কেউ খোঁজ রাখে নাই, পাশে দাঁড়িয়েছে শুধু গোলাম দস্তগীর গাজী
৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১১
রূপগঞ্জ: ‘দেশের মানুষ কী জানে এখানে এক সময় সন্তান জন্ম নিলে অথবা কেউ মারা গেলে তাকে গোসল করানো হতো শীতলক্ষ্যার নোংরা পানিতে? আমাদের এলাকাকে কেউ বলে মাদকের সাম্রাজ্য আবার কেউ বলে অপকর্মের আখড়া। আপনাদের পত্র-পত্রিকায় আমাদের এলাকাকে ক্রাইম জোন হিসেবে লেখা হতো। কিন্তু এটা কেন হয়েছে তা কী কখনো জানানো হয়েছে দেশের মানুষকে?’
‘দেশের প্রায় এলাকা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেও আমাদের এখানে ছিল একসময় খাম্বা। ছিল না কোনো ভালো রাস্তা। বাচ্চাদের পড়াশোনা করানোর জন্য কোনো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। একটা সময় তো ভোটও দিতে পারতাম না। কোনো কর্মসংস্থান ছিল না কারো। এমন এলাকায় অপরাধী জন্মানো কী অস্বাভাবিক কিছু? সবাই খারাপ বলে ফেলে দিলেও পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল শুধু গোলাম দস্তগীর গাজী। তার অবদানে এখন আমরা ভালোভাবেই চলতে পারছি এখানে।’
নানা ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ার এলাকার বেক্সিফেব্রিক্সের কারখানার সামনে চায়ের দোকানে প্রতিবেদকের সঙ্গে নিজ এলাকার বিষয়ে জানাচ্ছিলেন সানাউল্লাহ মিরাজ নামে ৪৭ বছরের এক স্থানীয় বাসিন্দা।
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করার পাশাপাশি বিশ্বের উন্নত দেশে পিএইচডি ডিগ্রি করছে। এই এলাকার শিক্ষার হার রূপগঞ্জের অন্যান্য ইউনিয়নের তুলনায় বেশি। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি এখানকার মানুষ স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনো ভালো লেখা দেখি না।’
সানাউল্লাহ মিরাজ জানান, চনপাড়া একসময় অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য ছিল কথাটা সত্যি। কিন্তু কেনো তেমনটা হয়েছিল তা কেউ বলে না। এই এলাকার মানুষ তো একসময় তাদের পরিচয় কী দেবে সেটাও জানতো না। কারও ঘরে নতুন সন্তান জন্ম নিলে তার পরিচয় কোন দেশের নাগরিক হিসেবে দেওয়া হবে সেটা জানানো যেতো না। নবজাতককে গোসলও করানো হতো শীতলক্ষ্যার নোংরা পানিতে। সেই সন্তান বড় হয়ে পারিপার্শ্বিকতা দেখে কী ভালো হওয়ার সুযোগ ছিল?
তিনি বলেন, ‘এখন সময় পাল্টেছে। এখন এখানের মানুষ গর্বের সঙ্গে বলে তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তারা এখন ভোট দিতে পারে। আর সবই গোলাম দস্তগীর গাজীর অবদান। একমাত্র তিনি এই এলাকার মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। অথচ তার আগে এই রূপগঞ্জে আরও বড় বড় এমপি, মন্ত্রী ছিল। কিন্তু তারা কেউই ভাবে নাই আমাদের বিষয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই এলাকার পরিস্থিতি এখন আর আগের মতো নাই। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি। এখানে এখন সড়ক ব্যবস্থা এতো উন্নত হয়েছে যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা চালু করা হয়েছে এখন। এই আমার কথাই ভাবেন। একটা সময় বেকার ঘুরতাম আর এখন নিজের এলাকাতেই চাকরি করে খাই।’
নবকিশলয় হাইস্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ নজিবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আকলিমা নামের একজন ছাত্রী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখন তৃতীয় বর্ষে পড়ছে সে এবং প্রতি বছর সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট অর্জন করছে পরীক্ষায়। এই স্কুলের ছাত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে। ডা. ফেরদৌস নামে এই প্রতিষ্ঠানের আরেকজন শিক্ষার্থী বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
এই রেফারেন্সগুলো দিলাম তাদের জন্য যারা খালি এই চনপাড়ায় অপরাধী ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পান না, উল্লেখ করেন নজিবর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় বর্তমানে একটি নকশি কাঁথা ট্রেনিং সেন্টার, হস্তশিল্প কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীরা স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। একটা সময় এমনটা ভাবাও যেতো না এই এলাকায়। এলাকার প্রতিটা ঘরে এখন বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের পাশাপাশি নিশ্চিত করা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তাও। আর এসবই হয়েছে গোলাম দস্তগীর গাজীর কারণে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালে। আর এরপরে এতিম হয়ে যায় চনপাড়ার বাসিন্দারা। তাদের কোনো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ছিল না। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরেই এই এলাকার নাগরিকদের ভাগ্য পরিবর্তন শুরু হয়। চারদিকে নতুন সড়ক হওয়ার কারণে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প, কল-কারখানা। ‘গাজী বাইপাসে’র কারণে খুব সহজেই এখন চনপাড়া আসা-যাওয়া করতে পারছে মানুষ। আর এসব উন্নয়ন হয়েছে গোলাম দস্তগীর গাজীর চেষ্টায়।
জানতে চাইলে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় পাক আর্মিরা আমাদের সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পেলে হত্যা করত। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যাদের ঘরবাড়ি পুড়ে যায়, যারা পিতৃহারা-মাতৃহারা, এতিম হয়ে যায়; সেই সব মানুষেরা অন্নের খোঁজে, আশ্রয়ের খোঁজে ঢাকায় এসেছিল। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সেই আশ্রয়হীনদের খুঁজে খুঁজে বের করে একটি তালিকার মাধ্যমে সে সময় যেসব ফ্যামিলি ছিল তাদের একত্রিত করে আমাদের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় পুর্নবাসিত করেছিলেন। এরপর আর বেশিদিন বঙ্গবন্ধুকে বেশিদিন বাঁচতে দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পঁচাত্তর সালে সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে, স্বৈরশাসক জিয়া ক্ষমতায় আসে। যখন তারা জানলো এরা তো মুক্তিযোদ্ধা ছিল, এদের বঙ্গবন্ধু পুর্নবাসিত করেছে। তাই তাদের কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় নাই। এমনকি ভোটের অধিকার পর্যন্ত তারা পায়নি।’
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সালে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি আমি। এখন সরকার থেকে তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি সুযোগ এখনও তারা পায়নি, সেখানে যে পরিবারগুলি আছে তাদের ভূমির মালিকানা নেই। আমি ইতোমধ্যেই ভূমির সমস্ত তথ্য চেয়েছি। তাদের ভূমির মালিকানা যাতে দেওয়া যায় সেই ব্যবস্থাটা ইনশাআল্লাহ আমরা নেব।’
সারাবাংলা/এসবি/এমও
গোলাম দস্তগীর গাজী চনপাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রূপগঞ্জ