‘মিয়ানমারে যতই যুদ্ধ হোক, কাউকে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না’
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যতই যুদ্ধ হোক, কাউকে আর বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। এর আগে, তিনি চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূস, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক যুদ্ধের জেরে সীমান্ত পরিস্থিতি, কারামুক্ত বিএনপি নেতাদের বক্তব্যসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে জবাব দেন।
মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সারা মিয়ানমারে শুধু আরাকান আর্মি নয়, অনেকগুলো এথনিক গ্রুপ যুদ্ধে লিপ্ত আছে। আরাকান আর্মি বেশ কিছুদিন ধরে এ অঞ্চলে যুদ্ধ করছে। এ অঞ্চলে যুদ্ধ চললে কিছু গোলাগুলির শব্দ তো আমাদের এখানে আসে। ওখানে সরকারি বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু লোকজন ভয়ে আত্মরক্ষার্থে আমাদের দেশে পালিয়ে এসেছেন।’
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি কথা ছিল যে- সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়; সে নীতি আমরা অবলম্বন করছি। তারা যতই গোলাগুলি করুক এবং এর প্রভাবে আমাদের এখানে যা কিছু হচ্ছে, আমরা এর প্রতিবাদ করছি। তাদের কিন্তু আমরা আমাদের এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছি না। আমাদের বিজিবি, নেভি ও পুলিশ সেখানে সজাগ আছে। কোস্টগার্ডকে সজাগ রেখেছি। ওখান থেকে যে এখানে আসবে সেটা হবে না’, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাধারণ মানুষ ও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অস্ত্র- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এমন দেখা যাচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিত্যাক্ত অবস্থায় আরাকান আর্মির ওরাই দুই-চারটা অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। তাদের অন্য কোনো মোটিভ থাকতে পারে। তারা সবাই ধরা পড়েছে। বিজিবি সবাইকে আটক করেছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আমাদের বিজিবি খুব কঠোর অবস্থানে আছে। অস্ত্র নিয়ে এখানে ঢোকার অবস্থা নেই। আমরা সবাই সজাগ আছি।’
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিযোগ করেছেন, মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কে ১৪তলা টেলিকম ভবনে গ্রামীণ পরিবারের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, যেগুলোতে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন, সেগুলো গ্রামীণ ব্যাংক জবর দখল করছে।
এ অভিযোগ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমরা আইনের বাইরে কিছু করছি না। ড. ইউনূসের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। আদালতের নির্দেশনা যেভাবে এসেছে, সেভাবে কাজ হচ্ছে। এর বাইরে সরকার কিংবা পুলিশ কেউ কিছু করছে না।’
সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সরকার উৎখাতের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা তো অনেক কিছু বলে। এদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে আপনারা দেখেছেন। ধারাবাহিকভাবে আপনারা যদি বিশ্লেষণ করেন ২০০১ সালের পর ২০০৮ এ যে নির্বাচনটি হলো সেখানে তারা কতগুলো সিট পেয়েছে। মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন তারা বয়কট করেছে। ২০১৮ সালে ছয়টি সিট পেয়েছে। এদেশের জনগণ তাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এটা যেমন সত্য ঠিক তারাও যে সমস্ত প্রোগ্রাম দেয় সেগুলো মানুষ হাসানো ছাড়া আর কিছু নয়।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সারা বাংলাদেশে একটি সুন্দর, অবাধ নির্বাচন উপহার দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীরও একটি শক্ত ভূমিকা ছিল যে একটি সুন্দর, অবাধ নির্বাচন হওয়ার। সেটা দেশবাসী লক্ষ্য করেছে। শুধু দেশবাসী না। সারা পৃথিবীর মানুষও এটা লক্ষ্য করেছে যে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। কেউই এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কিছু বলতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার ও পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন এবং দেশের শাসনভার নিয়েছেন। তার যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এটা আগের মতো চলবে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের জন্য এটা আশীর্বাদ।’
সামনের উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দল থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা নৌকা প্রতীক জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচনে ব্যবহার করব না। সব নির্বাচনে যেহেতু নৌকা প্রতীক থাকবে না সেহেতু যার যার প্রতীক নিয়ে সে লড়াই করবে এবং তারা কে কতখানি জনপ্রিয় সেটা প্রমাণ হবে। আমরা চাই জনপ্রিয় লোকগুলো নির্বাচনে আসুক। জনপ্রিয় লোকগুলো নির্বাচনে আসলে তাদের এলাকার উন্নয়ন করতে তারা বাধ্য হবে। জাতীয় নির্বাচন যেভাবে হয়েছে এ অভিজ্ঞতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটার আলোকে আরও একটি সুন্দর নির্বাচন মানে এটার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।’
এসময় সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/এমও