Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অশান্ত পটিয়া-আতঙ্কে ভোটাররা, কেন বারবার সংঘাত?

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪২

পটিয়া তথা চট্টগ্রাম-১২ আসনে প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনি প্রচারণায় হামলা-ভাঙচুর, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, যা সর্বশেষ রীতিমতো রক্তক্ষয়ী সংঘাতে পরিণত হয়েছে। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পটিয়ায় নির্বাচনি পরিবেশ সবচেয়ে বেশি অশান্ত হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনি প্রচারণায় হামলা-ভাঙচুর, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, যা সর্বশেষ রীতিমতো রক্তক্ষয়ী সংঘাতে পরিণত হয়েছে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে চলমান সংঘাতের ঘটনা পটিয়াজুড়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। বলা হচ্ছে, পটিয়ার পরিস্থিতি পুরো চট্টগ্রামে নির্বাচনি পরিবেশকে দূষিত করে ফেলেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রশাসন ও নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বারবার সংঘাতে ‘উদ্বিগ্ন’ হলেও প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছেন না— এমনটাই মনে করছেন সাধারণ ভোটররা। অবশ্য পুলিশ বলছে, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পরও কিছু কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, যাতে ব্যক্তিগত রেষারেষিকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আসা সামশুল হক চৌধুরী ও তার অনুসারীরা দৃশ্যত চলমান সংঘাতের মূল টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। আর সংঘাতের নির্দেশদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে তার অনুসারীদের দিকে অভিযোগের তীর যাচ্ছে। তবে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ১৫ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ভাই-বোন, ছেলের অপকর্মের জন্য জনরোষের শিকার হচ্ছেন সামশুল।

আরও পড়ুন- ‘বিরোধ-বিতর্কে’ ছিটকে পড়লেন সামশুল-দিদারুল

আওয়ামী লীগে নবাগত ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক সামশুল হক চৌধুরী ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে প্রথমবারের মতো দলটির মনোনয়ন পান। এরপর আরও দুবারসহ মোট তিনবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ হন। সর্বশেষ তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নের তালিকা থেকে ছিটকে পড়েন সামশুল হক চৌধুরী। তার বদলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ, যিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দলটির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় সভাপতি ‘কেউ ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন’ ঘোষণা দিলে সামশুল মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও ভোটের মাঠে নামেন।

বিজ্ঞাপন

১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনি প্রচার শুরু হয়। ২০ ডিসেম্বর পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজারে নির্বাচনি কার্যালয় উদ্বোধন ও গণসংযোগ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন সামশুল। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সামশুলের গাড়িসহ বহরে থাকা আটটি যানবাহনের চাকা কেটে দেওয়া হয়। হামলা থেকে বাঁচতে সামশুল বাজারের ভেতর একটি দোকানে আশ্রয় নেন, যেখানে তিনি প্রায় দুঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।

পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে সামশুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্দেশে ‘কিছু সন্ত্রাসী’ তার প্রচারে হামলা চালাচ্ছে, গাড়ি ও নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করছে এবং বিভিন্ন এলাকায় তার সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে ও নির্যাতন করছে।

এরপর থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই পটিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে সামশুলের অনুসারীদের ওপর হামলার অভিযোগ আসে। গত ২৪ ডিসেম্বর উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের অলিরহাট এলাকায় গণসংযোগে যাওয়া সামশুলের অনুসারীদের ঝাড়ু নিয়ে তাড়া করার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়, যাতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদা আক্তার। অবস্থা এমন হয়েছে, সামশুলের ভাই-বোনেরাও হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

সর্বশেষ শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) পটিয়ার কুসুমপুরা ইউনিয়নে সামশুল হক চৌধুরীর নির্বাচনি প্রচারে দুই দফা রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সামশুলের ভাই-বোনসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে তাদের দাবি। এ ছাড়া প্রার্থীর গাড়িসহ নির্বাচনি প্রচারে যুক্ত অন্তত ১৫টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। হামলার পর রাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক মনির হোসেনকে (৪৩) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া প্রার্থীর বোন সুলতানা ইয়াসমিন রেখা (৪২) এবং রাসেল (৩৩) ও কাসেম (৩৫) নামে দুই সমর্থককেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুন- সামশুলের প্রচারে হামলা-গুলি, নৌকার ৫ কর্মী গ্রেফতার

রক্তক্ষয়ী এ সংঘাতের জন্যও মোতাহেরুলকে দায়ী করে সামশুল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে, পটিয়ার অধিকাংশ মানুষ শান্তিপ্রিয়। গত ১৫ বছরে আমি পটিয়াকে সন্ত্রাসমুক্ত রেখেছি। আমার জনপ্রিয়তা ও সাধারণ জনগণের ব্যাপক সমর্থন দেখে প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম ভয় পেয়ে আমার নেতাকর্মীদের হুমকি ও হামলা শুরু করেছে। তিনি বুঝতে পেরেছেন, ভোট হলে তিনি জিতবেন না। তাই জনমনে ভীতি সঞ্চার করে ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে না যান, তার জন্য তিনি এসব করছেন। পটিয়ার সাধারণ মানুষের সঙ্গে এসব গুটিকয়েক সন্ত্রাসীর কোনো সম্পর্ক নেই।’

সামশুলের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘উনি প্রচুর মিথ্যা কথা বলেন। পটিয়ার নেতাকর্মীরা সবাই জানেন, উনি কী পরিমাণ মিথ্যা বলতে পারেন। উনি নৌকা মার্কা নিয়ে তিনবার এমপি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী উনাকে হুইপ বানিয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকাও দিয়েছেন। কিন্তু উনি নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। আমরা দল করি, দল আমাকে নমিনেশন দিলো না, তাই বলে কি আমি দলের প্রার্থী আর প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেব?’

‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, গত ১৫ বছরে উনার ভাই-বোন এবং ছেলে মিলে পটিয়ায় সাধারণ নেতাকর্মী ও জনগণকে যে পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন, মানুষের উনাদের ওপর বেশি ক্ষুব্ধ। এ জন্য জনরোষের শিকার হচ্ছেন তিনি। ১৫ বছরের দুঃশাসনের পরিণতি তিনি ভোগ করছেন। এর সঙ্গে আমি বা আমার কোনো নেতাকর্মী জড়িত নন। এখন আমার নামে মিথ্যাচার করে তিনি আবার মানুষকে বিভ্রান্ত করে সহানুভূতি পাবার চেষ্টা করছেন। উনি বলেছেন, গুলি করা হয়েছে। কোথায় ‍গুলি করা হয়েছে, কেউ তো গুলির আওয়াজ শোনেনি। কেউ তো চিকিৎসাও নিতে যায়নি। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকে!’— বলেন মোতাহেরুল।

প্রতিটি সংঘাতের ঘটনায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রতিবেদনেও ওই ঘটনাকে সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ভাই-ছেলের কর্মকাণ্ডে সংক্ষুব্ধ লোকজনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী তিন মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে উনার ভাই-সন্তান ও বোনের কর্মকাণ্ডে সংক্ষুব্ধ আছেন কেউ কেউ। আমাদের ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট বলছে, ব্যক্তিগত আক্রোশ রাজনৈতিক সংঘাতে রূপ নিচ্ছে।’

দলটির নেতাদের একাংশের অভিযোগ, যুবদল-জাতীয় পার্টি ঘুরে আওয়ামী লীগে আসা সামশুল হক চৌধুরীকে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা মেনে নেননি। কিন্তু তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের বিরোধিতা টেকেনি। সামশুল নিজের পছন্দে উপজেলা, পৌরসভা থেকে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি সাজান, যাতে বাদ পড়েন তার বিরোধীরা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনেন। এ নিয়ে গত ১৫ বছরে পটিয়ায় আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।

২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছোট ভাই মুহাম্মদ সোহেলকে (৩৫) ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। সোহেল কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি খলিলুর রহমানের ভাগ্নে। হত্যাকাণ্ডের পর আবুল কাশেমের সঙ্গে সংসদ সদস্য সামশুলের সম্পর্কের অবনতি হয়।

আরও পড়ুন- পটিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা-গুলি

এ ছাড়া গত ১৫ বছরের সামশুলের বিরোধী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতাকর্মী মামলা-গ্রেফতারের শিকার হন। হাইদগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা সাইফুদ্দিন ৩০টি মামলার আসামি হন। এসব ঘটনায় সামশুলের অঘোষিত ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) এজাজুল ইসলামের ‘হাত আছে’ বলে মনে করেন তারা। সর্বশেষ সামশুল যে কুসুমপুরা ইউনিয়নে হামলার শিকার হন, সেখানে এজারের বাড়ি এবং বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান তার বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সামশুল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘অপরাধ করলে মামলা হবে, গ্রেফতার হবে, এটাই স্বাভাবিক। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমি তো পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করিনি। ওরা বরং আওয়ামী লীগ এবং আমার নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। আমি প্রশ্রয় দিইনি বলে এখন আমার বিরুদ্ধে বলছে। যে ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই খুন হয়েছে, সেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমি সহযোগিতা দিয়েছি সবচেয়ে বেশি।’

মোতেহরুল ইসলাম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানি নয়, গত ১৫ বছর ধরে পটিয়ায় লুটপাট করেছেন এমপি ও তার ভাই এবং ছেলে। খাল খনন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পটিয়া বাইপাস সড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পটিয়া অংশের সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ওয়াটার রিজার্ভার, কৈয়গ্রাম-উজিরপুর বঙ্গবন্ধু সড়ক প্রকল্পের নামে পটিয়ার হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়েছেন।’

‘রাতারাতি মানুষের বসতভিটা এবং চাষের জমি দখলে নিয়ে কোনো ক্ষতিপূরণ দেননি। কোলাগাঁও ও চরকানাই শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন তার ছোট ভাই নবাব ও ভাগনেরা। হুইপের ভাইয়েরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা-জমি দখল করেছেন,’— বলেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।

তবে পটিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের মধ্যে মিশ্র অনুভূতি আছে। ভোটারদের মধ্যে প্রচার আছে, রাজধানীকেন্দ্রিক একটি বড় শিল্পগ্রুপের মালিকপুত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় সামশুল ও তার ছেলের। সেই শিল্পগ্রুপই সামশুলের একজন ব্যক্তিগত সহকারীকে ‘হাত করে’ তিনি মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন। এখন সামশুলের ওপর হামলায়ও সেই শিল্পগ্রুপের ইন্ধন আছে।

জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী শারুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিল্পগ্রুপ ইন্ধন দিচ্ছে কি না, আমরা নিশ্চিত নই। তবে তাদের মালিকানাধীন পত্রিকাগুলোতে একপেশে বিভিন্ন নিউজ আসছে আমাদের বিরুদ্ধে। কোনো ধরনের বস্তুনিষ্ঠতা ও পেশাদারিত্বের তোয়াক্কা তারা করছে না। তখন ভোটারদের মনে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। যেভাবে একজন প্রার্থীর পক্ষে এবং আরেকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে শিল্পগ্রুপের মিডিয়া হাউজগুলো নেমেছে, তাতে ভোটারদের কাছে অনেককিছুই পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে।’

কথা হয় পৌরসভার সুচক্রদণ্ডী এলাকার বিভু খাস্তগীর নামে একজনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমপি সাহেব পটিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বাইপাস সড়কটা তো যোগযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এনেছে। গ্রামে-গ্রামে পাকা সড়ক হয়েছে। নানা অবকাঠামো হয়েছে। এমপি সাহেব মানুষের সঙ্গে মিলে-মিশে চলেন। কিন্তু উনার ভাইদের কিছু কিছু কাজে মানুষ বিরক্ত।’

ধলঘাট ইউনিয়নের বাসিন্দা একজন কলেজ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এমপি সাহেবের ছেলের সঙ্গে শিল্পগ্রুপের সমস্যা আছে। সেজন্য তারা কোমর বেঁধে নেমেছে। না হলে এমপি সাহেব এমন কোনো অপকর্ম করেননি যে উনার ওপর বারবার হামলা হতে হবে।’

এমন সংঘাত অব্যাহত থাকলে পটিয়ার ভোটারদের বড় অংশ আতঙ্কে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না, এমন মত অনেকের। কেমন হামলা-সংঘাত ঠেকানো যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলাউদ্দীন ভূঞা জনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংঘাত কেন থামানো যাচ্ছে না, এটা বলা মুশকিল। এখানে দুজন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। প্রার্থীদের গণতান্ত্রিক মানসিকতার অভাব আছে। আমরা তাদের ডেকে কথা বলেছি, নিয়মিত কথা বলছি। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কর্মীরা এলাকায় এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে, এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।’

এ অবস্থায় ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে স্বস্তি পাবেন কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ তো আছেই। বিজিবি নেমেছে। আমরা চেষ্টা করছি। অভিযান চলমান আছে। আশা করছি, ৭ জানুয়ারির আগেই একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারব। ভোটাররা যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হবে।’

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে মারামারি করে ভোটারদের আতঙ্কিত করা যাবে না। ভোটাররা অনেক সচেতন। প্রার্থীরা যা করছেন, এগুলো সরাসরি আচরণবিধির লঙ্ঘন। আমরা গ্রেফতার করছি, আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বশেষ হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে, পাঁচজন গ্রেফতার আছে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে। তারপরও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন এবং নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন, এমন পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিতে পারব।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পটিয়ায় দুই প্রার্থীর মধ্যে যা হচ্ছে, সেটা অনভিপ্রেত। এসব সংঘাত প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রীর সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। অথচ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সুন্দরভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারতেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনিই নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাবেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পটিয়ায় এই চর্চা দেখছি না।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

চট্টগ্রাম-১২ চট্টগ্রাম-১২ আসন জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনি পরিবেশ নির্বাচনি সংঘাত পটিয়া ভাঙচুর মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সামশুল হক চৌধুরী হগামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর