Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাদকবিরোধী মিছিলের নামে অস্ত্রের মহড়া, গ্রেফতার ১৭

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:০৬

মাদকবিরোধী মিছিলের নামে ছাত্রদলের ক্যাডাররা অস্ত্রের মহড়া দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে মাদকবিরোধী মিছিলের নামে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, দোকানপাট ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগে ১৭ তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার ১৭ জন ছাত্রদল ক্যাডার বার্মা সাইফুলের অনুসারী।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাতভর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বার্মা কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ১০টি ধারালো কিরিচ ও একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো প্রকাশ্য মহড়ায় ব্যবহার করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গ্রেফতার ১৭ জন হলেন— সাব্বির হোসেন শাওন (২১), মো. ইমরান (২৭), মো. নজরুল (২৬), ইসমাইল উদ্দিন আকাশ (২৫), মো. হাসান (২৬), মো. সজিব (২৩), ইয়াসিন রায়হান হৃদয় বাবু (২৪), মো. রমজান (২২), শাকিল (২৪), হাবিব (৩৯), রাসেল (২২), ইমরান হোসেন (৩০), ইমন (২২), আরিফুল ইসলাম (৩০), মানিক (৩৫), সুমন (২৯) ও মনির হোসেন (২৪)।

বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা সারাবাংলাকে জানান, গত শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে বার্মা কলোনির সামনে থেকে সাব্বির হোসেন শাওনের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী মিছিল বের হয়। ২০-৩০ জন স্থানীয় তরুণ এতে অংশ নেয়। মিছিলটি আলীনগর এক নম্বর সড়ক দিয়ে এগিয়ে আমিন কলোনির সামনে পৌঁছে। কলোনিসংলগ্ন মোহাম্মদনগরের ৯ নম্বর সড়কে একটি জেয়াফত অনুষ্ঠানে এসেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর মোবারক আলী।

‘মিছিলে থাকা তরুণরা এ সময় প্রকাশ্যে কিরিচ ও অস্ত্র বের করে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন কাউন্সিলরের সঙ্গে থাকা উনার অনুসারীরা তাদের ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় শাকিল অস্ত্র বের করে ফাঁকা গুলিবর্ষণের মতো মহড়া দেন। পরে আমরা জানতে পারি, সেটি খেলনা পিস্তল ছিল এবং সেটি উঁচিয়ে ধরলেও তারা চকলেট আতশবাজি ফুটিয়ে ত্রাস ছড়ায়। এ ছাড়া পালানোর সময় তারা অন্তত সাতটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আবদুল্লাহ আল মাহমুদ নামে একজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়,’— বলেন ওসি সঞ্জয় কুমার।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি একটি জেয়াফত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বের হয়েছিলাম। আমাকে দেখেই তারা অস্ত্রশস্ত্র বের করে ফেলে। হঠাৎ ত্রাস সৃষ্টি করে। তখন এলাকার লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। আসলে তারা ভেবেছিল, আমি তাদের মিছিল দেখে বাধা দেওয়ার জন্য বের হয়েছি। সেই ভয়েই তারা অস্ত্রশস্ত্র বের করে ফেলে।’

এদিকে আহত আবদুল্লাহ আল মাহমুদের ভাই আবদুল আল মনির ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় শুক্রবার রাতে মামলা করেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সাতজনকে শনাক্ত করে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতার ১৭ জন ছাত্রদল ক্যাডার বার্মা সাইফুলের অনুসারী সন্ত্রাসী। ২০২১ সালের ১৬ জুন গভীর রাতে নগরীর বায়েজিদ-ভাটিয়ারি লিংক রোডে পুলিশের চেকপোস্টে গুলি বিনিময়ের পর সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলকে (৩২) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে যান। অন্তত দেড় ডজন মামলার আসামি সাইফুলকে নির্বাচনের আগে আবার গ্রেফতার করা হয়।

‘সাইফুলের নেতৃত্বে বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা হয়। সে জেলে থাকায় তার ভাই সবুজ গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়। আমরা জানতে পেরেছি, সবুজকে এলাকার দোকানদার-ব্যবসায়ীরা পাত্তা দেয় না, চাঁদাও দেয় না। এজন্য এ লাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখাতে সবুজের নির্দেশে মাদক বিরোধী মিছিলের নামে শোডাউনের আয়োজন করা হয়েছিল,’— বলেন ওসি।

কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘বার্মা সাইফুল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিএনপি পুলিশের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছে, তাতে এই সন্ত্রাসীর এলাকায় প্রভাব আরও বেড়েছে। বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাইফুলের পরিবার আদালতে মামলা করেছিল। এ কারণে পুলিশও সম্ভবত তাদের সমীহ করে চলে। এ সুযোগে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সাইফুল ও তার বাহিনী। তার দুই ভাই সবুজ ও শামসু পুরো এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

অস্ত্রের মহড়া ছাত্রদলের ক্যাডার টপ নিউজ দোকানপাট ভাঙচুর বার্মা সাইফুল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর