Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাড়াশে ট্রিপল মার্ডারে আতঙ্ক, যেসব ক্লু নিয়ে কাজ করছে পুলিশ

রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪১

সিরাজগঞ্জ: জেলার তাড়াশ উপজেলার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কোষাধ্যক্ষ বিকাশ সরকার ও তার স্ত্রী-মেয়ের হত্যার ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে তাড়াশ পৌর শহর। গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার দেশিগ্রাম শিব মন্দিরে মিটিং শেষে লোক আসছে বলে দ্রুত বাসায় চলে যান বিকাশ। এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। অবশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) নিজ বাসা থেকে পরিবারের তিনজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

এতে করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সেই দিন কারা বিকাশের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন? এছাড়া বিকাশের ফ্ল্যাটের পাশেই তার ভাই প্রকাশ সরকারের ফ্ল্যাটের দরজা। পাশে ভাইয়ের বাসায় এতো বড় ঘটনা ঘটে গেল তারা কিছু বুঝতে পারেননি। এই ধনী পরিবারের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। তাই রহস্যজনক এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে বেশ কয়েকটি ক্লু নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত বিকাশের শালা (স্ত্রীর ভাই) বাদি হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ শহিদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যা ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।

গত শনিবার বিকেলে শিব মন্দিরে মিটিং করে বাড়িতে লোকজন আসছে বলে দ্রুত চলে আসার পর থেকে বিকাশ ও তার পরিবারের কারও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই দিন রাতেই তাদের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও তাড়াশ উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি তপন কুমার গোস্বামী বলেন, ‘গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে আমাকে ফোন করেন বিকাশের ভগ্নিপতি (বোন জামাই) চন্ডী দাস। বলেন, দু’দিন হলো ওদের ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না, আবার তাদের সম্পর্কে কেউ কিছু বলতেও পারছে না। আমার ছেলেরা প্রাইভেটকার নিয়ে তাড়াশে গিয়েছে। তুমি একটু তাদের সঙ্গে গিয়ে দেখত কি হয়েছে। পরে আমি তাড়াশ উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে যাই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘তখন প্রায় রাত দেড়টা বাজে। বাড়ির তিন তলায় গিয়ে দেখি তাদের ফ্ল্যাটের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগানো। পরে বিকাশের নম্বরে ফোনে দিলে ভিতরে তার মোবাইলে রিং বাজতে শুনি। তখন আমরা সেখান থেকে থানায় গিয়ে বিষয়টি জানাই। পরে পুলিশ এসে দরজার তালা ভাঙতেই দেখি ভিতরে তিনজনের লাশ পড়ে আছে।’

আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে মা-বাবা ও মেয়েকে গলাকেটে হত্যা

তপন গোস্বামী বলেন, ‘দরজা খোলার পরে প্রথম ঘরেই দেখি বিকাশের গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে। পাশের ঘরে গিয়ে দেখি নিচে বিকাশের স্ত্রীর ও বিছানায় তার মেয়ের মরদেহ পড়ে আছে। তাদের দু’জনেরও গলাকাটা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘গত শনিবার বিকেলে আমরা সবাই উপজেলার দেশিগ্রামে গিয়েছিলাম শিবমন্দিরের কমিটি গঠন নিয়ে একটা মিটিংয়ে। হঠাৎ বিকাশ বলল, তার কাছে কিছু লোকজন আসছে, তাকে দ্রুত বাড়িতে যেতে হবে। বলেই ৫টার দিকে সে চলে আসে। এরপর থেকে তাকে আর দেখাও যায়নি, মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘বিকাশ ধনী ব্যাক্তি হলেও সে সাধারণ জীবন-যাপন করত ও ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিল। তার ফ্ল্যাটের ৩-৪ হাত পাশেই তার ভাই প্রকাশের ফ্ল্যাটের দরজা। ৩টা হত্যাকাণ্ড হয়ে গেল কিন্তু তারা বুঝলেনই না, এটা নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। এছাড়াও এঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে গোটা তাড়াশ বাজার। তাড়াশের হিন্দুরাও খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া সার্কেলের (উল্লাপাড়া-তাড়াশ) সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত কুমার সূত্রধর বলেন, একটা হত্যাকাণ্ডের পরে পুলিশের অনেক বিভাগের অনেক কাজ থাকে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফুট প্রিন্ট, রক্ত ও ডিএনএ নমুনা ছাড়াও নানান রকমের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এরপর মরদেহগুলো উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শহিদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি গত শনিবার রাতেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। বিকাশের শরীরে যে পোশাক ছিল তাতে মনে হচ্ছে, তিনি বাইরে থেকে বাসায় এসেছিলেন। এ ঘটনায় নিহত বিকাশের স্ত্রীর বড় ভাই সুকমল সরকার বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার না হলেও নানান বিষয়ে পর্যালোচনা করে কিছু ক্লু নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।’

সিরাজগঞ্জ শহিদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নিহত তিনজনের মরদেহ মর্গে এসে পৌঁছেছে। বুধবার সকালে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে দুপুরের দিকে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।’

তাড়াশ পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এমন ঘটনা তাড়াশকে পুরোপুরি স্তব্ধ করে দিয়েছে। তাড়াশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। বিকাশ খুবই ভালো ছেলে ছিল। আল্লাহ তাকে অনেক ধন-সম্পদ দিয়েছে। কিন্তু এগুলো ভোগ করার কেউ রইল না, পুরো পরিবারকে মেরে ফেলা হলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মূল ঘটনা উদঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবে বলে আশা করি।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিকাশের বড়ভাই তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকাশ সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, তাড়াশ পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা এলাকার কালিচরণ সরকারের ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) ও মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষিকে (১৫) গলাকেটে হত্যা করা হয়। স্বজনরা দু’দিন যাবৎ তাদের খোঁজ না পেয়ে খবর দিলে পুলিশ গত সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তালা ভেঙে মেঝেতে ও বিছানায় তাদের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পায়। এ ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা ছাড়াও পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সারাবাংলা/আরএ/এনএস

তাড়াশ উপজেলা তাড়াশে ট্রিপল মার্ডার সিরাজগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর