Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঋণখেলাপিদের তালিকা ও অর্থপাচারের অনুসন্ধান প্রকাশের দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৮

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: কোটি টাকার বেশি অর্থ ঋণখেলাপি যারা তাদের তালিকা প্রকাশসহ তাদের ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া, অর্থপাচারের অনুসন্ধান ও শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। পাশাপাশি দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেশপ্রেমিক অর্থনীতিবিদদের পরামর্শে চলার পরামর্শ দিয়েছেন জোটের নেতারা।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের এক কর্মসূচিতে জোটনেতারা এ দাবি জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকে গেটের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নেতা আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধরণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবি নেতা ডা. সাজেদুল হক রুবেল।

সমাবেশে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, লুটেরাদের প্রশ্রয় দিয়ে ব্যক্তিখাত গড়ে তোলা যায় না। এটা হয় স্বজন-তোষণমূলক পুঁজিবাদ। খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য নানা পদ্ধতি বের করা হয়। এতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় না। খেলাপি ঋণ বেড়ে চলে, চলছে। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত শত্রুদের আড়াল করা হচ্ছে। এদের শক্তির উৎস ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। এখন এসব দল এদের পক্ষে চলে গেছে।

বিজ্ঞাপন

ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ কেটে দেওয়ার দাবি জানান এম এম আকাশ।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশের আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনার দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়িয়ে যেতে পারে না। তিনি দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেশপ্রেমিক অর্থনীতিবিদদের পরামর্শে পরিচালনার আহ্বান জানান। ব্যাংকের তথ্যের উন্মুক্ততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

কর্মসূচি থেকে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। ছবি: সারাবাংলা

খেলাপি ঋণ আদায় ও পাচারের টাকা ফেরত আনতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এর জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সাত দিনের মধ্যে খেলাপিদের তালিকা ও ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। বিগত রাতের ভোটের সংসদে যে খেলাপিদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল তার খবর কী? কাদের প্রশ্রয়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা জানতে চাই।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এই অবস্থান হলো জনগণের পার্লামেন্ট, এখানে জনগণের কথা বলা হলো। এরপর দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামনে অবস্থান করা হবে।

সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সরকার শুধু লুটেরাদের পাহারাদার নয়, এরা এই লুটের অংশীদার। এদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলে মুক্ত বাজারের অর্থনীতি বিদায় করে সমাজতান্ত্রিক অভিমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বেনামে ঋণের সঙ্গে যুক্ত ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান সিপিবি সভাপতি। পাচার ও খেলাপি টাকা উদ্ধার করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার এবং লুটেরা শাসকদের বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তি কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।

বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ২০০৮ সালের পর দেশের টাকা ফেরত আনা হলো। অথচ আওয়ামী দলীয় লোকদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে কারও টাকা ফেরত আনা হলো না। এখন কিছু গোষ্ঠী, পরিবার সরকারের ছত্রছায়ায় ব্যাংক লুটপাট করে চলেছে। দুর্নীতিবাজ ব্যাংক পরিচালকদের অপসারণ করা হচ্ছে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

আব্দুস সাত্তার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটপাট হয়ে যায়। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হয় না। বরং এরা আরও সম্মান নিয়ে বহাল তবিয়তে দেশে আছে।

মাসুদ রানা বলেন, মুক্তবাজারের ধারা অব্যাহত রেখে সংকট সমাধান হবে না। আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা দূর না করতে পারলে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, লুটপাট-দুর্নীতি দূর করতে পারব না।

মোশরেফা মিশু বলেন, ব্যাংকগুলোতে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা আছে। এমন কোনো ব্যাংক খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখান থেকে টাকা লুটপাট হয়নি। অথচ অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। এরা বেগম পাড়া, সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছে।

আব্দুল আলী বলেন, ব্যাংকের টাকা যারা লুট করে খায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ শ্রমিকরা আন্দোলন করলে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয় না।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

অর্থপাচার খেলাপি ঋণ বাম গণতান্ত্রিক জোট বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্ষোভ সমাবেশ শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর