Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংস্কারের পর উদ্বোধন হলো ঐতিহ্যবাহী ‘ঢাকা গেট’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:০০

ঢাকা: সংস্কারের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ঐতিহাসিক ঢাকা গেট। পুরনো আদলে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে সাড়ে তিনশ বছরের পুরনো ফটকটি। ২০২৩ সালের ২৪ মে এর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দোয়েল চত্বর সংলগ্ন এলাকায় উদ্বোধনের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটি।

উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এসময় ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও ফটকের নতুন নকশাকার স্থপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ উপস্থিত ছিলেন।

জরাজীর্ণ এই স্থাপনাটি মানুষের মন থেকেও হারিয়ে যেতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঢাকা গেইট সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সে সময় বলা হয়, সংস্কার করে এ স্থাপনাকে সপ্তদশ শতকের সেই রূপে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রায় ৮২ লাখ টাকা খরচ করে গেটটি সংস্কারের কাজ করেছে ঠিকাদার কোম্পানি আহনাফ ট্রেডিংস।

উদ্বোধন শেষে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, অধ্যাপক আবু সাইদ ঢাবি প্রক্টর-ঐতিহ্যবাহী ফটকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অবয়বের সঙ্গে সাথী হয়ে থাকবে। আমরা এটিকে সংরক্ষণ করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্য আছে যা আজ পরিস্ফুট হল।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল ঢাকাকে তার ঐতিহ্যের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবো ও নতুন প্রজন্মের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারবো আজ সেটি আমরা বাস্তবায়ন কর‍তে পেরেছি। আজ শুধু ঢাকা না পুরো দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর সামনে মোগল ঐতিহ্যের এই ঐতিহাসিক স্থাপনা উদ্বোধন করতে পারলাম। কাজটি অত্যন্ত দুরূহ ছিল। কারণ কাজটি করতে যেয়ে এত সময় ও কষ্ট করতে কেউ রাজি হয়নি। এটি সম্ভব হয়েছে পরম শ্রদ্ধেয় ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের জন্য। তিনি শুধু ঢাকা নয়, পুরো দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করেন।

আমাদের পাঁচটি নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ঐতিহ্যের, সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা। ঢাকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে যেগুলো আমাদের নজরের বাইরে চলে গিয়েছিল সেগুলো আমরা পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছি। আজ আমরা এমন একটি স্থাপনা উদ্ধার করতে পেরে আমার প্রথম সন্তানের জন্মমুহূর্তের মতো আনন্দ লাগছে। মীর জুমলার কামানটি হারিয়ে গিয়েছিল যা আজ আমরা পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছি সেটিও আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের।

ঢাকা গেটের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব উল্লেখ করে তাপস বলেন, চারশ বছরের পুরনো এই ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের সম্পদ যা বিশ্বের অনেক উন্নত নগরীতেও পাওয়া যাবে না। তারা হয়ত সাগর ভরাট করে স্থাপনা বানাচ্ছে কিন্তু শত বছর আগের ঐতিহ্য তাদের নাই। চারশ বছর আগের এই কামান আরও চারশ বছর পরও মানুষ দেখতে পারবে।

ঢাকা গেটের পাশাপাশি লালকুঠি ও নর্থব্রুক হল সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লালকুঠির জন্য এক একর জমি আমরা উদ্ধার করেছি। সংস্কার কাজ চলছে দ্রুতই এগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এছাড়া বিআইডাব্লিউটিএ’র পল্টুনের জন্য নদী থেকে শহর দেখা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিআইডাব্লিটিএ কে অনুরোধ করেছি ঘাটের পল্টুন সরিয়ে ফেলতে। সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন নাসিমের কাছেও আমার অনুরোধ অতিদ্রুত যেন পল্টুন সরিয়ে নদীর অববাহিকা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এছাড়াও রুপলাল হাউজও সংস্কারের জন্য হস্তান্তর চেয়েছেন বলে জানান মেয়র। আগামী বছর আদি বুড়িগঙ্গায় নৌকা বাইচ আয়োজনের আশাবাদও ব্যক্ত করেন।

ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন নাসিম বলেন, ঢাকার মেয়রের জন্য কাজটি স্বাভাবিক হলেও নানা কারণে হয়নি। আমাদের বর্তমান মেয়র সেই স্বাভাবিক কাজটিই দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে করেছেন। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা এমন আরও যেসব ঐতিহ্যবাহী স্থান ও স্থাপনা আছে সেগুলোও সংরক্ষণ করবেন।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি তিনি ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণে এবং হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে একইরকম পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ঢাকা গেট ঢাকার ঐতিহাসিক সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি নগরবাসীকে একটি খোলা জায়গা দেবে। এতদিন এই স্থাপত্য অযত্নে ছিল, এখন এটি সংস্কার করায় সুন্দর লাগছে। এটি দেখে আমাদের ইতিহাস জানার ইচ্ছে হচ্ছে।

মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, গত ৫০ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য। ইতিহাস ঐতিহ্য যদি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত না হয় তাহলে শহরের প্রাণ থাকে না। আমরা কখনো কোনো মেয়রকে এই বিষয়ে রাজি করাতে পারিনি। তারা সকলেই নির্মাণের দিকে আগ্রহী ছিলেন। বর্তমান মেয়র ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা করার একটি বড় প্রকল্প নিয়েছেন। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এখন ঢাকা গেট ও নর্থব্রুক গেট সংরক্ষণের কাজ চলছে। কাজটি শেষ হলে সেখানে একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি হবে। মানুষ তা দেখতে যাবে। ঢাকা গেট দেখে ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।

স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ বলেন, যেটা আগে ছিল, ওটাকেই আমরা রিস্টোরেশন (পুনরুজ্জীবন) করেছি। কিছু জিনিস ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলো নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ফটকের ওপর কলসের মতো যে জিনিসগুলো, একটা কর্নারে বুরুজ ভাঙা ছিল, সেগুলো আমরা সংস্কার করেছি। তার মানে আদি যে ডিজাইনটা ছিল, সেটাকেই আবার নতুনভাবে করা হয়েছে। তবে সেখানে নতুন করে বসার স্থান এবং মীর জুমলার ‘বিবি মরিয়ম’ কামানটা সংযোজন করা হয়েছে।
উদ্বোধনের পরই ঐতিহাসিক এই স্থাপনা দেখতে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা।

উল্লেখ্য, ইতিহাস অনুযায়ী ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা গেট নির্মাণ করেন মীর জুমলা। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মীর জুমলা ছিলেন বাংলার সুবাদার।

বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশে ব্যবহার হতো এই তোরণ। সে সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেইট’। পরে কখনও ‘ময়মনসিংহ গেইট’, কখনও ‘ঢাকা গেইট’ এবং অনেক পরে নাম হয় ‘রমনা গেইট’। রমনায় প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হতো বলে সাধারণ মানুষের কাছে ফটকটি এ নাম পায়।

এ ফটকের পশ্চিম অংশটি পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ভবনের পাশে। এখন সেখানে মাথার ওপর মেট্রো রেল হওয়ায় গেট অনেকটাই আড়ালে পড়ে গেছে। উত্তরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিন নেতার সমাধির প্রবেশ পথের অংশ। দক্ষিণে পড়েছে দোয়েল চত্বর।

সারাবাংলা/আরএফ/এনইউ

টপ নিউজ ঢাকা গেট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর