Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক লাখ ৮৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন, বিশেষ নজরদারিতে দাগি আসামিরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:০৮

ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সারাদেশে এক লাখ ৮৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন। নির্বাচনের দায়িত্বে, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম, ম্যাজিস্ট্রের সঙ্গেও ডিউটিতে থাকবে পুলিশ সদস্য। এমনকি ওইদিন যিনি থানার সিসি লেখেন, তিনিও নির্বাচনি দায়িত্বে থাকবেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রাত্যহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন) আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি এলাকা থেকে পুলিশ যেকোনো অভিযোগ পেলে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছে। পুলিশের কাছে সব প্রার্থী সমান। প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সব প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পান, সেটির নির্দেশনা দেওয়া আছে। জামিন পাওয়া আসামিদের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি অব্যাহত আছে।’

ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি এরাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো অভিযোগ পেলে সেগুলোর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পুলিশ তাদেরকে সহযোগিতা করছে। কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসাররা যেভাবে নিরাপত্তা নির্দেশনা দিবেন পুলিশ সেভাবে কাজ করবে।’

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। কোনো কোনো দুর্গম এলাকার কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সেগুলোর বিষয়েও পুলিশ বাড়তি ফোর্স দিয়ে কাজ করছে। পুলিশ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’

নির্বাচন কেন্দ্রিক মারামারা ও দাঙ্গা হাঙ্গামা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ঘটনার পরই মামলা হচ্ছে। পুলিশ ওইসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছে না। পুলিশ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষভাব দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশের কোনো কর্মকর্তা নিরপেক্ষ হারানোর অভিযোগ আসলে তাৎক্ষনকিভাবে তাকে বদলি বা প্রত্যাহার করছে। এরপরও ওই কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা হারানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুলিশের কাছে সকল প্রার্থী সমান। প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে সকল প্রার্থী যেনো সমান সুযোগ পান, সেটা নির্দেশনা দেওয়া আছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ রেলে আগুনসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। রেল পুলিশের মাধ্যমে রেলের নিরাপত্তায় বিভিন্ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইপি ক্যমেরা বসানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা রাজনৈতিক কারণে নয়, রাজনীতি করা অপরাধ নয়। তবে কেউ যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যানবাহনে আগুন দেওয়া, ভাংচুর করা, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তাহলে নির্দিষ্ট মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের কারও কারও হয়তো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। সেটা না দেখে নাশকতায় সম্পৃক্ত কি-না সেটা বিবেচনায় নিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে।’

বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী পক্ষের ২৬ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে এই তথ্য সঠিক কি-না জানতে চাইলে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরোয়ানা তামিলসহ বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগে সারাদেশে গড়ে এক হাজার ৬০০ জনের মতো গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের পদধারি সংখ্যা কতো সেটা আমাদের কাছে হিসাব নেই। সারাদেশ থেকে তথ্য নিয়ে সে হিসাব তৈরির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কেউ ফৌজদারী অপরাধে সম্পৃক্ত হলে পুলিশ শুধু তাদেরকেই গ্রেফতার করছে।’

নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণেও বাঁধা দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবে কিনা বা ভোট দেওয়া, না দেওয়ার অধিকার ভোটারের আছে। কিন্তু ভোট দিতে বাঁধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই।’

বিভিন্ন এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শণ করে হুমিক দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এই ডিআইজি বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে আমাদের বিশেষ অভিযান চলমান। বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও বহন নিষিদ্ধ করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় কেউ বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন বা বহন করতে পারবে না। আমাদের কাছে নির্দিষ্ট এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের দুটি অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্ত করে দেখেছি সেগুলো ছিল খেলনা অস্ত্র।’

দাগি আসামি ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা জামিনে বেরিয়ে নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোনো আসামি জামিনে বেরিয়ে আসলে সে নতুন করে অপরাধে না জড়ালে পুলিশ গ্রেফতার করার সুযোগ নেই। জামিন পাওয়া আসামিদের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি অব্যাহত আছে। তারা কোনো অপরাধ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এদিকে থার্টি ফার্স্টের নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘থার্টি ফার্টের নিরাপত্তার বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। আইজিপিও বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। থার্টি ফাস্ট নাইটে আতশবাজি ফুটানো ও ফানুষ ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উন্মুক্তস্থানে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না।’

এছাড়া গুলশান, বনানী ও ৩০০ ফিটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

  • অভিযোগ পেলে গুরুত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হবে
  • ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না
  • কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাৎক্ষনকিভাবে বদলি-প্রত্যাহার
  • সারাদেশে এক হাজার ৬০০ জন গ্রেফতার 
  • জামিনে আসা আসামিদের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি

সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, এআইজি এনামুল হক সাগর ও পুলিশ সদর দফতরের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা একেএম কামরুল আহসান।

সারাবাংলা/ইউজে/ইআ

টপ নিউজ পুলিশ সদর দফতর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর