Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনমত মডেলে নির্বাচনি যুদ্ধ, ভোট উৎসবের চ্যালেঞ্জেও আওয়ামী লীগ

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৫৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচার। সারাবাংলা ফাইল ছবি

ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। জনগণের অবাধ অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতিতে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও জনগণের অবাধ অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে বিএনপিসহ তাদের সমমনা শরিকরা ভোট বয়কট করেছেন।

৭ জানুয়ারির ভোটে বিএনপি-জামায়াতসহ নির্বাচন বিরোধীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পাশাপাশি নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সে দিকেও কঠোর অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন। ভোটের মাঠে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে মোতায়েন থাকছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ লাখ সদস্য। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ২৯৯টি আসনে ভোটের মাঠে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে আছেন ৪৩৬ জন। মোট ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তাই বিএনপিবিহীন নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয়ের ব্যাপারে নির্ভার নন নৌকার প্রার্থীরা। নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী, কোথাও অন্য দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ভোট লড়াইও জমে উঠেছে। বর্তমান সংসদের অনেক সংসদ সদস্যও এবার হারের ঝঁকিতে রয়েছে ভোট মিত্র জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আসন সমঝোতার আসনেও জমজমাট ভোট উত্তেজনা রয়েছে। শতাধিকের বেশি আসনে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীদের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- যশোরে ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ

বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের বর্জনসহ বেশকিছু কারণে এ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার টানাই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে কারচুপি ঠেকাতে এবার অধিকাংশ কেন্দ্রেই ভোটের দিন সকালে ব্যালট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ভোটের দিন সকালে ৯২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ৩৯ হাজার ৬১ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। আর ২ হাজার ৯৬৪ বা ৭ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার গেছে ভোটের আগের দিন শনিবার। এ ছাড়া গতকাল বেশকিছু দুর্গম কেন্দ্রে হেলিকপ্টারযোগে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। এ নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র ৪২ হাজার ২৫টি।

শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রতিশ্রুতিতে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনে অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডের দায়ভার এড়াতে ভোট কেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে ভোট-পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচনি এলাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রার ব্যাপারে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

ভোটের দিন সকাল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন মনিটরিং করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনি পরিস্থিতিতে নজর রাখার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন তারা। দেবেন প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা। একইসঙ্গে নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়েও কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটির নীতি-নির্ধারণী নেতারা জানান, অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- নির্বাচন কমিশনাররা যেখানে ভোট দেবেন

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আছেন ২৬৬ আসনে। বিএনপিবিহীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে উন্মুক্ত নির্বাচনের কৌশল গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। এ কারণে নিজ দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ২৬৯ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়াও বিএনপির কিছু নেতা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছে। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় শরিকদের ছয়টি আসন সমঝোতা করেছে আওয়ামী লীগ। মোট ৩২টি আসন থেকে নৌকার প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজ দলের নেতাকর্মীদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থিতার কৌশল উন্মুক্ত করে দেয়। একারণে শতাধিকের বেশি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীদের জমজমাট ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে নির্বাচনি ইশতেহার উপস্থান করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সারাদেশেই নির্বাচনি প্রচারে আধিপত্য ছিল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের। সারাবাংলা ফাইল ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মাণের অঙ্গীকারে রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অবৈধ আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপিসহ দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার আওতায় শাস্তি প্রদানসহ উপার্জকদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রতিশ্রুতি ইশতেহার প্রদান করেছে আওয়ামী লীগ। এবার বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সম্ভাবনার হাতছানিতে দুর্বার গতিতে দুরন্ত বাংলাদেশের সম্ভাবনায় বিশ্বাস রেখেছে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি।‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগান নিয়ে ইশতেহারে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে ২৯৮টি আসনে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটি থেকে ৩৪ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পরে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতার কারণে পটুয়াখালী থেকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এছাড়াও দলের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যও এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। সত্তরে নির্বাচন করার চারজন সদস্যও দ্বাদশের ভোটে নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের ৫৩ বছরের নির্বাচনি ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে যাচ্ছেন। এরা হলেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।

১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী শেখ হাসিনা এবার ৮বারের মতো সংসদ নির্বাচন করছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ট আসনে জয়লাভ করলে পঞ্চমবারের মতো তার নেতৃত্বে সরকার গঠন করবে। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব-১ এম এম ইমরুল কায়েস গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বড় রাজাপুরে উদয়ন ফ্রি ক্যাডেট একাডেমিতে ভোট দেবেন।

আরও পড়ুন- নির্বাচনি প্রচারের ১৮ দিনে ইসির ৭৬২ শোকজ, ৬৩ মামলা

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগে কার‌্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছে তারা যদি আওয়ামী লীগার হয় তার সঙ্গে দলের অন্য আওয়ামী লীগ নেতারা তার নির্বাচন করা দোষের কিছু নয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের হলে তার পক্ষে কি দলের নেতারা ইলেকশন করতে পারবে তার জবাবে সেদিন তিনি বলেন, ইটস ওপেন, সে অধিকাররটা তো দেওয়া হয়েছে। যে স্বতন্ত্র ইলেকশনটা করছে সে যদি আওয়ামী লীগার হয় তার সঙ্গে যদি অন্য আওয়ামী লীগাররা যদি তার ক্যাম্পেইন করে এখানে কোনো দোষের কিছু আছে বলে বলা হয়নি। নতুন একটা স্ট্রাটেজিতে আমরা বাংলাদেশের ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপের ডেমোক্রেসি, একটা নতুন এক্সপ্রেরিয়েন্স আমরা নিতে যাচ্ছি। বিশ্বকেও দেখাতে চাচ্ছি, জনমত নিয়ে এটিও ডেমোক্রেসি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মোড়লরা বহু ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় জাগরণের মধ্য দিয়ে ভোট উৎসব হবে। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে সকল অপশক্তির ষড়যন্ত্র ধুলিসাৎ করে দিয়ে বাঙালি জাতি গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে।’

এই রাষ্ট্র আমাদের, এই দেশ আমাদের, এই দেশকে রক্ষার জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই নির্বাচনে দেশবাসীকে ভোট উৎসবে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানক।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ নৌকা নৌকা প্রতীক প্রধানমন্ত্রী শেখ ভোট শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থী

বিজ্ঞাপন

নারী স্বাধীনতার আসল লক্ষ্য কী?
২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৬

আরো

সম্পর্কিত খবর