ঢাকা: পহেলা ফাল্গুন। বাঙালির ভালোবাসার ঋতু বসন্তের প্রথম দিন। কুয়াশা, ধুলা আর ঠান্ডায় জড়সড়ো প্রকৃতিতে রোদ, ফুল আর কচিপাতার স্নিগ্ধতা নিয়ে আসে বসন্ত। মলয় বাতাসে ভেসে আসে আমের মুকুলের সুবাস। আর গাছের ফাঁকে লুকিয়ে গান শোনায় সুকণ্ঠি কোকিল।
আজ বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি), ষড়ঋতুর শেষ ঋতু বসন্তের প্রথমদিন। সেইসঙ্গে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এছাড়াও একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আরেক উৎসব সরস্বতী পূজা।
এ কারণে সকাল থেকেই উৎসবমুখর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সকালে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা উপলক্ষ্যে মন্দিরে মন্দিরে ভিড় জমান হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। আবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা, টিএসসিসি, শাহবাগ, বইমেলা, ধানমন্ডি লেকসহ পুরো রাজধানীতে দেখা গেছে তারুণ্যের উৎসবমুখর বিচরণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে টিএসসিসি এলাকায়। বইমেলার প্রবেশ পথে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন।
নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের ঋতুভিত্তিক উৎসব ছড়িয়ে দিতে প্রতিবছরের মতো এবারও চারুকলার বকুলতলায় বসন্ত উৎসব আয়োজন করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। এদিন সকাল সোয়া ৭টায় শিল্পী জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় সেতারে রাগ বসন্তমুখারী বাদন দিয়ে শুরু হয় আয়োজন।
এরপর ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসব’ শিরোনামে সমবেত গান, নৃত্য পরিবেশনা, একক পরিবেশনা, শিশু-কিশোর ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এসব পরিবেশনায় অংশ নেন ভাবনা, ধৃতি, নৃত্যম, বহ্নিশিখা, নৃত্যাক্ষ্য, স্পন্দন, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন নাচের দলের শিল্পীরা। সকাল ১০টায় বের হয় বসন্ত-আনন্দ শোভাযাত্রা। চারুকলা থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে ফের চারুকলায় এসে শেষ হয়।
মলিন শীত পেরিয়ে বসন্ত আসে রূপ, রং, সুগন্ধ আর বৈচিত্র্য নিয়ে। চারদিকে ফোটে নানা রংয়ের ফুল। তাই তো বসন্ত বরণে প্রাধান্য পায় রং। হলুদ, লাল, সবুজ রংয়ের পোশাকে সাজে বাঙালি-নারী পুরুষ। কর্মদিবসের ব্যস্ততায় কেউ কেউ রঙিন পোশাক পরেই বেরি পড়েছেন। কেউ সেজেছেন ফাগুনের হলুদিয়া সাজে, আবার কেউ বেছে নিয়েছেন ভালোবাসার রং লাল। চিরকালের বাঙালি শাড়ি-পাঞ্জাবি তো আছেই। হাতে আর গলায় ফুলের গয়না, কাচের চুড়ি, কপালের টিপে অনন্য বাঙালি নারী।
শুধু সাজেই নয়, ঘর সাজানোয়ও প্রাধান্য পায় তাজা ফুল। তাই শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতে জমেছিল ভিড়। কেউ ফুল কিনেছেন নিজের জন্য, কেউ আবার প্রিয়জনের জন্য। লাল গোলাপ ও হলুদ গাদার প্রাধান্য থাকলেও কোনো কোনো দোকানে দেখা পাওয়া গেল ফাগুনের আগুনরঙা পলাশের। বিক্রেতারা বলছেন, ফাল্গুন ও সরস্বতী পূজা ঘিরে গতকাল থেকেই ফুল বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ ফাল্গুন উপলক্ষ্যে হলুদ গাঁদার পাশাপাশি ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে বিক্রি বেড়েছে লাল গোলাপের। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ফুলের বিক্রি কম বলে জানান ফুল বিক্রেতারা। কারণ হিসেবে বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা ইত্যাদি।
প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে মানুষের মনও। গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মানুষ কয়েক মাসের শীতল আলস্য কাটিয়ে জেগে ওঠে নব উদ্যমে। আর সেই সেই ফাঁকে রোদের সঙ্গে ঢুকে পড়ে প্রেম। প্রিয়জনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা। সেই তো ভালবাসা। ভালোবাসারর নির্দিষ্ট দিন না থাকলেও আমরা ফাল্গুনে ভালোবাসি, ভালোবাসি ভ্যালেন্টাইনস ডে-তেও। তাইতো ফাল্গুনি ভালোবাসা উদযাপনে নাই কার্পণ্য। পরিবার, প্রিয়জন আর বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠে বরণ করে নেওয়া হলো বসন্তের প্রথম দিন।
ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট