৮ মেগা প্রকল্পে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৩
ঢাকা: সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা ৮ মেগা প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৯০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শুরু থেকে গত ডিসেম্বর মাস মাস পর্যন্ত এসব প্রকল্পের গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
এরইমধ্যে পদ্মা সেতুর শতভাগ কাজ শেষ হলেও প্রকল্প চলছে। তবে মেট্রোরেল (আংশিক) উদ্বোধন হয়েছে। কিন্তু পুরো প্রকল্পও প্রায় শেষের পথে। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তৈরি করা বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকল্পগুলো হলো— পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প,পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আমাদের কাজের মূল্যায়ন করেছে। সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা পাওয়ায় উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে অগ্রগতি হবেই। জনগণ দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চায়। ফলে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করেছে। আমরা মেগা প্রকল্প শুধু হাতেই নেইনি, বাস্তবায়নও করছি।’
পদ্মা সেতু
গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতুর। সেতুর বাস্তব অগ্রগতিও হয়েছে শতভাগ। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৯১১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১০০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে মোট ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
মেট্রোরেল
মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত সময়ে জনগণের চলাচলের জন্য খুলে গেছে এ অংশটি। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে পরবর্তী সময়ে মতিঝিল পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়। এখন নিয়মিত উত্তরা-মতিঝিল ট্রেন চলাচল করছে। শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৩৪০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ার সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটির মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় এই ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটির শুরু থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কোভিড মহামারীতে সঞ্চালন লাইনের কাজ দেরি হওয়ায় কেন্দ্রটির উৎপাদন পিছিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ রূপপুর প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে পারে। সেই সঙ্গে বর্তমান ঋণ পরিশোধের জটিলতাও এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৮৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ। এ ছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত কার্যক্রম
মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৮৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৭১ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশ।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প
এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৫১ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৭ দশমিক ০৫ শতাংশ।
পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর
এ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৭৭১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনদুম রেল পথ নির্মাণ
দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৪০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ ছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯২ শতাংশ।
সারাবাংলা/জেজে/একে
আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মাসেতু মাতারবাড়ি প্রকল্প মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল