Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজীর উন্নয়ন যাত্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন কাঞ্চন এখন আলোকিত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:১২

নারায়ণগঞ্জ: ‘একটা সময় কাঞ্চনের মানুষ যদি ঢাকা যাওয়ার পরিকল্পনা করতো তবে সেদিন আর অন্য কোনো কাজ করা যেত না— এমন অবস্থা ছিল। কারণ, তখন সকালে রওয়ানা দিলে সন্ধ্যায় পৌঁছতাম ঢাকা। ফলে সেদিন আর ঢাকা থেকে ফেরা হতো না অনেকেরই। কিন্তু এই এলাকার বর্তমান রাস্তাঘাট দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না ফেলে আসা দিনগুলোর দুর্ভোগের কথা’— এক সময়ের অবহেলিত কাঞ্চন পৌরসভার বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘একটা সময় প্রায় প্রতিটি এলাকাই থাকতো অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিন্তু এখন শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় কাঞ্চন পৌরসভা। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ প্রায় প্রতিটি জায়গায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে সড়ক ব্যবস্থাপনা এতটাই ভালো হয়েছে যে, মাত্র ১৫ মিনিটে আমরা ঢাকা চলে যেতে পারি। আর এই উন্নয়নের রূপকার আমাদের এলাকার সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক)। তার উন্নয়ন কাঠির ছোঁয়ায় আলোকিত কাঞ্চনে কমেছে মানুষের দুর্ভোগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন কাঞ্চন আর গ্রাম নেই, শহরে রূপান্তর হয়েছে গাজীর নেতৃত্বে। রূপগঞ্জের অন্যান্য এলাকার মতো কাঞ্চন পৌরসভা নিয়ে গোলাম দস্তগীর গাজীর উন্নয়ন ভাবনায় উন্নত হয়েছে কাঞ্চনের বাসিন্দাদের জীবনমানও।’

তবে শুধুমাত্র মেয়র নন, সরেজমিনে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তার বক্তব্যের প্রতিফলনই যেন দেখা গেল।

ঢাকা বিভাগের পূর্ব সীমানায় স্রোতস্বিনী শীতলক্ষ্যার তীরের নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা কাঞ্চন। ২০০২ সালে এই পৌরসভার যাত্রা শুরু হলেও নাগরিক সুবিধা ছিল সীমিত। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই অনুন্নত ছিল যে কাঞ্চন পৌরসভার বাসিন্দারা হয়ে পড়ে পিছিয়ে পড়া জনপদের অবহেলিত জনগণ। ফলে এখানকার অনেকেই পাড়ি জমাতো রাজধানী ঢাকার দিকে।

তবে বিগত ১৫ বছরের পাল্টেছে কাঞ্চন পৌরসভার চিত্র। এখন কাঞ্চন থেকে মানুষকে ঢাকায় চাকরির খোঁজে যেতে হয় না। বরং উন্নয়নের ছোঁয়ায় কাঞ্চনেই গড়ে উঠেছে বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা। ফলে এখন বাইরের মানুষেরা কাঞ্চন পৌরসভায় আসে চাকরির সন্ধানে।

পিছিয়ে পড়া পৌরসভা কাঞ্চনের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই উন্নত হয়েছে যে, বর্তমানে রাজধানী থেকে খুব অল্প সময়েই পৌঁছানো সম্ভব হয়। একই সময়ে পৌরসভার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন ও খেলার মাঠের কারণে এই এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য বাইরের এলাকার যাওয়ার হারও কমে গেছে। স্বাস্থ্যসেবায়ও এগিয়েছে কাঞ্চন পৌরসভা।

স্থানীয়রা জানান, গত দেড় দশকে বদলে গেছে কাঞ্চন পৌরসভার অবস্থা। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে থমকে যাওয়া কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কাঞ্চন পৌরসভা টেক্কা দিতে পারবে সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও। আর এমন অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য স্থানীয়রা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এলাকার সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) প্রতি।

স্থানীয়রা জানান, একটা সময় অবহেলিত থাকলেও কাঞ্চন পৌরসভার অবস্থার উন্নতি ঘটা শুরু হয় ২০০৯ সালের পর থেকে। বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কাঞ্চনের বাসিন্দাদের অন্য এলাকার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। টানা তিন বারের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর দিকনির্দেশনায় নতুন নতুন সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণের কারণে বর্তমানে কাঞ্চনের কাউকে বাইরে চাকরি জন্য যেতে হয় না।

বরং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমানে কাঞ্চনে গড়ে উঠেছে অনেক উন্নয়নমূলক আবাসিক এলাকা (হাউজিং প্রকল্প), কল-কারখানা ও বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হচ্ছে কাঞ্চনের বাসিন্দাদের পাশাপাশি অন্য এলাকা থেকে আসা মানুষদেরও। ফলে আবাসিক এলাকার পাশাপাশি স্থানীয়রাও নিজেদের বাড়ি সম্প্রসারণ করছে যেখান থেকে তারা মাসিক ভাড়া পেয়ে থাকেন। ফলে সংসার চালানোর জন্য আর অন্য কারো দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না এখানের কাউকে।

আগে এই রাস্তাগুলো দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখা যেত প্রায় সময় কাঁদা থাকতো। আর এখন রাস্তা প্রশস্ত হওয়ার পাশাপাশি ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো হয়েছে। ফলে এখন আগের মতো পানিও জমা থাকে না। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যসেবা নিতে দ্রুত হাসপাতালে যেতে পারছে মানুষ। আগে কাঞ্চন থেকে চনপাড়া যেতে সময় লাগতো দুই থেকে তিন ঘণ্টা। আর এখন কাঞ্চন থেকে চনপাড়া হয়ে কেউ যদি নরসিংদী যেতে চায় তবে তা ৩০ মিনিটেই সম্ভব।

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত রূপগঞ্জের যেন নদীর ভাঙন রোধ করা যায় সেজন্য তীর সংরক্ষণ ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে বাজার ভবন। এলাকার উন্নয়নের ফলে গড়ে উঠছে বিভিন্ন কল-কারখানা, গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে বাইরের জেলা থেকেও এখন বসবাস করতে কাঞ্চন আসছে মানুষ। আর তাদের ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি।

কাঞ্চন পৌরসভার খাঁপাড়া নিবাসী নার্গিস আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন যে পাকা সড়কে গাড়ি নিয়ে ঘুরছেন সেখানে আগে রাস্তায় ছিল না। পেয়ে হেঁটে গেলেও দেখা যেত প্রায় সময় রাস্তায় জমে থাকা পানির কারণে নানা রকমের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। আর এখন দেখেন এই এলাকার রাস্তার কী অবস্থা…! কেউ কি এখন বিশ্বাস করবে আমরা একসময় রাস্তায় নামার ভয়ে ঘর থেকে বের হতাম না।’

তিনি বলেন, ‘আগে রাস্তার দুরবস্থার কারণে এখানে অ্যাম্বুলেন্স আসতে চাইতো না। ফলে আমাদের অসুস্থ রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। আর এখন রাস্তাঘাট হওয়ার কারণে এলাকায় হাসপাতালও হচ্ছে। শুধুমাত্র সরকারিভাবেই নয়, বরং বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রও গড়ে উঠছে। গোলাম দস্তগীর গাজী সংসদ সদস্য হিসেবে যে পরিমাণ উন্নয়ন কাজ এখানে করেছেন তা আর কেউ করতে পারেননি।’

কাঞ্চন চিনতলা এলাকার একটি চায়ের দোকানে কথা হয় সগীর আলী নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির সঙ্গে। সারাবাংলার এই প্রতিবেদকে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন কাঞ্চন থেকে চনপাড়া যেতে সময় লাগতো দুই থেকে তিন ঘণ্টা। আর এখন কাঞ্চন থেকে চনপাড়া হয়ে কেউ যদি নরসিংদী পৌঁছাতে চায় তবে তা ৩০ মিনিটেই সম্ভব। আগে মানুষ নদী ভাঙন নিয়ে ভয়ে থাকতো। তবে গোলাম দস্তগীর গাজীর দূরদর্শী ভাবনায় কেটে গেছে সেই ভয়। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত রূপগঞ্জকে যেন নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করা যায় সেজন্য তীর সংরক্ষণ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে যারা স্থানীয় ব্যবসায়ী আছে তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বাজার ভবন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে এখানে তেমন ঘরবাড়ি ছিল না। মানুষজন কোন সাহসে বাড়ি-ঘর করবে, এলাকাতে তো থাকার পরিস্থিতিই ছিল না। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি হওয়ার পরে সেই অবস্থা পাল্টেছে। এলাকার উন্নয়নের ফলে গড়ে উঠছে বিভিন্ন কল-কারখানা, গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। ফলে বাইরের জেলা থেকেও এখন বসবাস করতে কাঞ্চন আসছে মানুষ। আর তাদের ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি। এই এলাকাটা যদি একটু ঘুরে দেখেন তবে কোনো ঘর ভাড়া দেওয়ার সাইনবোর্ড পাবেন না।’

এ সময় পাশে থাকা শামসুল হক নামে আরেকজন ব্যক্তি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দস্তগীর গাজী ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কাঞ্চনের উন্নয়ন করার। তিনি তার প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। আর তাই পরের দুই বার তাকে বিজয়ী করে রূপগঞ্জের ভোটাররা। তিনি যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা করে দেখিয়েছেন। আর তাই আমরা এবারও আশা করছি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হবেন।’

কাঞ্চনের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন

কাঞ্চনের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। কাঞ্চনের সলিমুদ্দিন চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে হয়েছে নতুন ভবন। কাঞ্চন ভারতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, কাঞ্চন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাত্তার জুট মিল উচ্চ বিদ্যালয়, মহর আলী শাহনুর বানু উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়েছে নতুন নতুন ভবন। আধুনিক শিক্ষার প্রসারে এখানে করা হয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব।

এছাড়াও বেশকিছু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও এলাকার ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও উন্নয়ন ঘটেছে চোখে পড়ার মতো। স্থানীয়রা জানান, এই সব উন্নয়ন হয়েছে সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) কারণেই।

কাঞ্চন ভারতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গোলাম দস্তগীর গাজীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় রূপগঞ্জের শিক্ষাখাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। ফলে আমরা অনেকগুলো নতুন শ্রেণিকক্ষ পেয়েছি। অনেক নতুন শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছে প্রতিষ্ঠানে। কারিগরি ও জেনারেল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার ২০০। প্রাথমিক শাখাসহ এই সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যাবে।’

কালাদী শাহাজউদ্দীন জামেয়া-ই-ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন রূপগঞ্জে হয়েছে তা ঈর্ষণীয়। আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রূপগঞ্জের অন্যান্য ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে ভবন বর্ধিত করার কারণে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীরা বর্তমানে শিক্ষাগ্রহণ করতে পাড়ছে।’

ছাত্তার জুট মিলস মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধুমাত্র পাঠদানের জন্য ভবনই নয় বরং শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠও বেড়েছে রূপগঞ্জে। শিক্ষার্থীদের সুস্থ, সবল ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তাদের স্পোর্টসসহ অন্যান্য কারিকুলামের সঙ্গেও যুক্ত করতে হবে। আর সেজন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, অডিটোরিয়ামসহ নানা রকমের উন্নয়ন কাজ হয়েছে আমাদের রূপগঞ্জে। আর এ সব উন্নয়ন গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতৃত্বে হয়েছে।’

কাঞ্চন এখন আলোকিত, নাগরিকরা পাচ্ছেন বিশুদ্ধ পানি

স্থানীয়রা জানান, কাঞ্চন পৌরসভায় একসময় অন্ধকারে থাকলেও গোলাম দস্তগীর গাজীর উন্নয়নের ছোঁয়ায় বর্তমানে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা গেছে। পাশাপাশি কাঞ্চন পৌরসভার নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত হয়েছে গোলাম দস্তগীর গাজীর আমলে। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। আশ্রয়হীনদের প্রকল্পের আওতায় কাঞ্চন এলাকার ভূমিহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া হয়েছে রূপগঞ্জে। প্রতি ১০টি ঘরের জন্য একটি করে বিশুদ্ধ পানির ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়।

কাঞ্চনের স্বাস্থ্যসেবায় ঘটেছে উন্নয়ন

দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরুর দিকে নারায়ণগঞ্জ ছিল হটস্পট। রেড-জোন হলেও এখানে ছিল না কোনো নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা। তবে গোলাম দস্তগীর গাজী সবার আগে সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন করোনা মোকাবিলায়।

করোনা যখন মহামারি আকার ধারণ করে সারাবিশ্বে তখন বেসরকারিভাবে বাংলাদেশে প্রথম আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয় রূপগঞ্জের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) নির্দেশনায়। গাজী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মূর্তজা পাপ্পার সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই ল্যাবটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রথম হটস্পট নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসাস্থল। নামমাত্র মূল্যে সরকারি খরচে এই গাজী আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করানোর ফলে দ্রুত চিকিৎসাসেবাও শুরু করা যায় সংক্রমিতদের। এই ল্যাবটি স্থাপন করা হয় কাঞ্চনে।

এছাড়াও কাঞ্চনের অন্যান্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। কাঞ্চনের বাসিন্দারা সহজেই স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সরকারিভাবে ওষুধও দেওয়া হয়ে থাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

এছাড়া এই এলাকার কিডনি আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা নেওয়ার জন্য এখন আর ঢাকায় যেতে হয় না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাঞ্চনের কিডনির নানা সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা চাইলেই নামমাত্র মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারে রূপগঞ্জেই স্থাপন হওয়া যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারে।

উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া

নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাঞ্চন পৌরসভার আরও অনেক রাস্তার উন্নয়ন কাজ বর্তমানে চলমান আছে। কাঞ্চনের পৌরএলাকার পাড়া মহল্লার রাস্তাঘাট, বিশুদ্ধ পানি, মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, মন্দিরের উন্নয়ন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধীদের ভাতাসহ পৌরসভার সকল কার্যক্রমগুলো বর্তমানে চলমান। ইতোমধ্যে পৌরএলাকার জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থায়ী ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, কাঞ্চন পৌর এলাকাকে সবুজ-শ্যামল গড়ার লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার কলাতলী দক্ষিণ বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদের টিনের সেড নির্মাণ করা হচ্ছে। খাঁ-পাড়া কবরস্থানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। পূর্ব কালাদিএলাকায় কালভার্ট নির্মাণের পাশাপাশি খাঁ-পাড়া এলাকার প্যালাসাইডিংসহ মাটি ভরাটের কাজ চলছে। এছাড়াও পশ্চিম কালাদি এলাকায় ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। পৌরসভার নাথপাড়াএলাকায় আরসিসি পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলমান। কলাতলী থেকে মাটিয়াহাড়ি এলাকায় রাস্তার পুকুর পাড়ে প্যালাসাইডিংসহ মাটি ভরাট করা হচ্ছে। কাঞ্চন বাজার কিচেন মার্কেটের দোকান সংখ্যা বৃদ্ধিসহ উন্নয়নের পাশাপাশি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাব-মারসিবল পাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়াও কাঞ্চন রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে চরপাড়া হতে কাঞ্চন বাজার চৌরাস্তার ড্রেন এবং চৌদ্দ ফিট রাস্তা হচ্ছে। আরসিসি এবং বিশাল আকারে ড্রেন হচ্ছে। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে ১৬ ফিট আরসিসি রাস্তা এবং ড্রেনের কাজ চলমান আছে বলেও জানান পৌরসভা সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জের রূপসী কাঞ্চন-ভায়া মুড়াপাড়া ১৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা। কাঞ্চন-স্বর্ণখালী বাজার-ছনপাড়া রাস্তার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। কাঞ্চন-আতলাপুর-ডাঙ্গার ৪ দশমিক ৬১ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১৮ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা। এছাড়াও রূপসী-কাঞ্চন-জিসি থেকে দাগারখালের ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা।

এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে কাছাকাছি হলেও রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা ছিল একসময় অত্যন্ত অবহেলিত একটি এলাকা। কিন্তু এখন সেখানে কেউ গেলে বিশ্বাস করতে পারবে না আগের পরিস্থিতি। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্দেশনায় রূপগঞ্জের অন্যান্য এলাকার মতো কাঞ্চনের রাস্তাঘাটেরও উন্নয়ন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অনেক কাজ করা হয়েছে।’

প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চলছে তার বড় উদাহরণ এই রূপগঞ্জ। আর রূপগঞ্জে সব উন্নয়ন প্রকল্প সংসদ সদস্য হিসেবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নিজেই তদারকি করেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি এলাকায় এসে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনেন। সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনায় রূপগঞ্জের আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। আশা করছি সেগুলোও খুব দ্রুতই শেষ করে ফেলতে পারব।’

আর এসব উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জের তিন বারের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল গ্রাম হবে শহর। আমি সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করে গেছি। ফলে রূপগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। সড়ক পাকা করার পাশাপাশি শিক্ষা-ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবাসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করে গেছি। আমি রূপগঞ্জের ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমি কথা রেখেছি। আমি নির্বাচিত হলে ভবিষ্যতে রূপগঞ্জে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিকতা। আর সেই ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য রূপগঞ্জের ভোটাররা আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। সেজন্য আমি আমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছি। আশা করছি ভবিষ্যতেও রূপগঞ্জের ভোটাররা উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কাতেই আস্থা রাখবেন।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

করোনা মহামারি কাঞ্চন গাজী আরটি পিসিআর ল্যাব গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী রূপগঞ্জ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর