রূপগঞ্জে সারাদিন ভোট উৎসব, গাজীর জয় দেখছেন ভোটাররা
৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৩
রূপগঞ্জ থেকে: রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ভোট বর্জন করলেও নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) তার কোনো প্রভাব পড়েনি। এ আসনটিতে রীতিমতো সারাদিন ভোট উৎসব হয়েছে। আর এই আসনের ভোটাররা বলছেন, আসনটিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তারা দেখেছিলেন। কিন্তু ভোট শেষে তারা নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীর প্রতীক) সহজ বিজয়ই দেখছেন তারা।
রোববার (৭ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এবং ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা হচ্ছে, রূপগঞ্জের বেশির ভাগ কেন্দ্রে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। দিন শেষে গড় ভোট ৬০ শতাংশের কাছাকাছি যেতে পারে বলে মনে করছে বুথ ফেরত ভোটার ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা।
এদিন সকাল ৮টা থেকে রূপগঞ্জের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক ভোটার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাইন দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তখনই মনে হয়েছিল ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে কেন্দ্রগুলোতে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেকটা স্রোতের মতো। এ সময় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা ভোটারদের ব্যালট পেপার সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পোলিং অফিসাররাও ব্যাস্ত সময় পার করছিলেন। এ অবস্থায় দুপুর ২টা নাগাদই ৪৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে অনেক কেন্দ্রে। সংশ্লিষ্টদের হিসাব বলছে, পরের দুই ঘণ্টায় আরও প্রায় ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ভোটকেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি দেখে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার, পুলিস সদস্য, আনসার সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। জমজমাট ভোট উৎসবের সাক্ষী হতে পেরে তৃপ্তিবোধ করেন তারা।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনটিতে মোট ভোট তিন লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬টি। কেন্দ্র রায়েছে ১২৮টি। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও স্বতন্ত্রসহ মোট প্রার্থী ছিল ৯জন। এর মধ্যে নৌকার গোলাম দস্তগীর গাজী, কেটলির মো. শাহজাহান ভূঁইয়া ও তৃণমূল বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে ত্রিমুখী ভোট লড়াই নিয়ে রূপগঞ্জজুড়ে ছিল তুমুল আলোচনা।
দিন শেষে ভোটাররা জানাচ্ছেন, ভোটের এই লড়াইয়ে সম্ভবত নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীই বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। আসনটির ৩৪ নম্বর কেন্দ্র রানীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিকেল ৩টার দিকে কথা হয় ভোট দিতে আসা আরিফুল ইসলাম, রায়হানুল কবির ও মাহমুদুল হাসানসহ কয়েকজন তরুণের সঙ্গে। তারা সবাই একসঙ্গে ভোট দিতে এসেছিলেন কেন্দ্রটিতে।
আরিফুল বলেন, ‘ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে ভেবেছিলাম বর্তমান এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে বিএনপি ছেড়ে আসা তৈমুর আলম খন্দকার আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া শাহজাহান ভূঁইয়ার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কিন্তু শেষ কয়েকদিনে তৈমুর আলম খন্দকারকে মাঠে খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ ভোট দিতে এসে মনে হচ্ছে, সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিতে এসেছে। গাজী সাহেবই সম্ভবত বড় ব্যবধানে জিতে যাবেন।’ আরিফুলের সঙ্গে থাকা তার বন্ধুরাও তার বক্তব্যের সঙ্গেই একমত পোষণ করলেন।
বয়স্ক কয়েকজন নারী ও পুরুষ ভোটারের সঙ্গে কথা বললে তাদের কাছ থেকেও একই অভিমত পাওয়া গেল। তারাও সমস্বরেই বলেন, ‘গাজী ভালো লোক। সে রূপগঞ্জের ভালো করেছে। তাই সবাই তার পক্ষে। সে জিতলে রূপগঞ্জের আরও ভালো হবে।’
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে কাঞ্চন ও দাউদপুর পৌরসভার অন্তত ৩০টি ভোটকেন্দ্রের বুথে বুথে গিয়ে ভোটের প্রকৃত চিত্র জানার চেষ্টা করেছে টিম সারাবাংলা।
ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে রানীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত ৩৪ নম্বর কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তখনো ওই কেন্দ্রের পাঁচটি বুথেই ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার তখনো ব্যাস্ত সময় পার করছেন।
কেন্দ্রটির ১ নম্বর বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মুনির হোসেন জানান, ৪১৩টি ভোটের মধ্যে তার বুথে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে হয়েছে ২২৮টি ভোট, যা প্রায় ৫৫ শতাংশের মতো।
২ নম্বর বুথের সহাকারী প্রিজাইডিং অফিসার রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, তার বুথে ৪৫৬ ভোটের মধ্যে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ২০৩টি ভোট, যা প্রায় ৪৮ শতাংশের মতো।
৩ নম্বর বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কামরুজ্জামান জানান, তার বুথে ৪১৪ ভোটের মধ্যে বিকেল ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ১৬০টি ভোট, যা প্রায় ৩৮ শতাংশের মতো।
৪ নম্বর বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার উশা রঞ্জন সূত্রধর জানান, তার বুথে ৬১১ ভোটের মধ্যে বিকেল ৩টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৩৭৯টি ভোট, যা ৬০ শতাংশের বেশি।
৫ নম্বর বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, তার বুথে ৬২৯ ভোটের মধ্যে কাস্ট হয়েছে ৩০২ ভোট, যা প্রায় ৫০ শতাংশ।
এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার গোলাম মাওলা জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৫২০ জন। দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে এক হাজার ১৫৩টি, যা ৪৫ শতাংশের বেশি। বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ বুথ জরিপ শেষে জানা গেল, দুই হাজার ৫২০ ভোটের মধ্যে কাস্ট হয়েছে এক হাজার ২৭২ ভোট, যা ৫০ শতাংশের ওপরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাদেশে যেখানে ৩০ শতাংশ ভোট পড়া নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, সেখানে রূপগঞ্জের কেন্দ্রগুলোদে গড় ভোট পড়ছে ৫০ শতাংশের বেশি। ভোটারদের এই ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সারাদিন ভোট উৎসব হয়েছে রূপগঞ্জ আসনে।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) রূপগঞ্জ