষ্টম-নবম শ্রেণির বই এখনো ছাপাখানায়
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:২৭
ঢাকা: আর মাত্র দুই দিন বাদেই শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। এবারও উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক স্তরের শতভাগ বই জেলা-উপজেলাগুলোতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু ছাপা হতে দেরি হওয়ায় মাধ্যমিকের সব বই এখনো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিন বই উৎসবে অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাচ্ছে না। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এই দুই শ্রেণির বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।
২০২৩ সালে শিক্ষার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। পরীক্ষার ফলকেন্দ্রিক শিক্ষাক্রম থেকে বেরিয়ে এ বছর থেকে যোগ্যতাভিত্তিক শিখনকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে শিক্ষাক্রম। আর নতুন এই কারিকুলাম শুরু হয় তিন শ্রেণির মধ্য দিয়ে। প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক যোগ হবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণি। অন্যদিকে মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সঙ্গে যোগ হবে অষ্টম ও নবম শ্রেণি। সে লক্ষ্যে বছরের শুরু থেকে চলছিল পাঠদানের আয়োজন। নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি আগে ভাগেই বই প্রস্তুতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু নতুন কারিকুলাম নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হলে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়াতে শুরু করে। এনসিটিবি জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঠ্যবই নিয়ে নানা গুজব ও অপপ্রচার ঠেকাতেই ছাপার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়। শুধু তাই নয় গুজবও ছড়ানো হয়। ‘বিবর্তনবাদ’ নিয়ে গুজব সৃষ্টির পর অভিভাবকদের মধ্যে অস্থিরতা দূর করতে বাদ দেওয়া হয় বিবর্তনবাদ সংক্রান্ত বিষয়বস্তু। এ কারণে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ ও বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ এবং নবম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ ও বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ বই ছাপার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার জন্য দেরিতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। সব কিছু মিলিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই ছাপাখানায় পাঠানো শুরু হয় গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে। যা এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই বছরের শুরুতে এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে বই প্রেসে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে যতটুকু ছাপা হয়েছে তা নিয়েই উৎসব হবে। কারণ বছরের প্রথম দিন হচ্ছে বই উৎসবের দিন, সেদিনই শিক্ষার্থীদের জন্য বই প্রস্তুত থাকবে। যেসব বই পরে ছাপা হবে, সেগুলোও ১০ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে যাবে।
এদিকে সমালোচনা রয়েছে নতুন কারিকুলামে পাঠদান নিয়েও। এই কারিকুলামে পুরো শিক্ষাক্রম তৈরি হয়েছে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জনের একটি শিখন ব্যবস্থা তৈরির জন্য। এতে পাল্টে গেছে গতানুগতিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাও। ফলে এই পদ্ধতির সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত না করানো গেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বলেন, আমাদের প্রচুর সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং এই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে এরই মধ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতি বছর যেমন নতুন সাবজেক্ট যোগ হচ্ছে তেমনি শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষকদের শূন্য পদ পূরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শূন্যপদ পূরণ ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন সহজ হবে।
এনসিটিবি সূত্র অনুযায়ী, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার ৫১৭টি পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮টি পাঠ্যবই। প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এক কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জনকে দেওয়া হবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭টি পাঠ্যবই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৩১টি পাঠ্যবই। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬টি পাঠ্যবই।
আর মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭টি পাঠ্যবই। দাখিল ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হবে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২টি পাঠ্যবই। ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭টি পাঠ্যবই। কারিগরির জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫০৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হবে ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২টি বই। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ৭২৮ টি বই দেওয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের সকল বই এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে গেছে। মাধ্যমিকের মোট ৭৫ ভাগ বই বিতরণ সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস