পুনর্নির্বাচন দাবি গিয়াসের, ছালামের প্রার্থিতা বাতিল চান বিজয়
৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেওয়া, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন চট্টগ্রামের দুটি সংসদীয় আসনের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। পরাজিত এ দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের নেতা। এদের মধ্যে মীরসরাই আসনের গিয়াস উদ্দিন পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন। বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের বিজয় কুমার চৌধুরী ভোটে বিজয়ী আবদুচ ছালামের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি তুলেছেন।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে দুই প্রার্থী বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেলের কাছে হেরেছেন দলটির ‘পোড় খাওয়া’ নেতা গিয়াস উদ্দিন। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করেছেন।
দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৭৩টি ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগে আনেন। তিনি বলেন, ‘ভোটের সময় আমার ২৭ জন এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে। অধিকাংশ কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। ভোটার ও কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের পক্ষে মাত্র ১০ শতাংশ ভোট পড়বে, এমনটা নিশ্চিত হয়ে কেন্দ্র দখলে বেপরোয়া হয়ে যায়।’
‘সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই তারা এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আমি ভোট বর্জন করতাম। কিন্তু আমি আমার ভোটারদের কথা চিন্তা করে নির্বাচনের শেষ অবধি ছিলাম। আমি প্রশাসনের উদাসীনতা দেখে খুবই হতাশ,’— বলেন গিয়াস উদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের নির্বাচন চাননি। চর দখলের মতো ভোট দখল করে এমপি নির্বাচিত হয়ে জনগণের জন্য রুহেল কিছুই করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনারের প্রতি আমার আকুল আবেদন, এই নির্বাচন আপনি বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দিন।’
সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস উদ্দিনের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা নিয়াজ মোরশেদ এলিট উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী বলেন, ‘জাল ভোট দিয়ে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম আমার বিজয় ছিনতাই করেছে। পুলিশও জালভোট দিতে সহায়তা করেছে। আমার এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেছে।’
বিজয়ের অভিযোগ, নির্বাচন চলার সময় সকাল ১০টার পর থেকে আবদুচ ছালাম বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সহায়তায় বহদ্দারহাট থেকে শুরু করে মোহরা পর্যন্ত দফায় দফায় টায়ার পোড়ানো, পাথর নিক্ষেপসহ ভীতিকর কর্মকাণ্ড ঘটান এবং ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করেন।
সংখ্যালঘু ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ তুলে বিজয় বলেন, ‘চান্দগাঁও ওয়ার্ডে আমার ১০ হাজার ৭০৮ ও মোহরা ওয়ার্ডে ৮ হাজার ৭৬৭ জন সংখ্যালঘু ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। বিএনপিকে হাত করে তারা এ কাজগুলো করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য সুরেশ চৌধুরীকে মারধর করেছে উনার অনুসারীরা। সে এখনো হাসপাতালে ভর্তি।’
‘আমি এগুলো নির্বাচন কমিশনে আগেই জানিয়েছি। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রয়োজনে আমি হাইকোর্টে যাব। নির্বাচন হয়েছে একতরফা এবং সংঘাতময় পরিস্থিতিতে। প্রশাসনের ভূমিকাও ছিল রহস্যময়। দফায় দফায় অভিযোগ নিয়েও কোনো সহযোগিতা কিংবা প্রতিকার পাইনি,’— বলেন স্বতন্ত্র এই প্রার্থী।
নির্বাচনের সার্বিক দিক মূল্যায়ন করে গেজেট প্রকাশের আগেই বিজয়ী প্রার্থী আবদুচ ছালামের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানান বিজয় কুমার চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ এবার চট্টগ্রাম-৮ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন সোলায়মান আলম শেঠ। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকের আবদুচ ছালাম ও ফুলকপি প্রতীকের বিজয় কুমার চৌধুরী।
শিল্পপতি আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান। ২০০৮ সালে তিনি এ আসন থেকে মনোনয়ন পেলেও পরে ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিজয় কুমার চৌধুরীও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য। বোয়ালখালীর বাসিন্দা বিজয় চসিকের জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/টিআর
আবদুচ ছালাম গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম-১ চট্টগ্রাম-৮ জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিজয় কুমার চৌধুরী মাহবুব রহমান রুহেল সংসদ নির্বাচন