মানুষের ঘরে বেড়ে ওঠা বাঘের ঔরসে ৩ সন্তান
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ বাইডেন ও বাঘিনী জয়ার ঘরে এসেছে তিন অতিথি। জন্মের পর বাঘিনী মায়ের অসহিঞ্চু আচরণের কারণে বাঘ বাইডেনকে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। চিড়িয়াখানার কর্মীদের নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা বাইডেনকে পরবর্তীতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল বাঘের খাঁচায়।
মানুষের ঘরে বেড়ে ওঠা বাঘ বাইডেনের ঔরসে শাবকের জন্ম বিরল ঘটনা বলছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। এ নিয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭টিতে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শাবক তিনটি জন্মগ্রহণ করে, যাদের লিঙ্গ এখনও নির্ধারণ সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডাক্তার শাহাদাত হোসেন শুভ।
শুভ সারাবাংলাকে জানান, সদ্যোজাত শাবক তিনটি সুস্থ আছে। মা বাঘিনীর সঙ্গেই আছে। সপ্তাহখানেক পর লিঙ্গ নির্ধারণ করা যাবে। স্বাভাবিক বাঘের রঙ নিয়েই শাবক তিনটি জন্ম নিয়েছে।
২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ৩৩ লাখ টাকায় কেনা ১১ মাস বয়সী রাজ এবং ৯ মাস বয়সী পরীকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজ-পরীর তিনটি ছানার জন্ম হয়, যার মধ্যে দু্টি ছিল ‘হোয়াইট টাইগার’, অন্যটি কমলা-কালো ডোরাকাটা। পরদিন একটি সাদা বাঘ শাবক মারা যায়। অন্য সাদা বাঘিনীটি ‘শুভ্রা’। কমলা-কালো বাঘিনীটির নাম দেয়া হয় ‘জয়া’। শুভ্রা বাংলাদেশে প্রথম সাদা বাঘ।
সেই কমলা-কালো জয়া’র ঘরে ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর জন্ম নেয় তিন শাবক। কিন্তু প্রথমবার সন্তান জন্মদানের পর জয়া অসহিঞ্চু আচরণ শুরু করে। তার অবহেলায় পরদিন দুটি শাবক মারা যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় থাকা আরেকটির প্রাণ রক্ষায় নিজের হেফাজতে নেন চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর শুভ।
চিড়িয়াখানার কর্মীরা নিজেরাই দুধ খাইয়ে, নিবিড় পরিচর্যা করে, পেলে-পুষে বাঘের ছানাটিকে বাঁচিয়ে তোলেন। সাড়ে পাঁচ মাস পর ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল ‘বাইডেন’ নামের বাঘের ছানাটিকে খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই সময় ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে এসেছিল। শুভ তখন বাঘের ছানাটির নাম রেখেছিলেন ‘বাইডেন’, যদিও বলা হয়- প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সম্মানার্থে বাঘটির নাম রাখা হয় ‘জো বাইডেন’।
শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাইডেনের ঔরসে প্রথম সন্তান জন্ম হয়েছে। বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে এটা একটা বিরল ঘটনা। কারণে সে মানুষের ঘরে বড় হয়ে বাঘের ঘরে গেছে। বাঘের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য আত্মস্থ করে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে সে বংশবিস্তারের চক্রে অংশ নিয়েছে এবং এই প্রথম নিজের পরিবার তৈরি করেছে। এটা অবশ্যই বিরল ঘটনা।’
বাঘিনী জয়া প্রথমবার বাইডেনকে জন্ম দেয়ার পর যে অসহিঞ্চু আচরণ করেছিল, পরবর্তীতে সেটা অব্যাহত ছিল না। ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জয়া দ্বিতীয় দফায় আরও দু’টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল।
ডাক্তার শুভ বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায়ও বাঘিনী জয়া কিছুটা অসহিঞ্চু আচরণ শুরুতে করেছিল। তবে একদিন পরেই সে আবার স্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। এজন্য দ্বিতীয় দফায় জন্ম দেয়া দুটি শাবক তার পরিচর্যাতেই বড় হয়। এবার একদমই অসহিঞ্চু আচরণ করছে না। তিনটি শাবক স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠবে বলে আমরা আশাবাদী।’
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ