প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় তারা
১১ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৫১
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের শপথের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ফলে টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নামও চূড়ান্ত করেছেন। সেই তালিকা থেকে দেখা গেছে, ৩৬ জনের তালিকায় এমন ১৪ জন স্থান পেয়েছেন যারা এই প্রথমবার স্থান পেয়েছেন কোনো মন্ত্রিসভায়।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন তার কার্যালয়ে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী মিলিয়ে ৩৬ জনের এই তালিকায় একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভার ১৭ জন স্থান পেয়েছেন। সে হিসাবে ১৯ জন যুক্ত হয়েছেন নতুন করে। তবে তাদের মধ্যে পাঁচজন আবার এর আগেও শেখ হাসিনারই মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। বাকি ১৪ জনের জন্য মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। এর মধ্যে সাতজনকে পূর্ণ মন্ত্রী এবং বাকি সাতজনকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়।
আরও পড়ুন- শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় ২৫ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ১১ জন [তালিকা]
প্রথমবার মন্ত্রিসভায় ঢুকেই মন্ত্রী ৭ জন
জীবনে প্রথমবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েই পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাতজন। তাদের মধ্যে আছেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মো. আব্দুস শহীদ। এই আসন থেকে এবার তিনি সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
এই তালিকায় আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। দ্বাদশে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক এই আমলা শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকা অবস্থায় ১৯৮৬ সালে বিরোধী দলীয় নেতার একান্ত সহকারী সচিব ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রথমবার মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া মো. আব্দুর রহমান ফরিদপুর-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের একজন। এবারের নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন-
- মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ
- দ্বাদশের মন্ত্রিসভায়ও ৪ নারী, নতুন মুখ ২ জন
- ‘প্রমোশন’ পেলেন একাদশের ৩ প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী
- টেকনোক্র্যাটে ফের ইয়াফেস, নতুন মুখ সামন্ত লাল
পূর্ণ মন্ত্রীর তালিকায় থাকা আব্দুস সালাম ময়মনসিংহ-৯ আসনের সংসদ সদস্য। এবারে তিনি তৃতীয়বারের মতো এই আসনের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল পদে থাকা অবস্থায় অবসর নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন।
রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিমকেও পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। এবারে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসন থেকে তিনি প্রথম এমপি হয়েছিলেন ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
মন্ত্রী হিসেবে ডাক পাওয়া নাজমুল হাসান পাপন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে এবার টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সারাদেশেই তিনি সুপরিচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আইভী রহমানের সন্তান পাপন। তিনি বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং গ্রুপ পরিচালক ও সিইও (ফার্মাসিউটিক্যালস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট হিসেবে যে দুজন মন্ত্রী ডাক পেয়েছেন তাদের মধ্যে সামন্ত লাল সেন এই প্রথম মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করবেন। পেশায় এই চিকিৎসকের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাও এই প্রথম হবে তার। বর্তমানে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। ১৯৮৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম বার্ন ইউনিট চালু হওয়াতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতিও তিনি।
প্রথমবার মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়া ৭ প্রতিমন্ত্রী
পূর্ণ মন্ত্রীর মতো প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও নতুন মন্ত্রিসভায় ৭ জন জায়গা পেয়েছেন যারা প্রথমবার মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাদের মধ্যে সিমিন হোসেন রিমি গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জোহরা তাজ দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান তিনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসনে তার ভাই সোহেল তাজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি পদত্যাগ করলে ২০১২ সালে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন রিমি। এরপর থেকে তিনিই এই আসনে টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডাক পাওয়া মোহাম্মদ আলী আরাফাত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মূলত শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ তিনি। কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট সদস্য। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও তিনি। এর আগে ২০২৩ সালেও একই আসন থেকে উপনির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডাক পাওয়া মো. মহিবুর রহমান পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয় পেয়েছিলেন এই আসন থেকে। একটি ডিগ্রি কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষ বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পার্বত্য খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসন থেকে এবার তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তিনি খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রত্যাবাসন, শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনবিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান তিনি।
শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় আরও দ্বিতীয় নারী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জায়গা পেয়েছেন রুমানা আলী। গাজীপুর-৩ আসন থেকে এবারই প্রথম সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তার বাবা সাবেক মন্ত্রী রহমত আলী এই আসন থেকে পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। রুমানা একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডাক পাওয়া সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকা শফিকুর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডাক পাওয়া আহসানুল ইসলাম টিটু টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় ব্যবসায়ী টিটু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক তিনি। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সারাবাংলা/টিআর
আব্দুস সালাম আহসানুল ইসলাম টিটু কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নাজমুল হাসান পাপন মন্ত্রিসভা মো. আব্দুর রহমান মো. আব্দুস শহীদ মো. জিল্লুল হাকিম মো. মহিবুর রহমান মোহাম্মদ এ আরাফাত র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী রুমানা আলী শফিকুর রহমান চৌধুরী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা সংসদ নির্বাচন সামন্ত লাল সেন সিমিন হোসেন রিমি