Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দক্ষ চালক তৈরি: কাজ অসমাপ্ত রেখেই শেষ হচ্ছে প্রকল্প

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:২২

ঢাকা: কাজ অসমাপ্ত রেখেই শেষ হচ্ছে দক্ষ চালক তৈরি প্রকল্প। এ জন্য ‘দক্ষ চালক তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বিআরটিসি’র ৩টি প্রক্ষিণ ইনস্টিটিউট ও ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণ তৃতীয় সংশোধিত শীর্ষক’ প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে এতে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রশ্নের মুখে পড়বেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, শুধু এটি নয় আরও নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়। পরে যেসব সুপারিশ দেওয়া হবে সেগুলো সঠিকভাবে প্রতিপালন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করতে বলা হবে। এরপরই অনুমোদনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, মূল প্রকল্পে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। যা সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়। ২০১৮ সালের ২০ মার্চ পরিকল্পনামন্ত্রী তাতে অনুমোদন দেন। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল প্রশাসনিক অনুমোদন জারি করে। পরে প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তবে (ডিপিপি) মোট ৩৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২০ সালে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও ২০২১ সালের জুনে প্রথমবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি মোট ৫২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দেন। এছাড়া মন্ত্রী ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর  প্রকল্পটির আন্তখাত সমন্বয় অনুমোদন করে।

পরবর্তীতে প্রকল্পটির দ্বিতীয়বার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ অনুমোদিত মেয়াদে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার পর এক বছর পার হয়েছে। কিন্তু মেয়াদ বৃদ্ধি বা প্রকল্প সংশোধনের কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পটি সমাপ্তির জন্য কিছু অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস করে মোট ৪০ কোটি ২৪ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধিত অনুমোদিত ডিপিপির তুলনায় প্রস্তাবিত তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপির প্রাক্কলিত ব্যয় ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা (২২ দশমিক ৭৫ শতাংশ) কমানো হয়েছে বলে ওই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়, অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রশিক্ষণ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৪ লাখ টাকা সংস্থান আছে। গাড়িগুলো বিভিন্ন দফতরে ব্যবহারের জন্য আগেই রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল। তাই এ খাতে ব্যয় ৪ লাখ টাকা কমেছে। এছাড়া প্রয়োজনীয়তা না থাকায় স্টেশনারি, বিজ্ঞাপন ও প্রকাশনা এবং সম্মানী ভাতা খাতে ৭৮ হাজার টাকা, ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা এবং ৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম (সিমুলেটরসহ ইত্যাদি) সংগ্রহের জন্য ডিপিপিতে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকার সংস্থান আছে। প্রয়োজন না থাকায় সেকশনাল মুভিং স্টিয়ারিং সিস্টেম সেট ২টি, সেকশনাল ইঞ্জিন এবং ইঞ্জিন সিস্টিম সেট ২টি, সেকশনাল ফ্রন্ট এক্সেল, ডিফারেনশিয়াল সেট ২টি এবং সেকশনাল ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম সেট ২টি অতিরিক্ত কার্যাদেশের মাধ্যমে সংগ্রহ না করায় এ খাতে ব্যয় ৬১ লাখ টাকা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র সংগ্রহের জন্য ডিপিপিতে ২ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার সংস্থান আছে। চুক্তিমূল্য কম হওয়ায় এবং পঞ্চগড় কেন্দ্রের ৩টি এসি সংগ্রহ না করায় এ খাতে ব্যয় ৮৯ লাখ টাকা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। পূর্ত প্যাকেজে ২২টি কেন্দ্রের মধ্যে পঞ্চগড় কেন্দ্রের বিষয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া চুক্তি মূল্যে কম হওয়ায় এবং প্রকল্পের ময়মনসিংহ কেন্দ্রের একটি সেমি পাকা ভবন, গার্ডরুম, সলিং ও হেরিংবোন বন্ডের ৫০ শতাংশ কাজ, পাবনা কেন্দ্রের বাউন্ডারি ওয়াল, ঝিনাইদহ কেন্দ্রের বাউন্ডারি ওয়াল ও গার্ডরুম, বরিশাল কেন্দ্রের বালু ভরাট, সলিং, হেরিং বন্ড, কম্প্যাকমন, সাব-বেজ কোর্স ইত্যাদি কাজ প্রকল্প মেয়াদের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। তাই এ খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিপিপিতে ৫২ কোটি ৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বিআরটিসি’র ২২টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে পঞ্চগড়ের জমি সংক্রান্ত মামলা চলমান থাকায় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও আনুসঙ্গিক কাজ বাদ দিয়ে মোট ৪০ কোটি ২৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই এটি সমাপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের বিআরটিসি’র জমি সংক্রান্ত মামলা চলমান থাকায় এই সাইটে কোনো কাজ হয়নি। প্রকল্প এলাকা হতে এই সাইটটি বাদ দিয়ে অনুমোদিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য সাইটে কি পরিমাণ কাজ হয়েছে তা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে।

এছাড়া আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল বাবদ দেওয়া অতিরিক্ত ৮৪ লাখ টাকা নিরাপত্তা জামানত হতে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পর্যলোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্পের ময়মনসিংহ কেন্দ্রের একটি সেমি পাকা ভবন, গার্ডর রুম, সলিং ও হেরিংবোন বন্ডের ৫০ শতাংশ কাজ, চট্টগ্রাম (বাস) কেন্দ্রের ড্রেন ও বালু ভরাট, সলিং, হেরিংবোন বন্ডের ৫০ শতাংশ কাজ, পাবনা কেন্দ্রের বাউন্ডারি ওয়াল, ঝিনাইদহ কেন্দ্রের বাউন্ডারি ওয়াল ও গার্ডরুম, বরিশাল কেন্দ্রর বালু ভরাট, সলিং, হেরিংবোন বন্ড, কম্প্যাকশন, সাব-বেজ কোর্স ইত্যাদি কাজ প্রকল্প মেয়াদের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই এ খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ কাজগুলো অসম্পূর্ণ রেখে প্রকল্প সমাপ্ত করা হলে ভবিষ্যতে এগুলো কিভাবে সম্পন্ন করা হবে, সে বিষয়ে সভায় ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর