‘প্রতিপক্ষ আমার চেয়ে ভালো হলে তাকেই ভোটটা দিয়ে আসব’
২ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:২৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যও তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পূর্ণ মেয়াদ পার করে আবারও ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘুরছেন গ্রামে গ্রামে। ক্রিকেটার অধ্যায়ে মাশরাফীর নিত্যসঙ্গী ছিল হাঁটুর ব্যথা। সেই ব্যথা আবারও বেড়ে যাওয়ায় তিনি এখনো শারীরিকভাবে অসুস্থ। তবে সেই অসুস্থতা সঙ্গী করেই আসনজুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে।
নির্বাচনি প্রচারের ব্যস্ততায় সাক্ষাৎকারের জন্য মাশরাফীকে পাওয়া যাচ্ছিল না কিছুতেই। শেষ পর্যন্ত রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সাতসকালে নড়াইল সদরে তার বাড়িতে গিয়ে পাওয়া গেল তাকে। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মাশরাফী। সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেন সেই প্রস্তুতির ফাঁকে ফাঁকেই। বললেন, নিজের জন্য নয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য ভোট চাইছেন তিনি। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতেই ফের নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন ভোটারদের কাছে। প্রতিপক্ষ নিয়েও খুব বেশি চিন্তিত নন তিনি। উল্টো এ-ও বললেন, প্রতিপক্ষ তার চেয়ে ভালো প্রার্থী হলে নিজের ভোটটাও তাকেই দিয়ে আসবেন।
সারাবাংলাকে দেওয়া মাশরাফীর এই সাক্ষাৎকারে নির্বাচন নিয়ে নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা উঠে এসেছে। সংসদ সদস্য হিসেবে এক মেয়াদ পার করে নিজের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়েও কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাজনীন ফারজানা
সারাবাংলা: খেলার মাঠ আর রাজনীতির মাঠে পার্থক্য কী?
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা: খেলার মাঠের সঙ্গে রাজনীতি মিলায়ে লাভ নেই। খেলা আমার রক্তের মধ্যে।
সারাবাংলা: খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার আর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের মধ্যে কোনটা বেশি ভালো লাগছে? কেন?
মাশরাফী: আমি যখন যেটা করি সেটাই এনজয় করি।
সারাবাংলা: আগামী পাঁচ বছরে আপনার মূল লক্ষ্য কী থাকবে?
মাশরাফী: দেখুন, আমাদের লক্ষ্য মানুষ যেটা চায় সেটা সবার আগে পূরণ করা। বেশ কিছু মেগা প্রকল্প আছে, যেগুলো শেষ করা প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে সেগুলোর কাজ আগে করতে হবে। এরপরও কিছু নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে। যেমন— বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। এরকম আরও কিছু প্রকল্প রয়েছে।
সারাবাংলা: দুয়েকটি প্রকল্প যদি সুনির্দিষ্টভাবে বলেন…
মাশরাফী: নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্ট কিছুর নাম মাথায় আসছে না। এখন শুধু চাই, মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিক। পরিকল্পনা তো আছেই। ভোটের পর সেগুলো নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজ করা যাবে।
সারাবাংলা: সংসদ সদস্য হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের সবাইকে পাশে পেয়েছেন?
মাশরাফী: সংসদ সদস্য হওয়ার পথে ও পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের যে যেখান থেকে পেরেছে, সাহায্য করেছে। কারও বিরুদ্ধ আমার কোনো ক্ষোভ বা আক্ষেপ নেই।
সারাবাংলা: ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে এসে সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। একই সময়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি করে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, এর ফলে তাদের ওপর অবিচার হয়েছে বলে মনে করেন কি? স্থানীয় আওয়ামী লীগের সবাই এখনো আপনার পক্ষে আছেন কি না?
মাশরাফী: দেখুন প্রার্থী নির্ধারণ করা দলীয় সিদ্ধান্ত। সেটি আমার সিদ্ধান্ত না। প্রধানমন্ত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) যাকেই দল থেকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা সবাই তার হয়েই কাজ করব। এটি নিয়ে আর কিছু বলার সুযোগ নেই।
সারাবাংলা: নির্বাচনি প্রচারে কোন বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন?
মাশরাফী: নির্দিষ্ট করে কোনো কিছুকে প্রাধান্য দিচ্ছি না। সব বিষয় তুলে ধরছি। আর নির্বাচনে ভোট চাইছি প্রধানমন্ত্রীর জন্য। এখন যেসব প্রকল্প দেখছেন বা যেসব প্রকল্পের সুফল আমরা ভোগ করছি, সবই প্রধানমন্ত্রীর জন্য হয়েছে। আমি তার জন্যই ভোট চাইছি। আমরা একটি মাধ্যম। ভোটটা মানুষ নৌকায় দেয়। যারা আওয়ামী লীগ ঘরানার মানুষ, তারা শুধু প্রধানমন্ত্রীকে দেখে নৌকায় ভোট দেয়। এখানে আমাদের কোনো ক্রেডিট নিয়ে লাভ নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর গাইডলাইন অনুযায়ী চলছি।
সারাবাংলা: স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফিরে আসায় চাপ অনুভব করছেন কি না?
মাশরাফী: চাপ? কী চাপ?
সারাবাংলা: নৌকার ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার চাপ?
মাশরাফী: ভোট ভাগ হয়ে গেলে যাবে, তাতে কিছু আসে যায় না। আমার জিততেই হবে— এমন কোনো কথা তো কোথাও নেই।
সারাবাংলা: তাহলে আপনি নির্বাচন কেন করছেন?
মাশরাফী: আমি নির্বাচন করছি মানুষের জন্য করছি। মানুষ যদি মনে করে আমাকে দরকার, তাহলে তারা গ্রহণ করবে। আর মানুষ যদি মনে করে যে আমাকে দরকার নেই বা তারা যদি ভাবে যে আমার চেয়েও ভালো কোনো প্রার্থী আছে, তাহলে আমিও তাকে আমার ভোটটা দিয়ে আসব।
সারাবাংলা: নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ কাকে মানছেন?
মাশরাফী: সবাইকেই। যারা যারা ভোটে দাঁড়িয়েছে, তারা সবাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আমার এখানে আমি একাই তো প্রার্থী না। আমাদের পূর্ববর্তী এমপিসহ অনেকেই আছেন আমার বিপরীতে। তাই এই নির্বাচনকে আমি গুরুত্ব দিয়েই নিচ্ছি ও সেইজন্যই দিনরাত প্রচার চালাচ্ছি। আমার চেহারা দেখে সবাই সবকিছু করে দেবে, তা তো না।
সারাবাংলা: দিনরাত প্রচার চালাচ্ছেন। হাঁটুতে এখনো ব্যথা আছে। শরীর খারাপ লাগা বা ক্লান্তি আসছে না?
মাশরাফী: ক্লান্তি আসবেই। কিন্তু কটা দিন তো পরিশ্রম করতেই হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো চাট্টিখানি বিষয় না। আমাদের এই আসনটা অনেক বড়। অনেকেই বসে থাকে। এর মধ্যেই চেষ্টা করি সবার সঙ্গে কথা বলতে।
সারাবাংলা: সংসদ সদস্য হিসেবে এক মেয়াদ শেষে সাফল্য-ব্যার্থতার মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?
মাশরাফী: আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। মানুষ দিনের শেষে সাফল্য আর ব্যর্থতা দেখে। মানুষের নানা দাবি থাকে। কিন্তু আমি বুঝি কোন দাবিটি আসলে পূরণ করা সম্ভব। বড় প্রকল্প ছাড়া একটি জেলা আগাবে না। আমাদের আরও বড় বড় প্রকল্প দরকার। আমাদের নড়াইল ভৌগলিকভাবে এমন একটি জায়গায় অবস্থিত যে যাতায়াতব্যবস্থা ভালো না থাকায় বেশ পিছিয়ে ছিল। বর্তমানে পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতু হওয়ার কারণে আমরা ভৌগলিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চলে আসছি। আশা করি এখন আরও বেশি উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে।
সারাবাংলা: নড়াইলে মাদকের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি?
মাশরাফী: মাদকের প্রকোপ তো সারাদেশেই বেড়েছে। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করা না গেলে মাদক থেকে দূরে সরানো সম্ভব না। তাছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের বিষয়। আমরা তো আইন প্রয়োগ করতে পারব না। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে মাদক না নিতে উদ্বুদ্ধ করতে।
সারাবাংলা: আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে কোন কাজটি সবার আগে শেষ করতে চান?
মাশরাফী: নির্বাচনের সময় শুধু মাথায় আছে, মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিক। আর কিছু মাথায় আসতেছে না।
সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাশরাফী: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
জাতীয়-নির্বাচন নড়াইল নড়াইল-১ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা সংসদ নির্বাচন