Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভোটের প্রশিক্ষণে উদ্ধত আচরণ, ২ শিক্ষক বরখাস্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:০৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নির্বাচনি প্রশিক্ষণে রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ানোর অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে দুই কলেজ শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা হলেন- চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আবদুস সালাম এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক রিবেন ধর।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের চারদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোলেমান খান স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগ ঘুরে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) তাদের বরখাস্তের আদেশ চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে পৌঁছে।

সহকারি অধ্যাপক আবদুস সালাম এবং প্রভাষক রিবেন ধর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগরী ও তৎসংলগ্ন আসনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। নগরী ও তৎসংলগ্ন ছয়টি সংসদীয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম।

মাউশি ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর একাংশ) আসনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা তোফায়েল ইসলাম। প্রশিক্ষণে দুই শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

প্রশিক্ষণ চলাকালে আব্দুস সালাম ও রিবেন ধর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের তৃতীয় গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা হওয়ার পরও তাদের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব কেন দেওয়া হয়েছে? রিটর্নিং অফিসার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার কথা বললে এ নিয়ে তারা বিভিন্ন ‘অবান্তর’ কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা এর সুরাহা না হলে ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন না বলে জানিয়ে দেন।

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার মধ্যে প্রশিক্ষণের আয়োজন ভণ্ডুল হওয়ার উপক্রম হয়। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত ‍উপ-কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বক্তব্য রাখতে উঠলে তাকে লক্ষ্য করেও দু’জন ‘অপ্রাসঙ্গিক ও অযাচিত’ মন্তব্য করেন। এ নিয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

জানা গেছে, প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং দুই শিক্ষকের ভূমিকা ওইদিনই লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা তোফায়েল ইসলাম। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী আবদুস সালাম ও রিবেন ধরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়।

এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ১১ জানুয়ারি সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ বিধি ১২ (১) অনুযায়ী তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। এর আগে, তাদের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়।

মাউশি’র কলেজ ও প্রশাসন উইংয়ের পরিচালক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুনেছি, উনারা (দুই শিক্ষক) নির্বাচনের প্রশিক্ষণের সময় রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িত হয়েছিলেন। রিটার্নিং অফিসার নিজেই সেটা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন। এরপর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা ক্যাডারের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা সচিব মহোদয়ের লিখিত নির্দেশনা পেয়েছি এবং সেটা সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই কলেজ শিক্ষকের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার নুর সারাবাংলাকে বলেন, ’১১ জানুয়ারি বরখাস্তের অর্ডার হয়েছে। আমরা আজ (বুধবার) অর্ডার পেয়েছি। যেহেতু, ১১ তারিখ অর্ডার হওয়ার পরই আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি, উনাদের সেদিন থেকেই পরীক্ষা এবং পাঠদান কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তবে উনারা আজ পর্যন্ত কলেজে উপস্থিত ছিলেন। রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার পর দুজনকে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।’

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

আচরণ উদ্ধত প্রশিক্ষণ বরখাস্ত ভোট শিক্ষক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর