Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রচার শেষ, এবার ব্যালটের অপেক্ষা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০০

ব্যালট বাক্সসহ বিভিন্ন নির্বাচনি সরঞ্জাম এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে জেলায় জেলায়। ভোটের দিন সকালে ব্যালট যাবে কেন্দ্রে। রোববার সকাল ৮টায় সারাদেশে একযোগে ২৯৯ আসনে শুরু হবে ভোট। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ব্যানার-পোস্টারের সঙ্গে মিছিল, গণসংযোগ, সমাবেশ, সভা, মতবিনিময়— সব ধরনের প্রচারের সময় শেষ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন কেবল গোপন ব্যালটে ভোটারদের রায় প্রয়োগের অপেক্ষা। ঠিক ৪৮ ঘণ্টা পরই শুরু হবে জাতীয় সংসদের জন্য জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের সেই মুহূর্ত। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে দেশের ২৯৯টি সংসদীয় আসনে।

আজ শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় ছিল নির্বাচনের প্রার্থীদের নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে ভোটারদের ভোট প্রার্থনার। এরপর এখন আর ভোটগ্রহণের আগ র্যন্ত প্রার্থীদের কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল বা প্রচারের অনুমতি দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিজ্ঞাপন

দেশের জাতীয় সংসদে আসনসংখ্যা ৩০০। গত ১৫ নভেম্বর সব আসনে নির্বাচনের জন্যই তফসিল ঘোষণা করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে এর মধ্যে ১ সারাদেশের ৩০০ আসনের মধ্যে নওগাঁ-২ আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু হলে বিধি অনুযায়ী আসনটির ভোট স্থগিত করেছে ইসি। বাকি ২৯৯টি আসনে ভোটাররা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।

নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার সারাদেশে মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। তারা মাঠে থাকবেন ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ছবি: সারাবাংলা

এর আগে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল। এরপর যাচাই-বাছাই হয়। সেখানে বাতিল প্রার্থীরা ইসিতে আবেদনের সুযোগ পান। সেখানেও তারা নিজেদের পক্ষে ফল পাননি, তারা দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের। এর মধ্যে গত ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষে দিনের পর ১৮ ডিসেম্বর বৈধ সব প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করে ইসি। শুরু হয় প্রার্থীদের প্রচার। ১৮ দিন তারা নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ১৮ দিনের নির্বাচনি প্রচারে বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ-মারামারিতে তিনজন নিহত হওয়ার তথ্য মিলেছে। এর বাইরে এই সময়ে নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে শতাধিক।

নির্বাচনি প্রচারের মধ্যে প্রাণহানির প্রথম ঘটনা ঘটে মাদারীপুরের কালকিনিতে। গত ২৩ ডিসেম্বরের ওই ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া বুধবার বিকেলে পিরোজপুর-৩ আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে কুপিয়ে আহত করা হয়। বুধবার রাতেই মুন্সীগঞ্জে নৌকার এক নির্বাচনি ক্যাম্পে গুলি করলে নৌকার এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হন। বুধবারের দুটি ঘটনাতেই গুরুতর আহত দুজন বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান।

যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আগামীকাল শনিবার (৬ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ট্যাক্সিক্যাব, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এ সময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন, দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তঃজেলা রুট, মহাসড়ক এবং প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।

নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীরা ১৮ দিন সুযোগ পেয়েছেন নির্বাচনি প্রচার দিয়ে নিজেকে ভোটারদের কাছে তুলে ধরার জন্য। ছবি: সারাবাংলা

সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন

৭ জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন ঘিরে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ৩ জানুয়ারি দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মোতায়েন থাকবেন।

নির্বাচনে মোট প্রার্থী

এবারের সংসদ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রার্থী এক হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী রয়েছেন ৯০ জন, যা মোট প্রার্থীর ৫ শতাংশেরও কম। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে লড়াই করবেন।

ভোটে যাওয়া দল ২৮টি

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলগুলো হলো— ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পাটি (এনপিপি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ও গণতন্ত্রী পার্টি।

নির্বাচনি প্রতীকগুলো নিয়ে জমজমাট ছিল অনেক এলাকার প্রচার কার্যক্রম। ছবি: সারাবাংলা

কোন দলের কত প্রার্থী

এবারের সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে তিন জন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর দলটির মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। প্রার্থীর সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। তাদের প্রার্থী ২৬৫ জন।

এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ৫৬ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এক হাজার ৫৩৪ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ৪৩৬ জন। মোট প্রার্থীর মধ্যে ৭৬ জন উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

ভোটকেন্দ্র ও মোট ভোটার

এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১৪৯টি। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার ৩০০ ভোটকেন্দ্রকে ইসির ভাষায় ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ তথা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সংখ্যা মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

ভোট ঘিরে দেশের প্রায় সব এলাকাই যেন পরিণত হয় পোস্টারের নগরীতে। ছবি: সারাবাংলা

এবার সারাদেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। মোট ভোটারের মধ্যে নারী পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন, পুরুষ ভোটার ছয় কোটি সাত লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৫২ জন। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ভোটার সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ১৯৩ জন।

১৭ লাখ জনবল ইসির

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনে ভোট সংগ্রহ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোট ১৭ লাখ জনবল ভোটের মাঠে নিয়োজিত থাকছে। এর মধ্যে ভোট সংগ্রহে সরাসরি নিয়োজিত থাকবেন আট লাখ, স্ট্যান্ডবাই থাকবেন আরও এক লাখ সদস্য। এ ছাড়া সশস্ত্রবাহিনী (সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার মিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন আট লাখ সদস্য। ভোটের মাঠে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নিতে তিন হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকও দায়িত্বরত থাকবেন।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

ইসি জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি প্রচার ব্যালট ব্যালট বাক্স ভোটগ্রহণ সংসদ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর