বাগমারায় হামলায় আহত কিশোরী, অভিযুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর বোন
১ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৫
রাজশাহী: রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের বোন বেবী আক্তারের হামলায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলশিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষার্থীর বাবা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে না থেকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন করায় এ হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বেবী আক্তার মেয়েটির ওপর হামলা করেন বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা খোরশেদ আলম। তিনি হামিরকুৎসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। হামলায় আহত তার মেয়ে হাসি খাতুন হামিরকুৎসা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে অভিযুক্ত বেবী আক্তার রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের বোন। এনামুল এই আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। তবে এবারে এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে আবুল কালাম আজাদকে। এনামুল কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন।
খোরশেদ আলম বলেন, আমি বাড়িতে না থাকায় সময় আমার অবুঝ শিশুকে পিটিয়েছে বেবী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। হামলার পর আমার মেয়েকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। অবস্থা খুব খারাপ বলে জানান তিনি।
মেয়েকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন খোরশেদ। মেয়েকে নিয়ে ফেসবুকে লাইভও করেছেন তিনি। বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুলের সঙ্গেই রাজনীতি করেছেন। তবে এনামুল এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু এনামুলই তাদের শপথ করিয়েছিলেন, কখনো যেন নৌকার পক্ষ থেকে না সরেন। এবারও তিনি ভোটে নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই রয়েছেন। কিন্তু এনামুল সেটি মেনে নিতে পারছেন না বলেই কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে এরকম হামলা চালাচ্ছেন।
খোরশেদ বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের বোন বেবি আক্তার ও তার সহযোগী শাফিনুর নাহারসহ কয়েকজন আমার বাড়ির পাশে এসে আমার অবুঝ শিশুটিকে মেরে শেষ করে ফেলেছে। এমপি এনামুলের ১৫ বছর রাজনীতি করেছি। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বাইরে কাউকে না যেতে। তিনি আমাদের নৌকার বিপক্ষে না যাওয়ার জন্য শপথও করিয়েছেন। সঙ্গত কারণে আমরা নৌকার বাইরে যেতে পারিনি। তিনি নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন। এই ক্ষোভে তিনি মহিলা সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমার মেয়ের ওপর হামলা চালিয়েছে।
লাইভে খোরশেদ আরও বলেন, হায় রে এমপি এনামুল। আপনার জন্য কী করিনি? আপনি হাত জাগিয়ে শপথ করিয়েছেন যে দলের থেকে যে নির্দেশ আসবে সেই নির্দেশ অনুযায়ী আমাদেরকে কাজ করতে হবে। নৌকাকে বিজয়ী করে ঘরে ফিরতে হবে। এই শপথ করিয়ে নিয়ে আপনি আজ কেন বিদ্রোহী? আজ কেন আমরা মার খাচ্ছি? যেই শাফিনুর আপনার বিরুদ্ধে ঝাঁটা মিছিল করল, আপনি তাকে বুকে টেনে নিলেন। আর আপনার যারা পক্ষে ছিলাম, তাদের ওপর এবং তাদের সন্তানদের ওপর হামলা করছেন!
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ আসনে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আগে এমপি এনামুল ভেবেছিলেন, তিনি এবারও নৌকা প্রতীক পাবেন। এ জন্য ওই সময় দলীয় নেতাকর্মীদের শপথ পড়িয়েছিলেন যে নৌকার বাইরে আপনারা কেউ যাবেন না। নেতাকর্মীরা হাত তুলে শপথ করেছিলেন। এখন নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষেই আছেন। কিন্তু এনামুল নৌকা পাননি। এতে উনি ক্ষেপে গিয়ে নৌকার পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। বাগমারাকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন।’
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, হামলার পর ঘটনাটি শুনে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/টিআর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাজশাহী-৪ স্বতন্ত্র প্রার্থী হামলায় আহত