ইবিতে ফের শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:৫৫
কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে রাতভর র্যাগিং, নগ্ন করে রড দিয়ে মারধর, পর্নগ্রাফি দেখানো ও টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাতেও অভিযুক্তরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত।
গত বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) লালন শাহ হলের গণরুম তথা ১৩৬ নম্বর কক্ষে দিবাগত মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ মিলেছে। একই কক্ষে প্রায়ই র্যাগিং হয় বলে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ও হলের অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাটি ‘ঘরোয়াভাবে সমাধান’ করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ‘বিশেষ চাপে’র মুখে প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভূক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তদের মধ্যে মুদাচ্ছির খান কাফি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এবং মোহাম্মদ সাগর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা দুজনেই ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। র্যাগিংয়ে তাদের সঙ্গে আরও অন্তত তিনজন জড়িত ছিলেন বলে ভুক্তভোগী জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দিবাগদ রাত ১২টার দিকে লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থী ‘পরিচয় পর্বে’র নাম করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ডেনে নেন। একপর্যায়ে র্যাগিং শুরু হয়। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে বলা হলে ওই শিক্ষার্থী তা করতে অস্বীকৃতি জানান। এতে তাকে রড দিয়ে মারধর করা হয়। পরে বিবস্ত্র করে টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়ার মতো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ওই অবস্থায় তাকে পর্নগ্রাফি দেখতেও বাধ্য করা হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, নাকে খত দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় সে রাতে। ভয় দেখিয়ে তিন-চার বার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনা যেন কাউকে বলা না হয়, সে জন্যও দেওয়া হয় হুমকি।
শিক্ষার্থীরা জানান, পরদিন বৃহস্পতিবার ইবি ছাত্রলীগের কর্মী মেহেদী হাসান হাফিজ ও নাসিম আহমেদ মাসুম বসে ঘটনাটি ‘সমাধান’ করে দেন। ওই সময় অভিযুক্তদের চড় দেন হাফিজ। তার নির্দেশে ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চান অভিযুক্তরা। পরে রাতে লালন শাহ হলে ফের অভিযুক্তদের নিয়ে বসেন ইবি ছাত্রলীগের কর্মী শাহিন আলম, মাসুম ও লিখন। তারা অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর মধ্যে ঘটনাটি ‘সমঝোতা’ করে দেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সাগর বলেন, ‘এরকম কিছু হয়নি। আমি সেদিন হলের বাইরে ছিলাম।’ বিভিন্ন তথ্য জানিয়ে জিজ্ঞাসা করলে পরে বলেন, তিনি পাশের রুমে ছিলেন। আরেক অভিযুক্ত কাফির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের মধ্যে ঘটনা ‘সমাধান’ করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন। তবে সিনিয়রদের সঙ্গে এক জুনিয়রের কথা কাটাকাটি হয়েছিল বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, কারও ব্যক্তিগত কাজের দায় সংগঠন নেবে না। ঘটনা শোনার পর আমি ভুক্তভোগীর জন্য হলে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা সবসময় ভুক্তভোগীর পাশে আছি।
এদিকে ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন ও ইবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ।
লালন শাহ হলে শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের খবর যেদিন জানাজানি হয়েছে, গত বছরের ঠিক একই দিনে ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরী খাতুন নামে এক শিক্ষার্থীকে প্রায় একই কায়দায় বিবস্ত্র করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল। এ ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
ওই ঘটনায় জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। তারা সবাই ইবি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ছিলেন ইবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি। ছাত্রলীগ থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়া গত বছরের জুনে লালন শাহ হলের একই কক্ষে এক ছাত্রকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের চাপে ভুক্তভোগী অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হন।
সারাবাংলা/টিআর
ইবি ইবিতে র্যাগিং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বিবস্ত্র করে র্যাগিং