বইমেলায় বাড়ছে ভিড়, বদলে যাচ্ছে বেচাকেনার চিত্র
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৪
ঢাকা: ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী বইমেলা পার করেছে তার অর্ধেক বয়স। হাতে আছে বাকি দিনগুলো। মেলা শুরুর প্রথম দিনগুলোয় বেচাকেনা তেমন জমে না উঠলেও ১৪ ফেব্রুয়ারি ফাগুনের রং আর ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ঢেউ লেগেছে পরের দিন বইমেলাতেও।
বৃহস্পতিবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, পাঠক-দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে স্টলে স্টলে। অন্যান্য দিনের চেয়ে বেচাকেনাও বেড়েছে। পছন্দের বই হাতে ঘরে ফিরেছেন অনেকেই। প্রকাশকরা বলছেন, প্রথম দিকের তুলনায় তাদের বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় মেলায় আসেন গবেষক ড. নাজমুল করিম। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আসেন তিনি।
ড. নাজমুল করিম বলেন, ‘গবেষণা কাজের জন্য আমার বেশকিছু বই কেনা দরকার। আজ ৫টা বই কিনতে পেরেছি। কিছু বই পছন্দ করে রেখে গেলাম। অন্যদিন সেগুলো কিনব।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ মেলায় ভিড় বেশ। আশা করি সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরও জমজমাট হবে।’
আরেকজন ক্রেতা একটি জাতীয় পত্রিকার সহ-সম্পাদক ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিষয়ে আমি ৩টি বই কিনেছি। মেলা থেকে পছন্দের বইগুলো কিনতে পেরে আমি খুশি।’
মেলায় আজ ভিন্ন চোখ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই ‘না প্রেম না বিপ্লব’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সিনেমা প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘আজকে মেলায় সন্ধ্যার পরিবেশটি ভালো লাগছে। এভাবেই মেলার মাধ্যমে বই ছড়িয়ে পড়ুক পাঠকের ঘরে ঘরে।’
ভিন্ন চোখ প্রকাশনীর প্রকাশক আলী আফজাল খান বলেন, ‘আমরা ছোট প্রকাশনী। তারপরও বেচাকেনা যা হচ্ছে তা খারাপ না।’
এবার মেলায় প্রথম বই বের করেছেন কবি বিপ্লব সিরাজী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলায় আমার প্রথম বই বের হয়েছে। এই কারণে আমি খুশিতে আপ্লুত। মেলায় যে সব পাঠক-ক্রেতা এসেছেন তাদের সবাইকে জানাই শুভকামনা।’
মেলায় বেচাকেনা বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবারই মেলার প্রথম দিকে বেচাকেনা কম থেকে। শেষের দিকে বাড়তে থাকে। আশা করি প্রকাশক ও লেখকরা মেলায় ভিড় দেখে আমার মতো খুশি হবেন।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ সাদেক বলেন, ‘আমি এবার মেলায় চতুর্থবারের মতো এলাম। বইপ্রেমী বলেই মেলায় এসে আনন্দ পাচ্ছি, ভালো লাগছে।’
অন্বয় প্রকাশনীর প্রকাশক হুমায়ুন কবীর ঢালী বললেন, ‘যথেষ্ট লোক সমাগম হচ্ছে। বেচাকেনা যেভাবে বাড়ছে তা ইতিবাচক।’
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, বইয়ের স্টল, প্যাভিলিয়নগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। স্টল, প্যাভিলিয়ন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দর্শনার্থীর সংখ্যা যতই বাড়বে, তাদের বিক্রিও ততই বাড়বে।
স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরু থেকেই স্টলগুলো প্রাণহীন ছিল। পাঠক সমাগম না থাকায় অলস সময় কাটাতে হছে তাদের। এবার তাদের ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে।’
এবারের মেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন রয়েছে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান: ভলিউম-২’সহ কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/একে