Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলায় গাছি ও ভোক্তাদের উচ্ছ্বাস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:২৮

যশোর: যশোরের চৌগাছা উপজেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে খেজুর গুড়ের মেলা। গাছি ও ভোক্তাকে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে তিনদিনের এই মেলা।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে গুড় মেলার উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার।

বহু বছর ধরে যশোরের সুনামের সঙ্গে মিশে আছে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য। প্রচলিত আছে, ‘যশোরের যশ খেজুরের রস’। এই কথাটি দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত আছে। যশোরের খেজুর রস-গুড়ের ঐতিহ্য কয়েকশ’ বছরের। সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশেও। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে এই ঐতিহ্য। তাই খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রেখে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। দ্বিতীয় বারের মত যশোরের চৌগাছায় আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনের খেজুর গুড় মেলা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. মোস্তানিছুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস, চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী, কলামিস্ট মিজানুর রহমান প্রমুখ। পরে অতিথিরা আলোচনা সভায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে স্টল পরিদর্শন করেন অতিথিরা।

গুড় মেলায় চৌগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভার একটি করে স্টল বরাদ্দ রাখা হয়। এ ছাড়াও মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকারের পিঠার দুটি স্টল দেয়। স্কাউটসের সদস্যরা মেলায় রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রির ব্যবস্থা করেন।

বিজ্ঞাপন

মেলায় অংশগ্রহণকারী উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর-চাকলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিনি ১২০ কেজি গুড় নিয়ে এসেছিলেন। মেলায় ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রিও করেছেন।

পাতিবিলা ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের গাছি জামাত আলী বলেন, ‘আমি ৬০ বছর ধরে গাছ কাটি (রস সংগ্রহ করি)। রস গুড় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি।’

মেলায় অংশ নেওয়া সিংহঝুলি ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের গাছি আনিছুর রহমান বলেন, ‘খেজুর গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। খেজুর গুড় খাওয়ায় মানুষ বাদ দিয়েছে। কিন্তু এই খেজুর গুড় হতে পারত চিনির বিকল্প খাদ্য। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। প্রত্যেকেই যদি খেজুর গাজ লাগায় (রোপণ) করি, তাহলে সবার বাড়ি বাড়ি গুড় হবে। চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুর গুড় ব্যবহার করতে পারব। গুড় স্বাস্থ্যসম্মত, আর সাদা চিনি বিষ। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’

মেলায় আসা দর্শনার্থী আজিজুর রহমান বলেন, ‘দুই বছর ধরে চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা হচ্ছে। এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। খেজুর রস ও গুড়ভিত্তিক অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। একই সাথে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম সচেতন হচ্ছে।’

মেলা আসা দর্শনার্থী শাহানুর আলম উজ্জ্বল বলেন, ‘এই মেলা তখন সার্থক হবে, যখন আমরা খেজুর গাছ রোপণ, পরিচর্যা করব। একই সাথে খেজুর রস গুড় উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের পৃষ্ঠপোষকতা করব। তাহলেই গুড় মেলা সফল হবে। এক সময় আমরা খেজুর গুড়ের ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম। নতুন করে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটি সফল হলে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য রক্ষা হবে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হবে।’

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, ‘খেজুর গাছের মালিক কিংবা গাছিরা এক সময় হতাশ হয়ে গাছ কেটে ফেলতেন। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ বেচে দিতেন। অনেকে খড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। খেজুর গুড়ের শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা গাছিদের পাশে আছি, এটি জানান দেওয়ার জন্যই মেলা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘গুড় মেলা চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় আয়োজন হবে। সারাদেশের মানুষ এই মেলায় আসবে গুড় কিনতে, দেখতে। এমনটিই স্বপ্ন দেখি আমি।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘যশোরের খেজুর রস গুড় আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। এই ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করার জন্য উপজেলা প্রশাসন গুড় মেলার আয়োজন করেছে। মেলার মাধ্যমে ঐতিহ্যটাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারাদেশের মানুষের মাঝে যশোরের গুড়ের ঐতিহ্য ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ আমরা করছি।’

সারাবাংলা/একে

গুড়ের মেলা টপ নিউজ যশোর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর