আ.লীগের টানা ৪, এবারও ভূমিধস জয়
৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:১৩
ঢাকা: আরেকটি নির্বাচন। আরেকটি ভূমিধ্বস জয়। আওয়ামী লীগ আরও একবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যে দলটি দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেই দলটি জাতীয় নির্বাচনে পেল টানা চতুর্থ জয়ের স্বাদ। সব মিলিয়ে ষষ্ঠবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
রোববার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সোয়া ৩টার তথ্য বলছে, ২৯৯ আসনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে একেবারে ধরাশায়ী হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত তথ্য বলছে, যে ২৯৯টি আসনে নির্বাচন হয়েছে তার সবগুলোর ফলাফল পাওয়া গেছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ২২৫টি আসনেই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২২৩ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ, ইনু) প্রার্থী একজন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী একজন। তারা সবাই নৌকা প্রতীকে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- জাতীয় পার্টির ভরাডুবি, সমঝোতার ২৬টি আসনে জয় ১১টিতে
এদিকে বিরোধী দল হলেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছিল জাতীয় পার্টি। ২৬টি আসন তাদের ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এসব আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী ছিল না। শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে ১১টি আসনে জিততে পেরেছে জাতীয় পার্টি। ভোটে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টির বাইরে কেবল একটি আসন পেয়েছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম কক্সবাজার-১ আসন থেকে জয়লাভ করেছেন।
বিএনপি এবং সমমনা ও মিত্র দলগুলোর বর্জনের মধ্যে এই নির্বাচন কিছুটা উত্তাপ ছড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কল্যাণে। আওয়ামী লীগের যেসব নেতা বিভিন্ন আসনে দলের মনোনয়ন চেয়ে পননি, তাদের জন্য দল প্রার্থিতার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়। সেই সুযোগে আওয়ামী লীগের নৌকা ও আসন সমঝোতার লাঙ্গল প্রতীকের আসনগুলোতেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে যান। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে তারা ৬২টি আসনে জয়লাভ করেছেন।
সার্বিক হিসাব বলছে, সংসদে এবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তথা তিন-চতুর্থাংশ আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এটি জাতীয় নির্বাচনে তাদের টানা চতুর্থ জয়। এই চারটি জয়ের মধ্যে অবশ্য এবারই সবচেয়ে কম আসন পেয়েছে দলীয় নৌকা প্রতীক। এর আগে ২০০৮ সালে ২৩০ আসন, ২০১৪ সালে ২৩৪ আসন ও ২০১৮ সালে ২৫৮ আসন পেয়েছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।
আরও পড়ুন- গোলাম দস্তগীর গাজী চারে চার
এবার অবশ্য হিসাব কিছুটা ভিন্ন। ২২৫টি আসনে নৌকা প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৬২টি আসনে। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবাইই মূলত আওয়ামী লীগেরই নেতা। সে হিসাবে সংসদের ৯৫ শতাংশই থাকবে আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলেই।
এর আগে রোববার সকাল ৮টায় থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪টায়। শীতের আমেজ কাটিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকালে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছড়িয়ে ছিল ভোট কেন্দ্রগুলোতে। খুব একটা অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও মেলেনি। ভোটে বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতা, সংঘর্ষ ঘটেছে। নির্বাচনের আগের রাত থেকে সহিংসতায় অন্তত একজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তবে ভোটের দিন বেশির ভাগ কেন্দ্রেই অন্যান্য দলের প্রার্থীদের এজেন্ট না থাকার খবর সকাল থেকে পাওয়া গেছে।
সকালের দিকে ভোট পড়ায় কিছুটা ধীরগতি ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই নির্বাচনে ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় সরকারের অধীনেও তারা একটি সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করতে সমর্থক হয়েছেন।
আরও পড়ুন- দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে: সিইসি
এবারের নির্বাচন বিএনপিসহ তাদের সমমনা শরিকরা ভোট বয়কট করেছেন। জনগণের অবাধ অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতিতে কঠোর অবস্থানে ছিল নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও জনগণের অবাধ অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে অঙ্গীকারবদ্ধ। ৭ জানুয়ারির ভোটে বিএনপি-জামায়াতসহ নির্বাচন বিরোধীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পাশাপাশি নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সে দিকেও সতর্ক অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ। ভোটের মাঠে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে মোতায়েন ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট লাখ সদস্য।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের বর্জনসহ বেশ কিছু কারণে এ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার টানাই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেছিল নির্বাচন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে কারচুপি ঠেকাতে এবার অধিকাংশ কেন্দ্রেই ভোটের দিন সকালে ব্যালট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। ভোটের দিন সকালে ৯২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ৩৯ হাজার ৬১ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। আর দুই হাজার ৯৬৪টি বা ৭ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যায় ভোটের আগের দিন শনিবার। এ ছাড়া গতকাল বেশ কিছু দুর্গম কেন্দ্রে হেলিকপ্টারযোগে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়। এ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ২৫টি।
শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রতিশ্রুতিতে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে ছিলেন। নির্বাচনে অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডের দায়ভার এড়াতে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ছিল। ইসিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে ভোট-পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচনি এলাকায় সভাসমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রার ব্যাপারে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
আরও পড়ুন- গড়ে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে: সিইসি
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ফের সরকার গঠন করে। ২০১৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগের আসনসংখ্যা কেবল বেড়েই যায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধীদের অংশগ্রহণের মধ্যেই ভূমিধ্বস জয় পেল আওয়ামী লীগ ও শরিকরা।
এর আগে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। পরে জাতীয় পার্টি ও জাসদের (রব) সমর্থনে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এবার নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে রেকর্ড টানা চতুর্থবার ও মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি। আর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর সরকার গঠন করায় এবার স্বাধীন বাংলাদেশে এটি হবে আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ সরকার।
আরও পড়ুন-
আরও পড়ুন-
- প্রচারে সরব রূপগঞ্জ, ভোটারদের আস্থা নৌকায়
- ‘ভোটের পরিবেশে সন্তুষ্ট, জয়ের বিষয়ে আশাবাদী’
- রূপগঞ্জে নৌকার কাছে কেটলি ধরাশায়ী, জিতলেন গাজী
- রূপগঞ্জে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বাড়ছে ভোটারদের ভিড়, ছুটছে নৌকা
- রূপগঞ্জে সারাদিন ভোট উৎসব, গাজীর জয় দেখছেন ভোটাররা
- ‘আপনাদের ভোটে এমপি-মন্ত্রী হয়েছি, বেইমানি করতে পারব না’
- কেউ খোঁজ রাখে নাই, পাশে দাঁড়িয়েছে শুধু গোলাম দস্তগীর গাজী
- করোনা মোকাবিলায় সরকারের পাশে গোলাম দস্তগীর গাজীই প্রথম
- প্রথম চার ঘণ্টায় কাঞ্চন-দাউদপুরে ভোট পড়েছে ৪৫ শতাংশের বেশি
- ‘গোলাম দস্তগীর গাজী না থাকলে চিকিৎসার খরচ জোগাতেই মরে যেতাম’
সারাবাংলা/জিএস/এনআর/টিআর
আওয়ামী লীগ জাতীয়-নির্বাচন নিরঙ্কুশ জয় শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা সরকার সরকার গঠন সংসদ নির্বাচন