কৌশলে হলে ডেকে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: র্যাব
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৮
ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) হলের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাবের দাবি, ওই দম্পত্তি মামুনের পূর্ব পরিচিত। বন্ধুদের অনৈতিক আবদার মেটাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হলে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন। এর আগে, গতকাল বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে এবং ধর্ষণের সহায়তাকারী মো. মুরাদকে নওগাঁ থেকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চারজনকে আটক করে। এ ঘটনায় স্বামী বাদী হয়ে ঢাকার আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব।
তিনি আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার রাতে র্যাব-৪, র্যাব-২ এবং র্যাব-৫ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট ধর্ষণের মূলপরিকল্পনাকারী মো. মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন (৪৪) এবং নওগাঁ সদর এলাকা থেকে অন্যতম আসামি মো. মুরাদকে (২২) গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা দলবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।
র্যাবের পরিচালক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মামুন প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর যাবৎ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মামুন কক্সাবাজারের টেকনাফ থেকে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করতেন। এছাড়াও গ্রেফতার মামুন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির সুবাদে ১নং আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রদের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। এ কারণে মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতেন তিনি। অন্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবনও করতেন। মামুনের সঙ্গে ভিকটিমের স্বামীর একই এলাকায় বসবাসের কারণে ৩ থেকে ৪ বছর পূর্বে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তিনি মাঝে মধ্যে ভিকটিমের স্বামী জাহিদ মিয়া ওরফে রবিনের মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করাতেন।
তিনি আরও জানান, কিছুদিন পূর্বে মামুনের থাকার জায়গার সমস্যা হলে ভিকটিমের স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাদের বাসায় অবস্থান করবে বলে জানায়। পরবর্তীতে মামুন ভিকটিমের ভাড়া করা বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস অবস্থান করেন। এতে করে ভিকটিমের পরিবারে সঙ্গে মামুনের সখ্যতা তৈরি হয়। ঘটনার পূর্বে মোস্তাফিজুর, মামুনের নিকট অনৈতিক কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভিকটিমের স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায় মোস্তাফিজুর রহমান নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই জাবি’র হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তাই তিনি এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবেন। মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য মামুন ভিকটিমের স্বামী জাহিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মামুনের কথামতো ওইদিন সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করেন জাহিদ। পরবর্তীতে মামুন ভিকটিমের স্বামীকে তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মামুন কৌশলে ভিকটিমের স্বামীকে তাদের বাসা থেকে তার ব্যবহৃত কাপড় আনতে স্ত্রীকে ফোন দিতে বলেন। পরে স্ত্রীকে ফোন করে মামুনের ব্যবহৃত কাপড় একটি ব্যাগে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে আসতে বলেন। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ভিকটিম কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে উপস্থিত হন। ওই সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন ও মোস্তাফিজ কৌশলে মুরাদকে কাপড়ের ব্যাগসহ ভিকটিমের স্বামীকে হলের ৩১৭ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে বলেন। মুরাদ ভিকটিমের স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করেন। এ সময় মামুন ও মোস্তাফিজ ভিকটিমকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে জোড়পূর্বক পর্যায়ক্রমে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। এরপর ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেন। মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে ভিকটিমের স্বামীকেও বাসায় চলে যেতে বলেন। এরপর ভিকটিমের স্বামী ভিকটিমের নিকট থেকে দলব্ধ ধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামুন প্রায় ২০ বছর পূর্বে ঢাকার জুরাইন এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকুরি করেছিলেন। পরে আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরি করার পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাসহ কিছু ক্যাম্পাসের কিছু শিক্ষার্থীকে মাদক সরবরাহ করার ফলে তাদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয়। তিনি গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় নেমে পড়েন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে। এর আগে এসব মামলায় মামুন একাধিক বার কারাভোগ করেছেন বলে জানা যায়।
গ্রেফতার মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতেন। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি জিডি রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন।
সারাবাংলা/ইউজে/এনএস