Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১০ বছরেও শেষ হয়নি ৬ বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার বিচার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫০

রংপুর: ১০ বছরেও শেষ হয়নি রংপুরের মিঠাপুকুরে পেট্রোল বোমা মেরে শিশুসহ ছয় বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার বিচার। ২০১৪ সালের আজকেই এই দিনে (১৪ জানুয়ারি) ওই বোমা হামলায় দগ্ধ হন ওই ছয় যাত্রীসহ ২৫ জন। দগ্ধদের মধ্যে একেবারেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন প্রায় ২০ জন। ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের দেওয়া এক আদেশে মামলার সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকায় জনমনে উঠেছে প্রশ্ন। তাই আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদ্যোগী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল অবরোধের নবম দিন ছিল দিনটি। নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। ১৪ জানুয়ারি রাতে কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে ছেড়ে আসা খলিল পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস প্রায় ৩৫ জনের মতো দিনমজুর যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। বাসটি যখন রংপুরের জায়গিরহাটের বাতাসন এলাকায় পৌঁছায় ঠিক তখনই একেরপর এক পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে সন্ত্রাসীরা। মুহূর্তেই আগুন লেগে যায় পুরো বাসে। সেদিন নির্দয় ঘটনায় বাসের ভেতরে থাকা শিশুসহ ছয় যাত্রীর দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এতে আহত হন অন্তত ২৫ যাত্রী। গুরুতর আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে ২০ জনই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।

এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে জামায়াত-শিবিরের ৮৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মিঠাপুকুর থানার পরিদর্শক নজরুল ইসলাম তদন্ত শেষে ১৩২ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে মামলাটির বিচারকাজ রংপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালত ১-এ শুরু হলেও ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। কিন্তু তদন্তজনিত ত্রুটির কথা উল্লেখ করে আসামিপক্ষ হাইকোর্টে মামলাটির খারিজ আবেদন করলে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। এতে মামলার বিচার কার্যক্রম ২০১৭ সালে থমকে যায়। এরপর থেকে আর মামলা সংক্রান্ত বিষয় আলোর মুখ দেখেনি।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, ‘ছয় বাসযাত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার মতো মামলাও যদি আইনের মারপ্যাঁচে আটকে যায় তাহলে বিচারপ্রার্থীরা আর কতবছর ক্ষতের দাগ নিয়ে জীবন অতিবাহিত করবে। দ্রুত মামলাটির বিচারকাজ শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা দরকার। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদ্যোগী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুস সাত্তার জানান, মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে এসে গেছে। কিন্তু আসামিপক্ষ হাইকোর্টে খারিজের আবেদন করায় মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে হাইকোর্টে শুনানি শেষ হলে খুব দ্রুতই বিচারকাজ শেষ হবে।

তবে তদন্তকাজে ত্রুটি থাকার সুযোগ নিয়েছে আসামিপক্ষ- এমনটাই মনে করছেন সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী প্রধান আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষ হাইকোর্টে মামলাটির খারিজ আবেদন করলে কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হাইকোর্টে যাতে দ্রুত শুনানি করা হয় সেজন্য অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ বাতিলের আদেশ পাওয়া গেলে নিম্ন আদালতে ফের বিচারকাজ চালু হবে।’

সারাবাংলা/পিটিএম

১০ বছর টপ নিউজ বাসযাত্রী হত্যার বিচার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর