ফিরে দেখা: দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৯
৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৩
দুয়ারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে এই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ। প্রার্থী মনোনয়ন, প্রার্থী বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে বৈধ প্রার্থীরা সবাই নির্বাচনি প্রচারও শেষ করেছেন। এখন কেবল ভোটের অপেক্ষা। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিয়েছে। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে সেই ভোটগ্রহণ। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে আরও ১১টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোর সব তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠনের আড়াই বছরের মাথায়ই জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত ঘটনাটি ঘটে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সপরিবারে। স্বাধীনতার পর সংসদীয় রাজনীতির মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের যে অভিযাত্রা, সেই যাত্রায় ছেদ ঘটানো হয়। দেশে বুকে চেপে বসে সামরিক শাসনের যাঁতাকল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে প্রথমে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয় খন্দকার মোশতাক আহমদকে। পরে একাধিক সেনা অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় থিতু হন জিয়াউর রহমান। পরে নিজের সামরিক শাসনামলকে বৈধতা দিতে রাজনৈতিক দল গঠন, জাতীয় নির্বাচন আয়োজনসহ নানা কর্মকাণ্ড শুরু করেন তিনি। ক্ষমতায় থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিজের অধীনে নিয়ে এসে জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। পরের বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন তিনি।
এর মধ্যে ১৯৭৭ সালের ৮ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বিচারপতি এ কে এম নূরুল ইসলাম। তার অধীনেই দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালের ২৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে ভোটগ্রহণ হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ছত্রছায়ায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ২৯টি রাজনৈতিক দল ও উপদল। ৩০০ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে দুই হাজার ৩৫২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। বাছাই ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী দাঁড়ায় দুই হাজার ১২৫ জনে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ৪২২ জন। এই ভোটে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হননি।
তিন কোটি ৮৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৪ জন ভোটার ছিলেন এই নির্বাচনে। ভোট পড়ার হার ছিল ৪৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ২১ হাজার ৯০৫টি। ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ছিলেন দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৫৫ জন। নির্বাচনে মোট খরচ হয় পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫৫ টাকা।
এই নির্বাচনেও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করবে বলে ধারণা ছিল সবার। সে ধারণা সত্যি প্রমাণিত হয়। ২০৭টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯টি আসনে জয় পান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (মালেক) প্রার্থীরা। এ ছাড়া মুসলিম ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি, জাসদ আটটি আসনে জয় পায়। দুটি করে আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ (মিজান), বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ। একটি করে আসনে জয় পায় ন্যাপ (মোজাফফর), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় একতা পার্টি। ১৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এই নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল। এই সংসদে সংসদ নেতা ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান। বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান খান। মির্জা গোলাম হাফিজ স্পিকার ও ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ চৌধুরী এই সংসদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তার শাসনামলকে বৈধতা দিতেই রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। সব ধরনের কলাকৌশল অবলম্বন করে সেই দলকে তিনি জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ীও করেন। শুধু তাই নয়, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের রাজনীতিতে যোগদানের সূচনাও জয় জিয়াউর রহমানের বিএনপির মাধ্যমেই। জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভা ও প্রশাসনে এরকম ব্যক্তির উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।
তথ্যসূত্র:
১. নির্বাচন কমিশন
২. সংসদ সচিবালয়
৩. বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ও ফলাফল, নেসার আমিন, ঐতিহ্য, ২০২৩
সারাবাংলা/টিআর
১৯৭৯ সালের নির্বাচন জাতীয়-নির্বাচন জিয়াউর রহমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি সংসদ নির্বাচন