‘আমার ভোট আমি দেব, জেনে বুঝেই গাজীর নৌকায় দেব’
৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৫১
রূপগঞ্জ: বয়স তো আর কম হলো না। এই ৭৯ বছর বয়সে রূপগঞ্জে অনেক কিছুই দেখেছি। অনেক বড় বড় নেতা এলো আর গেল। অনেকেই এমপি হলো, মন্ত্রী হলো কিন্তু রূপগঞ্জের উন্নয়নটা কে করল তা কী আমার এই বয়সেও অন্য কাউকে বোঝাতে হবে। একটা সময় বর্ষায় রাস্তায় নামলে কাদা ঠেলতেই জান যেত। ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পাঠাতে হয়েছে নরসিংদী বোনের বাসায়। এলাকায় কোনো কাজ ছিল না একসময়। আর এখন ছেলে ঘরের পাশেই একটা ফ্যাক্টরিতে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে। চাইলেই দেশের যে কোনো জায়গায় টাকা পাঠাতে পারি ব্যাংকের মাধ্যমে। নাতিরা যে স্কুলে পড়াশোনা করছে সেখানে আছে কম্পিউটার ল্যাব, খেলার মাঠ। করোনার (কোভিড-১৯) সময় বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষা করালাম লাইন ছাড়াই। এরপর চিকিৎসাও নিলাম। আর এগুলো সবই তো একটা মানুষের চেষ্টাতেই হয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) ছাড়া এতো উন্নয়ন তো অন্য কেউ করেনি।
‘ভোট এলেই সাংবাদিকরা আসেন আর জিজ্ঞেস করেন অবস্থা কেমন দেখছেন? কাকে ভোট দেবেন? আমি বলি আমার ভোট আমি দেব, জেনে বুঝেই নৌকায় দেব।’
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের প্রবীণ ভোটার রহমত উল্লাহ সারাবাংলার সঙ্গে আলাপের সময় প্রতিবেদককে এসব কথা বলছিলেন।
উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের এই প্রবীণ ভোটার সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক নেতা বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের সামনেই এমপি হয়েছেন। অথচ আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয় নাই। এই ভোলাবের কথাই যদি ধরেন এখানে বছর খানেক আগেও তেমন কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। অথচ এখন দেখেন এখানে আপনি গাড়ি দিয়ে এসেছেন। কিন্তু একটা সময় বর্ষাকালে রাস্তায় বের হলে কাদা ঠেলতে ঠেলতে পা ব্যাথা হয়ে যেত।’
তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে। তার আগে একটা ছেলে হয়েছিল কিন্তু বিনা চিকিৎসাতেই মারা যায়। কিছুদিন আগে আমার নাতিটা অসুস্থ হওয়ার পর তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানেই চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠে। তখন ছেলেকে বলছিলাম, এমন চিকিৎসাসেবা যদি পেতাম আজকে থেকে ২৫টা বছর আগে তাহলে তোর ভাইকে বাঁচাতে পারতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়ে দুইজনকেই পড়াশোনা করতে পাঠাতে হয়েছে নরসিংদী। নদী পাড় করে সেখান থেকে মাসে একবার ছেলে, মেয়ে দুইটাই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতো। আর এখন আমার নাতি এখানের স্কুলেই পড়াশোনা করে। নাতনিও স্কুলে যায় এখন। স্কুলে খেলার মাঠ আছে আর সেখানেই কম্পিউটারে ক্লাস করে তারা।’
এগুলো একটা সময় আমাদের কাছে অকল্পনীয় ছিল। এমন রাস্তাঘাট হবে তাও কখনও ভাবি নাই। অথচ একটা সময় আমি ভেবেছিলাম এই রূপগঞ্জ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাই, যেন অন্তত বাচ্চাদের ভবিষ্যত সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি- উল্লেখ করেন রহমত উল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘কৃষিকাজ করেই জীবন কাটিয়েছি আমি। অন্য এলাকায় যখন পাম্পের মাধ্যমে পানি সেচ দেওয়া হতো তখন আমরা সেই পাম্প যোগাড় করার জন্য রূপগঞ্জ যেতে হতো। আর সেখানে যাওয়া মানেই একদিন নাই হয়ে যাওয়া। আর এখন রূপগঞ্জ হয়ে ঢাকায় গেলেও ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লাগে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ কী জিনিস আমরা সেটা চোখে দেখছি বছর খানেক আগে। আমার নাতির কাছে সেইগুলো বললে সে বিশ্বাসই করে না। এখন আমাদের এলাকায় লোকজন ঘর ভাড়া দিয়েও ইনকাম করে। অথচ একটা সময় এখানে কেউ ঘর তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারত না।’
রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আগে টাকা পয়সা লেনদেন করতে হলে মোটামুটি আতঙ্কের সঙ্গে দিন কাটাতে হতো। একখান থেকে আরেক জায়গায় টাকা-পয়সা নিয়ে যেতে হলে দুর্ঘটনা ঘটতো প্রায় সময়। অথচ এখন এলাকাতেই যমুনা ব্যাংকের এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন সেরে ফেলতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যে রূপগঞ্জ দেখছেন তার কানাকড়ি উন্নয়নও অন্য কোনো ব্যক্তি করে নাই। এগুলা সবই গাজীর আমলে তারই কারণে হয়েছে। যেখানে সরকারি সাহায্য বরাদ্দ হয় নাই সেখানে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে হলেও করেছে। অথচ একটা সময় এই এলাকা থেকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও হয়েছে কিন্তু।’
‘নির্বাচনে অন্য যে প্রার্থীরা আছে তারা আর যাই হোক গাজীর মতো উন্নয়ন করতে পারবে না। কারণ সেটা করার জন্য মানসিকতা লাগে। আর গাজীর সেটা আছে। আর তাই আমার ভোট আমি দেব, জেনে বুঝেই গাজীর নৌকায় দেব’, উল্লেখ করেন রহমত উল্লাহ।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ-১ নির্বাচনি আসনে এবার ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এর মাঝে গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
সারাবাংলা/এসবি/ইআ
গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) নারায়ণগঞ্জ-১ আসন নির্বাচন রূপগঞ্জ