‘ব্যর্থতা ঢাকতে শিক্ষকদের ওপর দায় চাপাচ্ছে চবি প্রশাসন’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ছাত্রলীগের চলমান অস্থিরতা নেপথ্যে শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রভাব উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা প্রত্যাখান করেছে শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থতা ঢাকতে শিক্ষকদের ওপর দায় চাপাচ্ছে বলে তারা পাল্টা অভিযোগ করেছেন। এদিকে, শিক্ষক সমিতি ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয় করা অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে তা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আইন অনুষদ ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে উপাচার্যের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে চবি শিক্ষক সমিতি। এ নিয়ে তারা আন্দোলনও শুরু করেন। এর মধ্যে গত সপ্তাহে তিন দিন ধরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে জড়ান। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
এ প্রেক্ষাপটে গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে আসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য। এতে ছাত্রলীগের অস্থিরতার জন্য শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের প্রভাবকে দায়ী করা হয়।
এর জবাবে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবদুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ব্যক্তি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য। তারা এবং সুবিধাভোগী কিছু শিক্ষক মিলে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল-সংঘর্ষের দায় শিক্ষক সমিতির ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। তাদের এ প্রচেষ্টা আমাদের হতবাক করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে শিক্ষক সমিতির ওপর দায় চাপাচ্ছে।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষের দায় শিক্ষক সমিতির ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।’
এদিকে, গত রোববার জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ গণমাধ্যমের বরাতে অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির টাকা উপাচার্য, শিক্ষক সমিতি এবং একটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা ভাগাভাগি করে নেন। এটি আইনের চরম লঙ্ঘন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগের জবাবে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগ-বাটোয়ারার সঙ্গে শিক্ষক সমিতির কোনো সম্পর্ক নেই। এসবের সঙ্গে শুধুমাত্র প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই জড়িত থাকতে পারেন। সাধারণ শিক্ষকরা আয়-ব্যয়ের হিসাবও জানেন না, ভাগবাটোয়ারার হিসেব তো অনেক দূরের বিষয়। আমরা বলেছিলাম, আয়-ব্যয়ের হিসাব যে সভায় নির্ধারণ হয়, সেখানে শিক্ষক সমিতির একজন সদস্য রাখুন। তাহলে শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা বাকিদের কাছে সঠিক তথ্যটা পৌঁছে দেব। কিন্তু তারা এতে রাজি হননি।’
আব্দুল হক বলেন, ‘উপাচার্য নিজের পরিদর্শন ভাতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছেন, অথচ সাধারণ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় আয় হয়েছে প্রায় ২১ থেকে ২৩ কোটি টাকা। সেখানে আমরা হিসাব করে দেখলাম, খুব বেশি হলে ৭-৮ কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তাহলে এ অর্থ কোথায় যাচ্ছে? এ টাকা কোন খাতে ব্যয় করছেন, সেটা যদি সবার সামনে তুলে না ধরেন, তাহলে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম