চমেকে ওষুধ ‘নয়-ছয়’, ছদ্মবেশে গিয়ে সত্যতা পেল দুদক
১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারি ওষুধ আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। অভিযানে চমেকের দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি ওষুধ আত্মসাতের প্রমাণও পেয়েছে দুদক কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ওষুধের মজুদ কক্ষে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক এনামুল হক।
এদিন দুপুরে দুদকের চার সদস্যের একটি টিম হানা দেয় চমেক হাসপাতালে। ছদ্মবেশে কিছুক্ষণ ঘোরার পর তারা জরুরি বিভাগ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে কোন কোন বেডে কী কী ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে তার তথ্য চান।
তথ্যানুযায়ী জরুরি বিভাগ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি বেডে ওষুধ সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা রোগী পর্যন্ত না পৌঁছানোর প্রমাণ পান দুদক কর্মকর্তারা। অনেক বেড খালি থাকলেও সেখানে ওষুধ সরবরাহের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে দুদকের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ড ইনচার্জ মিনতি বড়ুয়া ও সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুনকে জিজ্ঞেস করলে তারা কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ না থাকলেও ওয়ার্ড রেজিস্ট্রারের খাতায় দামি ওষুধের নাম লিখে স্টোর থেকে ওষুধ তুলে নেওয়ার প্রমাণও পেয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা।
অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল হাসপাতালের রোগীদের সরকারি ওষুধ সরবরাহ না করে আত্মসাৎ করা হয়। এরপর রোগীদের সেগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা হাসপাতালে ছদ্মবেশে এসে বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করি। প্রথমে জরুরি বিভাগে গিয়ে রেজিস্টার্ড খাতায় দেখি প্রত্যেকটি বেডে ওষুধ বিতরণের কথা বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমরা তদন্ত করে দেখেছি, তাদের কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি। এমনকি কয়েকটি বেডে রোগীও পাওয়া যায়নি। কিন্তু খাতায় দেখানো হয়েছে ওইসব বেডে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওষুধ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
এনামুল হক বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের সহকারী পরিচালককে সরেজমিনে নিয়ে গিয়ে উনার সামনে এসব অনিয়ম তুলে ধরি। এসব ওষুধ কোথায় যাবে। আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি এসব ওষুধ আত্মসাৎ করা হয়েছে। তারপর আমরা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ওষুধের স্টোর রুমে গিয়ে দেখতে পাই, প্রতিদিন ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সব তো আর একদিনে দেখা যাবে না। আমরা দুয়েকটি দামি ওষুধ দেখেছি, যেগুলো রোগীদের দেওয়া হচ্ছে বলে নেওয়া হলেও সেগুলো কিন্তু রোগীরা পাচ্ছে না বা তাদের দেওয়া হচ্ছে না। যেসব ওষুধ রোগীদের দেওয়া হচ্ছে সেগুলো প্রেসক্রিপশনেও নেই। ডাক্তারও লেখেননি। এসব ওষুধ আদৌ কোথায় গেল।’
দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এসব ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও স্টাফ নার্সদের জিজ্ঞাসা করলে তারা তেমন কোনো উত্তর দিতে পারেনি। আমাদের এ অভিযান অব্যহত থাকবে। আমরা এসব বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালককে জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগের সত্যতা পেলাম তাদের বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। আমাদের অভিযানের তদন্ত রিপোর্ট আমরা কমিশনে জমা দেব।’
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদকের পুরো অভিযানে আমি উনাদের সঙ্গে ছিলাম। বিষয়গুলো আমি দেখেছি। এসব বিষয়ে আরও তদন্ত করে যারা এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে সুপারিশ করব।’
‘ওয়ার্ডে ওষুধ বিতরণ করার দায়িত্বে থাকে নার্সরা। উনারা সঠিকভাবে হয়তো পরিচালনা বা পর্যবেক্ষণ করেনি। এসব ভুল কোনোভাবে কাম্য নয়। সামনে যাতে এরকম ভুল না হয় আমরা ব্যবস্থা নেব।’
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকে। পাঁচ হাজারের মতো রোগী চিকিৎসা নেয়। ওয়ার্ডে যখন পেশেন্ট টু পেশেন্ট ওষুধ বিতরণ করা হয় সে হিসেবটা রাখা খুব টাফ। তখন ওষুধ এদিক-ওদিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় সময়ই এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করি। আমরা চাই দুদক আরও অভিযান পরিচালনা করুক। এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। গত দেড় বছরে এরকম কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জন স্টাফকে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম