থানায় ঢুকে ওসি’র দিকে তেড়ে গেলেন এমপি মোস্তাফিজ
৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভোটগ্রহণ চলাকালে বাঁশখালী থানায় ঢুকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) কয়েকজন পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হয়েছেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। থানায় ঢুকে এমপির ‘চোটপাটের’ একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওসি’র অভিযোগ, এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী তাকে মারার জন্য তেড়ে গিয়েছেন।
রোববার (৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাঁশখালী থানায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জানা গেছে, বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদি আশকরিয়া পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বেলা ১২টার দিকে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল গফুরকে আটক করে পুলিশ। নৌকার প্রার্থীর সমর্থক গফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করেছিলেন। গফুরকে থানায় নেয়ার খবর পেয়ে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আরও কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে যান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ওসি তোফায়েল আহমেদকে ‘তুই তোকারি’ করে কথা বলা শুরু করেন। এসময় ওসি বলেন, ‘স্যার, সম্মানের সহিত বলছি তুই-তোকারি করবেন না।’ তখন একজন পুলিশ সদস্যকে মোবাইলে ভিডিও করতে দেখে ক্ষ্যাপে যান মোস্তাফিজুর। তাকে উদ্দেশ্য করে হুমকির স্বরে বলেন, ‘এই তুই এদিকে আয়।’
এর একপর্যায়ে মোস্তাফিজুর চেয়ার ছেড়ে উঠে ভিডিও ধারণকারী ওই পুলিশ সদস্যের দিকে তেড়ে যান। তখন ওসি চেয়ার ছেড়ে উঠে তাকে বসতে বলেন। মোস্তাফিজুরের সঙ্গে যাওয়া কয়েকজন তাকে ধরে আবারও চেয়ারে এনে বসান। কয়েক সেকেন্ড পর তিনি আবারও চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করেন এবং ওসির দিকে তেড়ে যাবার চেষ্টা করলে তাকে কয়েকজন মিলে ধরে ফেলেন। ওসি বারবার বলতে থাকেন, ‘স্যার, আপনি শান্ত হোন।’
তখন মোস্তাফিজুরের সঙ্গে যাওয়া একজন ব্যক্তি ওসিকে বলতে থাকেন, ‘উনি একজন সংসদ সদস্য, এখনও এমপি। উনি একজন প্রার্থী। আপনি উনি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও করেন, একথা বললেন কেন ?’ ওসি বলেন, ‘আমি ভিডিও করার কথা বলিনি।’ ওই ব্যক্তি বলতে থাকেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, আপনি বলেছেন।’
এরপর আরও কিছুক্ষণ ‘চোটপাট’ করে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে থানা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় ওই ভিডিওতে।
জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি কেন্দ্রে উনার সমর্থক কাউন্সিলর আব্দুল গফুর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিলেন। তিনি প্রতিপক্ষের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছেন ও ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পেয়ে আমরা সেখানে যাই এবং উনাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। তখন এমপি সাহেব গফুরকে ছাড়াতে থানায় এসে চাপ সৃষ্টি করেন। উনি আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। আমি বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন উনাদের সিদ্ধান্তমতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী একেএম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল বলেন, ‘একজন কাউন্সিলরকে থানায় আটকে রাখার খবর পেয়ে সেখানে যান সংসদ সদস্য। তিনি তাকে কেন আটকে রাখা হয়েছে জানতে চান ওসির কাছে। ওসি বিষয়টি কাউন্সিলরের কাছে জানতে বলেন। কোন অভিযোগ না থাকলে তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তা নিয়ে দুইজনের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে।’
এর আগে, একই কেন্দ্রে প্রায় এক ঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। প্রিজাইডিং অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিকি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সহকারি রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তে একজন আনসার সদস্য গত রাত ৯টায় আমার কেন্দ্রে আসেন। তিনি নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন। সকালে একপক্ষ গুজব রটায় যে, সে নাকি ব্যালটে ভোট মেরেছে। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট অভিযোগ। তখন দু’পক্ষে ঝামেলা হলে ভোটগ্রহণ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়নি।’
এদিকে ভোটগ্রহণ বন্ধের খবর পেয়ে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ওই কেন্দ্রের সামনে যান। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি হলেও এমপি, না হলেও এমপি। তোরা আমার কিছু করতে পারবি না। প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে আছেন।’
দক্ষিণ জলদি আশকরিয়া পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার নারী ও পুরুষ মিলে ২১৩০। ওই কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
এর আগে, গত ৫ জানুয়ারি ওসি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মোবাইলে কথোপকথনের আরেকটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে তাকে ‘পুলিশের হাত কেটে নেয়ার’ হুমকি দিতে শোনা যায়।
মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে ওই আসনে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঈগল প্রতীকের মুজিবুর রহমান।
সারাবাংলা/আইসি/এসএন/আরডি/এনইউ