চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ‘কাজে অনিয়ম, টাকা আত্মসাতে’র অভিযোগ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৭
ঠাকুরগাঁও: প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও অর্থ লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মুস্তাকের বিরুদ্ধে। গত ২১ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই পরিষদের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ফারুক হোসেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পসহ অন্য প্রকল্পের প্রায় ৬০-৬৫ লাখ টাকা জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ বরাদ্দ পেয়েছে। প্রকল্পের টাকা খরচের জন্য চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নামকাওয়াস্তে একটি কমিটি করেন। ইউপি সদস্যরা প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের জন্য পাঁচটি রাস্তা উন্নয়নের বিল ভাউচারে সই করলেও একটি রাস্তাতেও কাজ হয়নি। এর আগে যতগুলো রাস্তার কাজ হয়েছে তা হয়েছে ৪০ দিনের কর্মসূচির টাকা দিয়ে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রকল্পের টাকার হিসাব চাইতে গেলে চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের বরখাস্তসহ নানা ধরনের হুমকিধমকি দেন। পরিষেদের পুকুরে মাটি ভরাটের জন্য দুই ধাপে চার লাখ টাকা বরাদ্দ নেওয়া হলেও এখনো পুকুর ভরাট হয়নি। এক স্কুলে টিনশেড একটি ঘর নির্মাণের জন্য দুই লাখ, আরেক স্কুলে বেঞ্চ বানানোর জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ নিলেও বাস্তবে ৫০ হাজার টাকাও খরচ হয়নি। ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুই লাখ টাকা বরাদ্দে বেশ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও তাতে খরচ হয়েছে অর্ধেক।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন ভাতা ও চালের কার্ড এবং টিসিবির এক হাজার ৭৩০টির কার্ডের মধ্যে চেয়ারম্যান একাই ৮৭০টি নিজের কাছে রেখে দেন। এমনকি গরিবের চালেও দরিদ্রদের কাছে থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য ফারুক হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করেন এবং হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন ফারুক হোসেন।
লিখিত অভিযোগের সূত্র ধরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের বিশ্বাসপুর গ্রামে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল দুই লাখ টাকা। কিন্তু গ্রামবাসীর অভিযোগ, এখানে দুই লাখ টাকা নয়, খরচ হয়েছে ৪০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। কাজও হয়েছে নিম্নমানের। নির্মাণের সাত দিনেই চারপাশ ভেঙে গেছে।
এসব নিয়ে প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য মো. নাসিরুল ইসলাম কথা বলতে রাজি হননি।
মহব্বতপুর গ্রামের কালভার্টের চিত্রও একই। প্রকল্প সভাপতি কবিন্দ্র অবশ্য জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘কালভার্টের বরাদ্দ দুই লাখ টাকা ধরা হলেও বাস্তবে খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। বাকি টাকা ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যদের যাতায়াত খরচ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান এস এম মুস্তাক সবখানেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। আমরা প্রতিবাদ করলে মারমুখী আচরণ করেন এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। যেখানে সাত লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেখানে কাজ হয়েছে দেড় লাখ টাকার। আমি চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মুস্তাক বলেন, ‘আমার সম্পর্কে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট। তিনি (ফারুক হোসেন) এর আগেও আমার নামে অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তদন্তে দুর্নীতি ধরা পড়েনি।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রকল্পে অনিয়ম হলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। এর আগেও ওই ইউনিয়নে প্রকল্পে অনিয়মের কারণে বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এবারও অনিয়ম হলে তা খতিয়ে দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও