চট্টগ্রামে বইমেলার পর্দা উঠছে শুক্রবার, চলছে জোর প্রস্তুতি
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সিআরবিতে অমর একুশের বইমেলার পর্দা উঠছে শুক্রবার। এবারের মেলায় মোট স্টল থাকছে ১৫৫টি। স্টল স্থাপনসহ বইমেলার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতি বছরের মতো এবারও বইমেলার আয়োজন করেছে।
বুধবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বইমেলার সার্বিক দিক তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, শুক্রবার শুরু হওয়া বইমেলা চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।
সিআরবির শিরিষতলা প্রাঙ্গন জুড়ে ৪৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৯২টি প্রকাশনা সংস্থার মোট ১৫৫টি স্টল এতে থাকছে। এর মধ্যে ৭৮টি ডবল স্টল ও সিঙ্গেল স্টল ৭৭টি। এছাড়াও থাকছে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু কর্নার, লেখক আড্ডাসহ নারী কর্নার ও সেলফি কর্নার।
মেলায় প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হবে। এছাড়া জাতীয় জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে।
বইমেলা আয়োজনে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ঢাকা থেকে আসা ১০টি প্রকাশনা সংস্থার প্রতিনিধিরা স্টল বরাদ্দ না পাওয়ার অভিযোগ করেন মেয়রের কাছে। মেয়র তাৎক্ষণিকভাবে তাদের জন্য স্টল বরাদ্দের নির্দেশ দেন।
মেয়র রেজাউল বলেন, ‘মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। খোলা জায়গা প্রচুর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য চারদিকে টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। সিসি ক্যামরা ও পুলিশ প্রহরা থাকবে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব সিকিউরিটিসহ নিরাপত্তা বলয় থাকবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০১৯ সাল থেকে বড় পরিসরে এ বইমেলার আয়োজন করে আসছে। চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদসহ আরও বিভিন্ন নাগরিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এতে সহযোগিতা দেয়। প্রতিবছর নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গনে বইমেলার আয়োজন করা হলেও এবার জেলা প্রশাসনের আপত্তিতে সেখানে হচ্ছে না। এর পরিবর্তে সিটি করপোরেশন এবার সিআরবিতে বইমেলার আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, খেলার মাঠে কোনো ধরনের মেলা করতে না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এজন্য গত ডিসেম্বরে আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলাও হয়নি। তবে এর মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পলোগ্রাউন্ড মাঠে বাণিজ্যমেলা আয়োজনের জন্য চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সকে অনুমতি দেয়ায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
প্রতিবছর সিআরবিতেই বইমেলা করতে চান মেয়র
বইমেলার জন্য জিমনেশিয়াম মাঠ ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়া এবং স্থায়ী ভেন্যু তৈরির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মেয়রের মতামত জানতে চাওয়া হয়।
সিআরবিতে মেলা আয়োজনের বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বাধ্য হয়ে সিআরবিতে এসেছি। সিআরবি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান। বইমেলা শুধু একটি মেলা নয়। এখানে লেখক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতি কর্মী, শিল্পী, পেশাজীবী, শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা হয়। নানা কারণে সিআরবিতে বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মনে করি, যদি প্রতিবছর সিআরবিতে করি তাহলে তা হবে আকর্ষণীয়।’
স্থায়ী ভেন্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ জায়গা যদি সিটি করপোরেশনের হত বলতে পারতাম, প্রতি বছর মেলা এখানে হবে। কিন্তু এটা রেলের জায়গা। তবে এটা বইমেলা৷ ভালো উদ্যোগ। আশা করি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর এখানে মেলা করতে দেবে। স্থায়ী মাঠ সিটি করপোরেশনের আছে, কিন্তু দূরে। বাকলিয়াতে আমাদের স্টেডিয়াম আছে। এফআইডিসি মাঠে ১১ একর জমি আছে। কিন্তু দূরবর্তী হওয়ায় সেখানে অনেকে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
‘সিআরবি এমন এলাকা যা বইমেলার উপযুক্ত। এখানে এলে লেখক ও পাঠকরা খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে বই দেখতে পারবেন, আড্ডা দিতে পারবেন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে লেখকরা অনুপ্রাণিত হবেন। এটা এমন এলাকা যে, মেলার পরিধি বাড়লেও স্টলের ব্যাপ্তি ঘটাতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’
সংবাদ সম্মেলনে চসিকের প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, বইমেলা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ও সদস্যসচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম নীপু, সাংস্কৃতিক সংগঠক দেওয়ান মাকসুদ, কবি কামরুল হাসান বাদল, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি সাহাবউদ্দিন হাসান বাবু ও সহ-সভাপতি রেহানা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ