শীতে বাড়ছে আলুর লেটব্লাইট রোগ, বোরো’র বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত
১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৭
বগুড়া: বগুড়ায় ঘন কুয়াশার কারণে লেটব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়া ও বাজারে নকল ওষুধ জমিতে স্প্রে করায় আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় আলু চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। এবার বগুড়ায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এছাড়া শীতে বোরো আবাদের বীজতলাও আক্রান্ত হচ্ছে কোল্ড ইনজুরিতে। বীজতলা তৈরির শেষপ্রান্তে আবহাওয়ার বৈরিতায় কৃষকরা রয়েছেন অস্বস্তিতে।
এদিকে শীতের সঙ্গে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। বীজতলা ও আলুর ক্ষেত নিয়ে কৃষকদের চিন্তা বাড়ছে। এর মধ্যে আলু ক্ষেতে দেখা দিয়েছে যেমন পচন রোগ বা লেটব্লাইট তেমনি বোরো আবাদের বীজতলা আক্রান্ত হচ্ছে কোল্ড ইনজুরিতে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এই মুহূর্তে বড় ধরনের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকলেও আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘ হয় তাহলে ক্ষতির পরিমান বাড়বে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এবার বগুড়ায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মাসেই কিছু নিচু এলাকায় আবাদ শুরু করছেন কৃষকরা। এবার জেলায় ১০ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমির বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এখন পর্যন্ত ৯৬০৫ হেক্টর জমির বীজতলা তৈরি হয়েছে।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তীব্র শীত ও কুয়াশায় বোরের বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে বীজতলার চারা হলুদ ও কিছুটা কালচে হওয়া শুরু করছে।
শেখেরকোলা নুরইল দক্ষিণ পাড়ার কৃষক আমিনুল জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করছেন। এর মধ্যে ৩ শতক জমির বীজতলা শীতের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। তার আশা রোদ ও আবহাওয়া ভালো হলেই খারাপের দিকে যাওয়া বীজতলা সতেজ হয়ে উঠবে।
একই এলাকার আব্দুল কুদ্দুস জানান, ৪ বিঘা জমির জন্য বোরের বীজতলা ফেলেছেন। তবে এখন যে আবহাওয়া তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। আশপাশের বীজতলা হলদে ও কালো হয়ে যাচ্ছে।
শেখের কোলার চান মিয়া তীব্র শীত উপেক্ষা করেই কীটনাশক নিয়ে ছুটেছেন আলুর জমিতে। সকালে জমিতে একদফা ওষুধ স্প্রে করেও শান্তি পাচ্ছেন না। বগুড়ায় এবার বিপুল পরিমান আলুর আবাদ শীতজনিত পচনরোগ বা লেটব্লাইটে আক্রান্ত হয়েছে।
বগুড়ার শাখারিয়ার কৃষক বজলু মিয়া জানান, এবার তিনি ৭ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন। ৫ বিঘা জমির আগাম আলুতে যে লাভ করেছেন তা জীবনে পাননি। তবে ২ বিঘা জমিতে এখন পচনরোগ ধরায় তাকে চিন্তায় ফেলেছে। সকাল থেকে তিনি ক্ষেতে ওষুধ স্প্রে করছেন।
বগুড়ায় এবার আলু আবাদ হয়েছে ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। এর মধে প্রায় সাড়ে ২২০০ হেক্টর আগাম জাতের আলু। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪শ’ হেক্টর জমির আগামজাতের আলু কৃষকরা উত্তোলন করছেন। আগামজাত ছাড়া বাকি আলু এখন জমিতেই। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এই আলু জমি থেকে কৃষকরা আলু ঘরে তুলবেন। তবে হঠাৎ করে ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দেওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল-মুজাহিদ সরকার বলেন, ‘ইতোমধ্যে এই উপজেলার কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের আলু রক্ষায় বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক অব্যাহত রয়েছে।’
বাজারের নকল কীটনাশক কিনে কৃষকরা প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু কীটনাশক কম কার্যকর বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সেজন্য গুণগত মান পরীক্ষার জন্য ওষুধের নমুনা ঢাকা কৃষি বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কৃষকদের কৃষি বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসে হেল্প ডেক্স চালু করা হয়েছে। কৃষকরা ২৪ ঘণ্টা পরামর্শ নিতে পারবেন।’
বগুড়া কৃষি অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, কৃষি বিভাগের কর্মীরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন। আবাদ রক্ষায় করণীয় ও প্রয়োজনীয় ছাত্রাকনাশক জমিতে স্প্রে করার জন্য লিফলেট বিতারণ করা হচ্ছে।
অপরদিকে বোরোর বীজতলা নিয়ে জানান, বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। বীজতলায় নাইট্রোজেন ও ফসফরাস ছিটানোসহ জমিতে পানি দেওয়ার বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/এমও