সপ্তাহ না ঘুরতেই জমে উঠেছে বইমেলা, দারুণ কিছুর আশায় প্রকাশকরা
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:২৪
ঢাকা: অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসংলগ্ন গেট দিয়ে বইমেলায় প্রবেশের সময় চোখ আটকে গেল সাদা কাপড়ে মোড়ানো বুথটিতে, যা গতকাল পর্যন্ত কটকটে লাল আর সবুজের মিশেলে ‘জোকার’ রঙের ছিল! রুচিহীন সেই কাজটির জন্য বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলামকে ‘জিজ্ঞাসার কাঠগাড়ায়’ দাঁড় করালে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সরিয়ে ফেলার।
সাধারণত, ‘মানুষ পণ করে পণ ভাঙিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার জন্য’। কিন্তু সে পথে হাটেননি কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি কথা রেখেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দৃষ্টিকটূ সেই বুথের লাল-সবুজ কাপড় সরিয়ে সাদা কাপড় মুড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে রুচিসম্মত চেহারা পেয়েছে বুথটি।
শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসংলগ্ন গেট নয়, টিএসসিসংলগ্ন গেট এবং ‘লেখক বলছি’ মঞ্চের চেহারাতেও পরিবর্তন এনেছেন তিনি। সেখানেও লাল-সবুজ সরিয়ে সফেদ রঙের কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বেশ মার্জিত চেহারা পেয়েছে মঞ্চটি।
বইমেলার সৌন্দর্য ফেরাতে রাতারাতি এই অবকাঠামোগত পরিবর্তন ইতিবাচক বার্তা দেয় বৈকি! বইপ্রেমী মানুষের আবেগ-অনুভূতির প্রতি বাংলা একাডেমির এই শ্রদ্ধাবোধ হয়তো অনেক কিছু ভুলিয়ে দেবে। একাডেমি প্রাঙ্গণের তিন প্রবেশপথে তোরণের জায়গা ছোট আকৃতির দুটি করে ডিসপ্লে বোর্ড, দোয়েল চত্বর ও টিএসসি চত্বরে নামকাওয়াস্তে ‘লিলিপুট’ আকৃতির কয়েকটি ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করে যে দায়সারা কাজটি তারা করেছে, সেটিও হয়তো ভুলে যাবে মানুষ।
বাইরে এ ধরনের অনেক ‘না পাওয়ার গল্প’ বা ‘না থাকার গল্প’ থাকলেও ধীরে ধীরে জমে উঠছে বইমেলা। মেলার ষষ্ঠ সন্ধ্যায় পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জলাধার পাশে সারি বেঁধে বসে গল্প-আড্ডা, খুনশুটির পাশাপাশি স্টল-প্যাভিলিয়নে বইপত্র টোকাটুকির আরামদায়ক দৃশ্য ভালোই চোখে পড়ল। বই না কিনলেও পাতা উল্টে ঘ্রাণ নেওয়ার লোক প্রচুর এসেছে মেলায়। আর এসব দেখেই এবারের বইমেলা নিয়ে দারুণ কিছু আশা করছেন প্রকাশকরা।
জার্নিম্যান বুকস্-এর প্যাভিলিয়নে দাঁড়িয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ, গবেষক ও পণ্ডিত ঢাকা জাদুঘরের (বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর) প্রতিষ্ঠাতা নলিনীকান্ত ভট্টশালীর ‘প্রাথমিক যুগের স্বাধীন সুলতানদের মুদ্রা ও কালক্রম’ বইটি নেড়েচেড়ে দেখে মনে হলো— ইংরেজি ভাষায় লেখা নলিনীকান্ত ভট্টশালীর ‘Coins And Chronology of the Early Independent Sultans of Bengal’ বইটির বাংলা অনুবাদ জরুরি ছিল। বর্তমানে বাংলার ও আব্বাসীয় মুদ্রার গবেষণায় রত রেজাউল করিম সেই জরুরি কাজটি করে বাংলার মুদ্রাতত্ত্ব ইতিহাসের গবেষকদের ও সাধারণ পাঠকদের ঋণে আবদ্ধ করেছেন। আর জার্নিম্যান বুকস্ গুরুত্বপূর্ণ এই বইটি প্রকাশ করে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।
বইমেলার ৬৩৫টি স্টল এবং ৩৭টি প্যাভিলিয়ন ঘুরলে এমন অনেক রত্নভান্ডারের খোঁজ হয়তো মিলবে। আর সে কারণেই হয়তো দেশের নানা প্রান্ত থেকে বইপ্রেমীরা মেলায় ছুটে আসছেন। ফলে ষষ্ঠ দিনেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাঙালির প্রাণের মেলা।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কথা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু হাসনাত অনিকের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বইমেলা উপলক্ষেই ঢাকায় আসা। আজ শুধু ঘুরে-ফিরে দেখলাম। কাল-পরশু আবার মেলায় আসব। পছন্দের বইগুলো কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরব।’
অনিকের বন্ধু ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র মো. মাহির বিশ্বাসও বইমেলায় এসেছিলেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সাহিত্যের ছাত্র হওয়ার কারণে বই পড়ার তাগিদ ভেতর থেকেই অনুভব করি। আজ বই দেখে গেলাম। আবার যখন আসব, তখন কিনব।’
তবে বইমেলা থেকে দর্শনার্থীরা খালি হাতে ফিরলেও হতাশ নন প্রকাশকরা। তারা বলছেন, গত তিন-চার বছরের চেয়ে এবার বইমেলায় দারুণ কিছু হবে। করোনা নেই, রাজনৈতিক অস্থিরতাও নেই। দেশে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। বইমেলা শুরুর প্রথম দুদিন বৃষ্টি হওয়ায় ধুলাবালিও কম। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে। সুতরাং বইমেলা নিয়ে আশাবাদী সবাই।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) জেনারেল ম্যানেজার এ কে এম কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারি, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে গত তিনটি বইমেলা আমরা পার করে এসেছি। এবার সব কিছু আমাদের অনুকূলে। মেলার পরিবেশও চমৎকার। আশা করছি এবার দারুণ কিছু হবে। আগামী সপ্তাহে বইমেলা পুরোপুরি জমে উঠবে।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ম্যানেজার আমজাদ হোসেন কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরুটা ভালোই হয়েছে বলা যায়। আজ তো ষষ্ঠ দিন। তারপরও মেলায় প্রচুর দর্শনার্থী এসেছেন। কেউ কেউ বইও কিনছেন। আশা করছি অন্যবারের চেয়ে এবারের মেলাটা ভালো যাবে।’
প্রথমা প্রকাশনের ম্যানেজার জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ষষ্ঠ দিন হিসেবে পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি এবং বিক্রি যা হয়েছে, সেটাকে খারাপ বলা যাচ্ছে না। ভালোই বলতে হবে। আশা করি সামনের দিনগুলো আরও ভালো যাবে।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
অমর একুশে বইমেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ বইমেলা বইমেলা ২০২৪ বাংলা একাডেমি