Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অ্যান্টার্কটিকার রহস্য সমাধান করবে ড্রোন, আঁকা হবে মানচিত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৯

বিজ্ঞানী টম জর্ডান। তিনি নতুন ড্রোন দিয়ে অ্যান্টার্কটিকার তথ্য সংগ্রহ করবেন

পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর রহস্যময় মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ এবং ইউরোপের চেয়ে ৪০ শতাংশ বড়। বিশাল এই মহাদেশের বড় অংশই অজানা। মহাদেশটির আবহাওয়ার কারণে বিজ্ঞানীদের পা পড়েনি বড় অঞ্চলজুড়ে। বিশাল বিশাল বরফস্তরের নিচে মাঠির আকার-প্রকৃতি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা আরও কম। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও খুব একটা ফল পাওয়া যায়নি। কারণ, মহাদেশটির বিরূপ আবহাওয়ার কারণে প্রযুক্তি ব্যবহারই কঠিন।

বিজ্ঞাপন

পৃথিবীর বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। এর মধ্যে রয়েছে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মেরু অঞ্চলের বিশাল বরফস্তর গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশের বড় অংশই সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ বুঝতে উদ্যোগী হয়েছেন। এবার এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষভাবে তৈরি ড্রোন।

অ্যান্টার্কটিকায় ড্রোন দিয়ে পরীক্ষা চালাবে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের একটি দল। বিশেষজ্ঞদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পূর্বাভাস দিতেই তাদের এই আয়োজন। ড্রোনটি  অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের এমন অঞ্চলগুলোর তথ্য সংগ্রহ করবে যেখানে গবেষকদের সশরীরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। অভিযানটি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রওয়ানা দেবে অ্যান্টার্কটিকার উদ্দেশে।

এই ড্রোনটি দিয়ে অ্যান্টার্কটিকার রহস্য সামাধান করবেন বিজ্ঞানীরা

প্রথম অভিযানে বরফ স্তরের নিচের পর্বতগুলো নিয়ে জরিপ করবে গবেষকদের ড্রোনটি। এর মাধ্যমে বরফ কত দ্রুত গলছে এবং তার ফলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি সম্পর্কে আরও নিখুঁত পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।

গবেষকরা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশটি আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই অনুভব করছেন। তবে প্রবল বাতাস, হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা এবং আকস্মিক ঝড়, সেইসঙ্গে দীর্ঘকালীন অন্ধকারের কারণে মানবচালিতে বিমান ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এমন আবহাওয়া ও পরিবেশে গবেষণা চালাতে গিয়ে প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে বিমান, এতে ভণ্ডুল হয়ে যায় পুরো অভিযান।

বিজ্ঞাপন

ইঞ্জিনিয়ার রেবেকা টুমি। তিনি অ্যান্টার্কটিকায় ড্রোনটি পরিচালনা করবেন

তাই মেরু অঞ্চলে গবেষণার জন্য বিশেষভাবে ড্রোন তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে নামক সংস্থাটি। তারা যুক্তরাজ্যের উইন্ড্রাসার নামের একটি কোম্পানি দিয়ে একটি বিশেষ ড্রোন তৈরি করিয়েছে। এই ড্রোনের একটি বিশেষত্ব হলো— কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হলে সহজেই তা মেরামত করা যায়।

ড্রোনটি অ্যান্টার্কটিকায় পাঠানোর আগে উত্তর ওয়েলসের বিরূপ শীতল আবহাওয়া পরীক্ষা করা হয়েছে। অনুশীলনের সময় এয়ারফিল্ডে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল বায়ুপ্রবাহ তৈরি করা হয়। পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার রেবেকা টুমি বিবিসিকে জানান, অ্যান্টার্কটিকায় গবেষণার সময় পাইলটদের নিরাপত্তা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।মানববিহীন ড্রোনটি প্রবল আবহাওয়ায় উড়তে পারে।

ড্রোনটি অ্যান্টার্কটিকায় যে তথ্য সংগ্রহ করবে তা ক্যামব্রিজ ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে সদর দফতরে পাঠানো হবে। এই সংস্থাটি তথ্য নিয়ে গবেষণা করবে। বিজ্ঞানী টম জর্ডান বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, কিছু অংশ বিইডিএমএপি২ নামক একটি মডেলে ব্যবহার করা হবে। এই মডেলটির মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফের নিচে ভূমির জটিল আকৃতি, প্রকৃতি তৈরি করে থাকেন বিজ্ঞানীরা। এটি মূলত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের একটি মানচিত্র।

বিইডিএমএপি২ মানচিত্রটিতে অ্যান্টার্কটিকার বড় অংশই এখনও যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হলো এসব অঞ্চলের কোনো তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। বিজ্ঞানী টম জর্ডান মানচিত্রটির উপর আঙুল রেখে বিবিসির রিপোর্টারকে বলেন, ‘আপনি এখানে এবং এখানের বরফের নিচে পর্বতশৃঙ্গ দেখতে পাচ্ছেন। পুরো এলাকাজুড়েই কী এরকম আছে? এই অংশটি কী সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে? আমি আসলে জানি না। এই জরিপ কাজটি এ জন্যই গুরুত্বপূর্ণ যে, মানচিত্রজুড়ে অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে।’

অ্যান্টার্কটিকার বিস্তীর্ণ বরফঢাকা অঞ্চলে বিশাল বিশাল পর্বতশ্রেণী রয়েছে। কিছু পর্বতের আকার আল্পস পর্বতের মতো। রয়েছে বড় বড় পরিখা এবং উপত্যকা। কিছু এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে। পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার কারণে কত দ্রুত বরফ গলবে তা জানতে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে ভালোভাবে বুঝতে হবে বিজ্ঞানীদের।

যদি কোনো বরফের চাদর উষ্ণ পানির সংস্পর্শে আসে তাহলে তা দ্রুত গলবে। কিন্তু যদি জটিল পর্বতগুলো উষ্ণ পানির প্রবাহ আটকে দেয় তাহলে বরফ গলার গতি ধীর হয়ে যাবে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের বুঝতে হবে কোন এলাকায় কী অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানকার ভূমির প্রকৃতি এবং আকার কেমন।

বিজ্ঞানীদের প্রথম পরীক্ষা ড্রোনের রাডার থেকে ফুচস পাইডমন্ট নামক একটি বিশাল বরফের চাইয়ে বেটার তরঙ্গ পাঠানো হবে। কিছু তরঙ্গ বরফ স্তরে ভেদ করে নিচের মাটি পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসবে। ড্রোনটি এই প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে বরফের নিচে ভূমির একটি আকৃতি আঁকবে।

শুধু ভূমির চিত্র তৈরি নয়, ড্রোন কাজে লাগিয়ে ওই অঞ্চলের সামুদ্রিক জীব ক্রিল নিয়েও বিস্তারিত জরিপ চালানো হবে। এই জীবটি সামুদ্রিক কয়েকশ জীবের অন্যতম খাদ্য। ফলে ক্রিল সামুদ্রিক খাদ্যশৃংখলের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ক্রিল নিয়ে জরিপ চালালে সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খল সম্পর্কে আরও নিখুঁত ধারণা পাবেন বিজ্ঞানীরা।

সারাবাংলা/আইই

অ্যান্টার্কটিকা টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গুলশানে দুইজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫

ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৩

সম্পর্কিত খবর