Wednesday 04 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জমজমাট বইমেলায় একুশের আবহ, বেড়েছে পাঠক সমাগম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৪৫

ঢাকা: আর মাত্র কিছুক্ষণ পরেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, ‘আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস’। ইতোমধ্যে ভাষা দিবসের আবহ তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব দেখা গেলো একুশের বইমেলায়। দর্শনার্থীদের অনেকেই সাদা কালো পোশাকে এসেছিলেন বইমেলায়। শীতল আবহাওয়ায় কেউ ছবি তুলেছেন, কেউ শত বইয়ের সম্ভার থেকে খুঁজে নিয়েছেন পছন্দের বইটি, কেউ উপভোগ করেছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আবার কেউ কেউ গল্প-আড্ডায় কাটিয়েছেন পুরো সময়। লেখক-প্রকাশকরা বলছেন, বই বিক্রি হোক বা না হোক গ্রন্থানুরাগীরা যে মেলায় আসছেন এটাই কম কিসের। চলতে চলতে বইয়ে অভ্যাস ফিরবে এটাই তাদের প্রত্যাশা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বই মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ছুটির দিন না হলেও দুপুরের পর থেকেই দর্শক-পাঠকরা আসতে থাকেন। বিকেল হতেই ভিড় বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে।

মেলাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান

বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে প্রতিদিনই থাকে আলোচনা ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় সূচনা সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। যেহেতু একদিন বাদেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি সেহেতু পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আমেজ। সূচনা সঙ্গীতেও ছিল একুশের গান, কবিতা। এদিন আলোচনার বিষয় ছিল ‘বাস্তবতা গল্পের চেয়েও অদ্ভূত’। জামাল নজরুল ইসলাম স্মরণে প্রবন্ধ পাঠ করেন আসিফ। মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সুব্রত বড়ুয়া ও আরশাদ মোমেন। দুই ভাগে বিভক্ত অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে আলোচনা অনুষ্ঠান আর দ্বিতীয় ভাগে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন।

মেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠান

বরাবরের মতো এবারও বইমেলায় সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্টল দিয়েছে। তথ্য অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বিআইডিএস, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতর, এসএমই, পিআইবি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, প্রত্নত্ত্বত্ব অধিদফতর, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বিআইআইএসএস, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, এনসিটিবি।

বিজ্ঞাপন

এ সব প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রির চেয়ে প্রচার বেশিই তাদের উদ্দেশ্য। তথ্য অধিদফতরের স্টলের কর্মী ইব্রাহিম জানালেন, মানুষকে সরকারের কার্যক্রম সেবা জানানোই মূল উদ্দেশ্য। টুরিস্ট পুলিশ স্টলের কর্মী ফয়সাল জানান, ভ্রমণপ্রিয় টুরিস্টদের পুলিশের কার্যক্রম জানাতেই বইমেলায় তাদের স্টল নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই

প্রতিবন্ধীদের জন্য এবারও ব্রেইল পদ্ধতির বই নিয়ে এসেছে স্পর্শ ফাউন্ডেশন। মোট ১৯টি বই বেরিয়েছে এবার। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য একাত্তরের দিনগুলি, প্রাণের মিনার শহিদ মিনার, খরগোশটা গিটার বাজায়, চেনা চীন অচেনা হাংগেরী, কবিতা সংকলন, একটাই পৃথিবী,
আলোর নিমন্ত্রণ, মহীনের গরুটা, অমিয়’র একদিন, প্রাথমিক কম্পিউটার শিক্ষা, হুডি, স্বাস্থ্য তথ্য, সুমির হেঁসেল, চোর দেখার ফাঁদ, কিনব যা দরকারের, সিসিমপুর, ইকরির ধাঁধা, একসাথে পাহাড়ে, আমি যা দেখি তুমি তা দেখ কি এবং রাজার কান কোথায়।

স্টল কর্মী নন্দীতা সারাবাংলাকে বললেন, ‘আমাদের বই ফ্রি-তে বই বিতরণ করা হয়। আর অনেক স্টুডেন্ট এখানে এসে পড়তে পারেন।’ বদরুন্নেচ্ছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মোহিনী আক্তার তামীম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে স্পর্শের সঙ্গে যোগাযোগ। বইমেলায় সপ্তাহে চারদিন আসি। বই পড়তেই আসি। তাদের উদ্যোগ অসাধারণ।’

‘মানুষ দৃষ্টিহীন বলেই অন্ধ নয়, মানুষ মূলত প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ’- এই স্লোগান নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। স্পর্শ স্কুলের বইয়ের বাইরেও সাহিত্য-গল্প-কবিতার বই বের করে থাকে। কর্মীরা জানান, প্রতিটি স্টলে অনন্ত একটা বিষয়ে ব্রেইল বই রাখার কথা থাকলেও কেউ রাখেনি। দৃষ্টিহীনদের জন্য বই পড়ার কোনো ব্যবস্থাও নেই।

ছোটদের বই

বড়দের পাশাপাশি মেলায় ছোটদের বইয়ের চাহিদাও অনেক। গল্প, ছড়ার পাশাপাশি বিদেশি অনুবাদের প্রবন্ধও বিক্রি হচ্ছে বেশ। প্রগতি প্রকাশনীর কর্মী বিথিকা দাস সারাবাংলাকে জানান, বাচ্চাদের পছন্দ অনুযায়ী ছবির সঙ্গে সঙ্গে গল্প রাখা বইগুলো বেশি চলছে। সেইসঙ্গে ম্যাজিক বুক। যেসব শিশু লেখা শিখছে তাদের বইগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ঘাঁসফুল প্রকাশনীর কর্মী নাদিম সারাবাংলাকে জানান, ছোটদের বইয়েরও বেশ চাহিদা রয়েছে। ছড়া, গল্প সবধরনের বই বিক্রি হচ্ছে।

মেলায় একুশের আবহ

আর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহিদ বেদীতে ফুল দিয়ে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। অমর একুশের আবহ দেখা গেলো বইমেলায়। দর্শনার্থীরা সাদা-কালো পোশাকে মেলায় এসেছেন। অনেকে শিশুদেরও একুশের পোশাকে নিয়ে এসেছেন। বইয়ের স্টল কর্মীদেরও কালো পোশাকে দেখা গেছে। মেলায় আসা সুমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একুশের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারে ফুল দেবো, তাই বন্ধুরা একসঙ্গে এসেছি। আপাতত বই মেলায় ঘুরব, খাব; তারপর যখন আমাদের জন্য সুযোগ করে দেওয়া হবে তখন শহিদ মিনারে যাব।’

নতুন বই

বই মেলায় প্রতিদিনই নতুন বই আসে। সেই বই শতকের ঘর পার করে। কেউ কেউ আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মোড়ক উন্মেচন মঞ্চে। কেউ কেউ আবার নজরুল মঞ্চে যান বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য। এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে টিএসসির প্রান্তে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে লেখকেরা রোজ বিকেলে পাঠকদের সামনে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

একুশের আবহ বইমেলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর