Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চুয়াডাঙ্গার ২ আসনেই ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৫১

চুয়াডাঙ্গা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারের সময় প্রায় শেষ। এর মধ্যেই দুই আসনের ১৪ প্রার্থী নিজেদের সাধ্যমতো প্রচারকাজ চালিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গার অলিগলি পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছেন। প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ছুটে বেড়িয়েছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। করেছেন গণসংযোগ, সমাবেশ, মিছিল, জনসভা। সঙ্গে ট্রাক, রিকশা, ইজিবাইকে করে মাইকে মাইকে ঘুরেছে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান। ভোটের প্রচার শেষে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভোটার ও রাজনীতি সচেতন মহলের অভিমত, দুটি আসনেই লড়াই হবে ত্রিমুখী। দুটি আসনেই নৌকাকে লড়তে হবে নিজ দলেরই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবারও এই আসনে প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, এম এ রাজ্জাক খান ও এম শহিদুর রহমান।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন আটজন। এই আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী আজগার টগর আগের টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মো. রবিউল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) দেওয়ান মো. ইয়াছিন উল্লাহ, জাকের পার্টির মো. আব্দুল লতিফ খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লন্টু, মো. নূর হাকিম ও মো. আবু হাশেম রেজা।

দুই আসনের ১৩ প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন ও অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম গত বুধবার (৩ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রের অসহযোগিতা ও উদাসীনতার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

স্থানীয়রা বলছেন, বাকি প্রার্থীদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মূল লড়াই হবে নৌকা প্রতীকের সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের সঙ্গে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও ফ্রিজ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক খানের। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের লড়াইয়ে থাকছেন নৌকা প্রতীকের আলী আজগার টগর, ঢেঁকি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লন্টু ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হাশেম রেজা।

চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য সোলায়মান জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। বেশ কিছুদিন হলো বার্ধক্যসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। তারপরও ভোটে জিততে মরিয়া হয়েই প্রচার চালিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। অন্যদিকে মাইওয়ান মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক খান ফ্রিজ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন। তারা দুজনেই চষে বেড়িয়েছেন আসনের প্রতিটি এলাকা। তারা দুজনেই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন।

এ আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী এম শহিদুর রহমান ট্রাক প্রতীক বরাদ্দ পেলেও তার পক্ষে খুব একটা প্রচার চোখে পড়েনি। একই অবস্থা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইদ্রিস চৌধুরীরও। তিনি আম প্রতীক নিয়ে লড়লেও নির্বাচনি এলাকায় তার গণসংযোগ চোখে পড়েনি।

ভোটাররা বলছেন, এই আসনে নৌকার প্রার্থী সোলায়মান জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার মধ্যে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে আব্দুর রাজ্জাক খান প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহায়তায় ভোটারদের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছে গেছেন। এ কারণে এই আসনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দেখছেন অনেকেই।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর চতুর্থবারের মতো জয় পেতে দিনরাত প্রচার আর গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও সেগুলোকে বিরোধী পক্ষের অপপ্রচার বলেই উড়িয়ে দেন টগর। ভোটে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী তিনি।

এ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতির সভাপতি মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লন্টু ঢেঁকি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন। তার বড় ভাই প্রয়াত মীর্জা সুলতান রাজা এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তার একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে। তারাই মূলত ঢেঁকি প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। লন্টুর প্রধান নির্বাচনি সমন্বয়ক হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মঞ্জু। এ ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ তার পক্ষে থাকায় তাকে শক্ত প্রার্থী বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ, পুনর্বাসন ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য এবং জাতীয় দৈনিক আমার সংবাদ ও ডেইলি পোস্ট পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আবু হাশেম রেজা ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। প্রচারের মাঠে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ট্রাক নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন আসনের আনাচে-কানাচে। ফলে তাকেও গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে সবাই।

এ আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী ইদ্রিস চৌধুরী আম প্রতীক নিয়ে অবস্থান করলেও প্রচারে সক্রিয় দেখা যায়নি তাকে। কিছু কিছু জায়গায় তার পোস্টার ও ব্যানার থাকলেও গণসংযোগ বা সভা-সমাবেশে তাকে দেখা যায়নি। জাসদের প্রার্থী দেওয়ান মোহাম্মদ ইয়াছিন উল্লাহকেও নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। তবে প্রচারে বেশ সক্রিয় ছিলেন জাকের পার্টির প্রার্থী আব্দুল লতিফ খান, যদিও ভোটাররা তার খুব একটা সম্ভাবনা দেখছেন না।

এ আসনের আরও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী দৈনিক সকালের সময়ের সম্পাদক ও প্রকাশক নুর হাকিম ঈগল প্রতীক ও নজরুল মল্লিক ফ্রিজ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তবে তাদেরও নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে সক্রিয় দেখা যায়নি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় দুই আসনের মোট ৩৫৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২০৫টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলায় সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ২৯৫ জন সেনা সদস্যসহ পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের মোট এক হাজার ১৪৬ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

সারাবাংলা/টিআর

আবু হাশেম রেজা আব্দুর রাজ্জাক খান আলী আজগার টগর চুয়াডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা-১ চুয়াডাঙ্গা-২ জাতীয়-নির্বাচন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মির্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লন্টু সংসদ নির্বাচন সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর