‘কুয়াশা না থাকলে আরও বেশি ভোট কাস্ট হতো’
১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পূর্ব-পশ্চিমের সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এছাড়া কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন হাছান মাহমুদ।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্ব-পশ্চিমের সবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। সম্পর্ককে আরও গভীর করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে এনগেজমেন্ট আরও বাড়াচ্ছি। আমি ন্যাম সামিটে যাচ্ছি, সেখানে মায়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা কূটনৈতিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
সদ্যসমাপ্ত সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্রহণ করেছে মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে গ্রহণ করেছে, এর প্রমাণ হচ্ছে বহু নির্বাচনি পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে এসেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই, আইআরআই, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সার্ক, ওআইসি ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে এসেছিলেন।’
‘সবাই একযোগে মত প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এবার অপেক্ষাকৃত কম সহিংসতা হয়েছে, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা নির্বাচন কমিশনে গেছেন। আজ কাগজে দেখলাম, নির্বাচন কমিশন যে তথ্যউপাত্ত দিয়েছে, এতে তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশে নির্বাচন হয়েছে। বেশিরভাগ নিবন্ধিত দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। যেদিন নির্বাচন হয়, সেদিন প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশা ছিল। এজন্য ভোটের পার্সেন্টেজ প্রায় ৪২ শতাংশ হয়েছে, যদি কুয়াশা এবং শীত না থাকতো তাহলে আরো বেশি ভোট কাস্ট হতো।’
‘নির্বাচনের দিন প্রতি দু’ঘণ্টা পর পর ভোট কাস্টিংয়ের তথ্য দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ম্যানুয়াল ভোটে কত শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে, সেটি নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। ইভিএমে ভোট হলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে কাস্ট হয়ে যেত। ম্যানুয়ালি হওয়ায় সঠিক তথ্যটা নির্বাচনের শেষে এসেছে।’
বিএনপি আগুন সন্ত্রাস করেও মানুষকে ঠেকাতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পাঁচ তারিখ (জানুয়ারি) রাতেও বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষকে ভয় লাগানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু মানুষ ভয় পায়নি, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে গেছে।’
এরপর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে বিমানবন্দরের বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমার গাড়ির সামনে কোনো একজন ভিখারিও হাত দেখালে, আমি কিন্তু দাঁড়াই। সেভাবেই থাকত চাই। একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে পরম পাওয়া হচ্ছে জনগণের ভালোবাসা, বড় মন্ত্রী হওয়া নয়। গণমানুষের নেতা ও এমপি হওয়া একজন রাজনীতিবীদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, আমি সেটিই হতে চাই।’
‘আমি গত ১৫ বছর ধরে চেষ্টা করেছি গণমানুষের এমপি হওয়ার জন্য। কে আমাকে ভোট দিয়েছে কিংবা দেয়নি, সেটি কখনো আমি বিবেচনায় রাখিনি। আমি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সবসময়, কিন্তু সবমানুষের এমপি হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি এবারও নতুন অভিযাত্রায় সব মানুষের এমপি হিসেবে কাজ করতে চাই। যারা আমাকে ভোট দেয়নি কিংবা ভবিষ্যতেও দেবে না, তাদের জন্যও কাজ করতে চাই। অবশ্যই দল এবং নেতাকর্মীদের জন্যও কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের ভাই হিসেবে আছি।’
এসময় চট্রগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম ও শেখ আতাউর রহমান, নগরের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু সাবেক সাংসদ নোমান আল মাহমুদ ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস