ছুটির দিনের চেয়ে সাধারণ দিনেই বেচাকেনা বেশি
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:০০
ঢাকা: অমর একুশে বইমেলা শেষ হতে আর মাত্র ১১ দিন বাকি। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৮ দিন। তবে বইমেলার মূল কেনাকাটা এখনও শুরু হয়নি। মূলত ২১শে ফেব্রুয়ারির পরই জমে উঠে মূল কেনাকাটা। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা সেই দিনগুলোর অপেক্ষায়। কেউ কেউ অবশ্য এবার বেচাকেনার নতুন স্বপ্নও বুনছেন। কারণ, ইতোমধ্যে কোনো কোনো প্রকাশনীর বিক্রি গত বছরের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন বিক্রি বেড়েছে দেড়গুণ।
তবে সব প্রকাশনীর বিক্রি বেড়েছে বিষয়টি এমন নয়। প্রথম সারির প্রকাশনীর বই বিক্রি গত বছরের চেয়ে এখন পর্যন্ত ৫ শতাংশ কম বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। বিক্রয় প্রতিনিধি ও প্রকাশকরা আরও বলছেন, বইমেলায় এখন বিশেষ দিনের চেয়ে সাধারণ দিনেই বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মেলার ১৮তম দিনে একাধিক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দিনটিতে মেলায় তুলনামূলক দর্শনার্থীদের ভিড় কম দেখা গেছে।
মাওলা ব্রাদার্স’র প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলা প্রতিবারের মতোই আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। প্রচুর প্রকাশনা হচ্ছে, আমিও কিছু বই সংগ্রহ করছি। প্রকাশনায় যদি ভালো কিছু আসে সেটাই বড় পাওয়া। আমরা হয়তো মেলার শেষের দিকে বলতে পারব কয়টি ভালো বই এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের মেলায় নতুন সংযোজন মেট্রোরেল সার্ভিস। যে কারণে দেখা যাচ্ছে, মিরপুর ও উত্তরা থেকে প্রচুর পাঠক মেলায় আসছে। এটা কিন্তু এ বছরই প্রথম পাচ্ছি। আগে কেউ আসতে চাইলে দুই/তিন ঘণ্টা সময় বেশি লাগতো। এখন কম সময় লাগছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এবার বইমেলায় প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে। ছুটির দিন ছাড়াও সাধারণ দিনগুলোতে লোক সমাগম হচ্ছে। সবাই হয়তো বই কিনছে না। তবে মেলায় দর্শনার্থী বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে ক্রেতাও ‘
মাহমুদুল হক বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি বই বিক্রি হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেলার ২১ তারিখের পর বিক্রি বাড়ে। ২১ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় মূলত বেশি বই বিক্রি হয়ে থাকে। পাঠকরা বইয়ের তালিকা করেই মেলায় আসেন। তখন শুধু কেনাকাটাই চলে।’
জানতে চাইলে ভাষাচিত্রের প্রকাশক খন্দকার সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় আমার প্রকাশনী থেকে বই বিক্রি বেড়েছে দেড়গুণ। গত বছর ভালো বই বের করতে পারিনি। এবার গতবারের চেয়ে অনেক ভালো লেখকের বই প্রকাশ করেছি। ভালো বই থাকায় বিক্রি বেড়েছে।’
এই প্রকাশক ক্ষোভ ঝেরে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন বইমেলায় আর বই বিক্রি হয় না। এখন লেখক বিক্রি হয়। ফিকশন বই বিক্রি হয় না, ফিকশনের লেখক বিক্রি হয়। বই বিক্রি এখন চলে গেছে সোস্যাল মিডিয়ায়। সেখানে যার ফ্যান ফলোয়ার যত বেশি, তার বই বিক্রি তত বেশি। কেন বই মেলায় ড. সাবরিনা, আয়মান সাদিক, মুনজেরিন শাহীদ, মুস্তাক, তিশা- এদের বই বিক্রি হবে? এদের বই নিয়ে কেন নিউজ হবে? গত চার পাঁচ বছরে বইমেলায় তথাকথিত সেলিব্রেটিদের বই বিক্রি হচ্ছে।’
সোস্যাল মিডিয়া ও মূল ধারার গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রকাশক আরও বলেন, ‘ড. সাবরিনা বা এমন লেখকদের বই নিয়ে কেন নিউজ হবে? একদল বই ব্যবসায়ী আছে যারা খুঁজে খুঁজে এমন লোকদের বই প্রকাশ করছে। সারাবছর ধরে তারা এমন লোকদের খুঁজতে থাকে। কোন প্রকাশক কার বই প্রকাশ করছে, সেটি নিয়েও নিউজ হওয়া উচিত।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আমজাদ হোসাইন খান কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। মেলা চলে ৯টা পর্যন্ত। মেট্রোরেল ৮ টা ৪০ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায়। যারা মেলায় আসে তাদের তাড়া থাকে। মেলা শেষ না হতেই তাদের ফেরার পালা। শুক্রবার একটি ছুটির দিন, সেদিন আবার মেট্রোরেল বন্ধ। ওইদিন যদি মেট্রোরেলের বিশেষ সার্ভিস থাকতো, তাহলে অনেকেই উত্তরা ও মিরপুর থেকে অনায়াসে আসতে পারতো।’
তিনি বলেন, ‘আজ মেলার ১৮তম দিন। এই ১৮ দিন যা বিক্রি হয়েছে আশা করি সামনের ১১ দিনে এর চেয়ে ভালো বিক্রি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমাদের ২৩০টি বই আসবে। আজ পর্যন্ত ১৮০টি বই চলে এসেছে।’
বইবিক্রি নিয়ে বাংলা প্রকাশকের অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার মো. নুরুন্নবী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার বই বিক্রি ভালোই হচ্ছে। তবে খুব ভালো বলা যাবে এমন নয়। যেদিন বেশি ভিড় হয় সেদিন বই বিক্রি কম হয়। বরং যেদিন ভিড় কম থাকে, ক্রাউড কম থাকে, সেদিন বেশি বই বিক্রি হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনী থেকে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের বই-ও সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। ৩৮টির মধ্যে এখন পর্যন্ত আমাদের ৫টি বই মেলায় এসেছে। ২২ তারিখের মধ্যে সব বই চলে আসবে। এরমধ্যে বাচ্চাদের বই বেশি। দুই সিরিজের ১০টি করে ২০টি বই রয়েছে।’
ছবি: সুমিত আহমেদ, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম