Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আয়োজনশূন্য বর্ষবরণ, পর্যটকের ঢল না থাকায় হতাশা

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৭

আয়োজন না থাকায় কক্সবাজারে এবার বর্ষবরণে পর্যটকের উপস্থিতি কম। যারা হাজির হয়েছেন, সমুদ্রের সৌন্দর্যেই সময় কাটাচ্ছেন। বছরের শেষ সূর্যাস্তের সময় ধারণ করা। ছবি: সারাবাংলা

কক্সবাজার: ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ তথা খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণে লাখো পর্যটকের ঢল নামে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। কিন্তু সেই চিত্র এবার বদলে গেছে। সামনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে রয়েছে এক ধলনের রাজনৈতিক অস্থিরতা। অন্যদিকে নতুন বছর বরণে বিশেষ কোনো আয়োজনও নেই। সব মিলিয়ে ‘ভরা মৌসুমে’ও কক্সবাজারে সেই আশানুরূপ পর্যটক। এ নিয়ে হতাশ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

এদিকে এর মধ্যেও দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতের নগরে যারা এসেছেন নতুন বছর বরণ করে নিতে, তাদের নিরাপত্তা জোরদারে সর্বোচ্চ সচেষ্ট পুলিশ ও প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে পুরনো বছর ২০২৩-কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর ২০২৪ সালকে স্বাগত জানানোর দৃশ্য দেখতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য বছরের মতো লাখো পর্যটকের ভিড় নেই। পর্যটনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য বছরগুলোতে এই দিনে লাখো পর্যটকের সমাগমে মুখরিত থাকত বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত। রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি এ বছর সমুদ্র সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ কিংবা হোটেল-মোটেলে বিশেষ কোনো আয়োজন থাকাকেই তারা আশানুরূপ পর্যটক না থাকার প্রধান কারণ মনে করছেন তারা।

পর্যটনসংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে টানা দেড় মাস পর্যটকশূন্য ছিল কক্সবাজার। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ খালি পড়েছিল। তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিনের ছুটিতে ব্যবসা কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তবে এরপর আবার পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে সমুদ্র সৈকত।

বিজ্ঞাপন

পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে ফের পর্যটকের সমাগম, হবে। কিন্তু এ বছর ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ রোববারে হওয়ায় সরকারি ছুটি না থাকার পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রশাসনের কড়া নির্দেশ আউটডোর-ইনডোরে কোনো বিশেষ সাংস্কৃতিক আয়োজন রাখা যায়নি। অন্যদিকে সন্ধ্যা ৬টার পর সৈকতের উন্মুক্ত স্থানসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ আয়োজনও বন্ধ রাখতে প্রশাসনের নির্দেশনা রয়েছে। এতে পর্যটক সমাগমে ভাটার টান পড়েছে।

এত কিছুর মধ্যেও কিছু পর্যটক চলে এসেছেন নতুন বছরকে বরণ করতে। তারা বলছেন, আয়োজন না থাকলেও সমুদ্র সৈকতে নতুন বছরের সূর্যোদয় দেখতে এই নগরীতে ছুটে এসেছেন। নিরাপত্তা নিয়েও সন্তুষ্টি জানিয়েছেন তারা।

তেমনই এক পর্যটক রুবিনা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, প্রতি বছরই থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে আসি। এবারও এসেছি। কিন্তু সমুদ্র সৈকতে কোনো আয়োজন নেই জেনে কিছুটা হতাশ। তারপরও খুব একটা মন খারাপ নেই। বিশাল সমুদ্র সৈকতে সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালকে বিদায় জানিয়েছি। সমুদ্রের সামনে দাঁড়ালে আর মন খারাপ থাকে না।

বন্ধুদের সঙ্গে আসা সাইফুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ‘আয়োজন না থাকলেও সমুদ্র সৈকত নিজেই অনেক বড় আয়োজন। তাই সাগরে গোসল করে ২০২৩ সালের সব কষ্ট, গ্লানি, দুঃখ মুছে নতুন বছর ২০২৪ সালকে বরণ করতে এসেছি।’ রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও সমুদ্র সৈকত এলাকায় নিরাপত্তা দেখে সন্তুষ্ট তিনি।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম না ঘটায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশ পর্যটনসংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ ও কটেজ মালিক সমিতির সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘রোববার পর্যন্ত আমাদের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের কক্ষের বুকিং হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ৪০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটার কথা নয়। অথচ লক্ষাধিক পর্যটক আমরা প্রত্যাশা করেছি। হোটেল ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা সারাবাংলাকে বলেন, প্রশাসন চাইলে নিরাপত্তা জোরদার রেখেও ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপনের সুযোগ উন্মুক্ত রাখতে পারত। এতে শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হতো। পর্যটনসংশ্লিষ্টরা সারা বছর আশায় বুক বেঁধেছিল এই দিনে বড় ব্যবসার জন্য। কিন্তু সবাই হাতাশ।

এদিকে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের এবারের নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠোর। তিন স্তরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুরো সমুদ্র সৈকত এলাকা সিসি টিভি ও ড্রোন ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সমুদ্র সৈকত এলাকায় দিন ও সারারাত টহল জোরদার থাকবে। পর্যটকদের বিন্দুমাত্র হয়রানি করলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

কোনো আয়োজনের অনুমতি না থাকা প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সামনে থাকায় আউটডোর কোনো প্রোগ্রাম করতে না করা হয়েছে। উন্মুক্ত স্থানে গান-বাজনা ও আতশবাজি ফোটাতে নিষেধ করা হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে সব প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হবে। যে যার হোটেলে ইনডোর প্রোগ্রাম করতে পারবে।’

সারাবাংলা/টিআর

২০২৪ সাল কক্সবাজার খ্রিষ্টীয় নববর্ষ নতুন বছর পর্যটন নগরী বর্ষবরণ সমুদ্র সৈকত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর