এবারও ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ খাদ্য বিভাগ, আড়াই মাসে সংগ্রহ ৭%
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৯
রাজশাহী: রাজশাহী বিভাগে এবারও ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে খাদ্য বিভাগ। আড়াই মাসে ধান ও চাল সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। কৃষকরা বলছেন, খাদ্য বিভাগের চেয়ে বাজারেই বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও বলছেন, বাজারে ধান-চালের দাম সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি। এ কারণে কৃষক সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেন না।
এ পরিস্থিতিতে ধান-চাল সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা প্রায় শেষ হয়ে এলেও লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। আর সপ্তাহ তিনেক সময় হাতে রয়েছে। কিন্তু প্রায় ১০ সপ্তাহে যেখানে লক্ষ্যমাত্রার ৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে, সেখানে বাকি তিন সপ্তাহে আর খুব বেশি অগ্রগতির আশা নেই বলেই মেনে নিচ্ছে খাদ্য বিভাগ।
কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় বাজারে ধান ও চালের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। ফলে বাজারে বিক্রি করলে কৃষকরা বেশি দাম পাচ্ছেন। এ কারণেই কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান ও চাল দিতে নারাজ। এর বাইরে চুক্তিবদ্ধ অনেক মিলারও ধান ও চাল সরবরাহ করেননি সরকারি গুদামে।
খাদ্য বিভাগ বলছে, এ মৌসুমে আমন ৩০ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৪ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল কিনছে সরকার। অন্যদিকে খোলা বাজারে প্রতি কেজি ধান ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ধান-চাল সংগ্রহের এই কার্যক্রম শুরু হয়। ধান-চাল সংগ্রহ শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্র বলছে, এই সময়ের মধ্যে বিভাগের কৃষকদের কাছ থেকে ৩১ হাজার ৫৫৬ মেট্রিক টন আমন ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে এক লাখ ১৩ হাজার ৭৫১ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। আগের বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৪৫ হাজার ৬৭৬ টন ও এক লাখ পাঁচ হাজার ২৩৭ টন।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য বলছে, গত বছরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। আর এ বছর এখন পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় গত আড়াই মাসে মাত্র দুই হাজার ৩৯০ টন ধান ও ৯২ হাজার ৯৬৩ টন চাল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে কর্তৃপক্ষ, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭ শতাংশ।
কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরকারি গুদামে ধান-চাল দিলে তাদের ক্ষতি হবে। তাছাড়া সরকারি খাদ্য গুদামে দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় কৃষকরা সরাসরি গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে ঝামেলার মুখেও পড়েন।
কৃষকদের অভিযোগ, খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাসহ খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা নিজেদের লাভের কারণে এসব দালাল-ফড়িয়াকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কৃষকরা ধান নিয়ে গেলে গুদাম কর্মকর্তারা শর্ত পূরণ না হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ধান ফিরিয়ে দেন। আবার কৃষককে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মুখে পড়তে হয়। কৃষকরা এসব ঝামেলা এড়াতে সরকারি গুদামে ধান দিতে অনীহা দেখিয়ে আসছেন গত কয়েক বছর ধরে।
তানোর উপজেলার রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক বিজয়ী কৃষক নুর মোহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি দাম পাচ্ছি। ধান ও চাল সরবরাহ করতে অন্যান্য অসুবিধাও রয়েছে। সরকার নির্ধারিত তাপমাত্রায় ধান শুকিয়ে ধুলোবালি পরিষ্কার করে তারপর পণ্য গুদামে পৌঁছে দিতে হয়। এগুলো অনেক ঝামেলার কাজ। খোলা বাজারে বিক্রি করতে গেলে এসব কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না।’
বাগমারা উপজেলার কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে আমরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছি। গুদামে ধান দিলে টাকা পেতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। আবার অনেক সময় বিভিন্ন অজুহাতে টাকা কেটে রাখে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল মালিক বলেন, ধান থেকে চাল উৎপাদন করতে প্রতি কেজিতে কৃষকদের খরচ হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। অথচ সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ৪৪ টাকা। এ কারণে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে চাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে রাজশাহীর সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ জাহেদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ধান-চাল সংগ্রহের এখনো সময় আছে। আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী। এ বছর সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তার চেয়ে স্থানীয় বাজারে কৃষকেরা তুলনামূলক বেশি দাম পাচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষকদের সঙ্গে আমাদের কোনো চুক্তি নেই। তাই তাদের অনীহা আছে ধান সরবরাহে। কৃষকরা তাদের পণ্য সরবরাহ না করাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।
সারাবাংলা/টিআর
খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় খাদ্য বিভাগ ধান-চাল সংগ্রহ ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম রাজশাহী