ডলার আসছে, কিন্তু থাকছে না— ইআরডি প্রতিবেদন
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:০৩
ঢাকা: দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ ও অনুদান হিসেবে দাতাসংস্থাগুলোর কাছ থেকে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বেশি ডলার পাওয়া গেছে। তবে সেই ডলার দেশে থাকছে না। ঋণ পরিশোধ করতেই বেশিরভাগ ডলার চলে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রতিশ্রুতিও বাড়িয়ে দিচ্ছে দাতাসংস্থাগুলো। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে সেই অর্থও সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। যা চাপ বাড়াচ্ছে ঋণ পরিশোধে।— অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ইআরডির প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে। একই সময়ে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও বাড়িয়েছে দাতা সংস্থাগুলো। তবে বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। যা সুসংবাদের পাশাপাশি দিচ্ছে দুঃসংবাদও।
ইআরডির তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বৈদেশিক অর্থছাড় হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। যেখানে একই অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এসেছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সেই হিসেবে শুধুমাত্র জানুয়ারিতে দাতা সংস্থাগুলো অর্থছাড় করেছে ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অথচ ওই মাসেই ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ জানুয়ারিতে দাতা সংস্থাগুলো যে অর্থছাড় করেছে তার অধিকাংশই ঋণ পরিশোধেই চলে গেছে।
বছরের ব্যবধানে অর্থছাড়ের পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে যেখানে অর্থছাড় হয়েছিল ৪২৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। সেখানে চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থছাড় হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ একবছরের ব্যবধানে অর্থছাড় বেড়েছে ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে নেওয়া বৈদেশিক ঋণের সুদাসলসহ ১৮৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১২৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে সরকারকে ৫৭ কোটি ১৯ লাখ ডলার বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে।
ইআরডির তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বেশি অর্থছাড় করেছে দাতাসংস্থাগুলো। একইসময়ে ৫৭ কোটি ১৯ লাখ ডলার বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। সেই হিসাবে অর্থবছরের ব্যবধানে অর্থছাড়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থছাড়ের চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে।
একইসঙ্গে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৬ কোটি ৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ, অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার, যা প্রায় দ্বিগুণের বেশি।
তবে অর্থছাড় এবং ঋণ পরিশোধে সুসংবাদ না থাকলেও ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে আছে সুসংবাদ। গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে অর্থসহায়তার প্রতিশ্রুতি বাড়াচ্ছে দাতা সংস্থাগুলো। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি অর্থসহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
ইআরডির তথ্য বলছে, জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৭১৭ কোটি ২১ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল মাত্র ১৭৬ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে প্রতিশ্রতি বেড়েছে ৫৪০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে। সংস্থাটি ২৬২ কোটি ২ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জাপানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২০২ কোটি ৬ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি। তবে অর্থছাড় করলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও চীন, ভারত ও রাশিয়া থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অর্থছাড়েও এগিয়ে এডিবি। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১২৪ কোটি ১১ লাখ ডলার অর্থছাড় করেছে সংস্থাটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থছাড় করেছে জাপান। দেশটির উন্নয়ন সংস্থা থেকে অর্থ এসেছে ৮৮ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) কাছ থেকে অর্থ এসেছে ৭৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার।
একই সময় ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার দিয়েছে রাশিয়া, আর চীন দিয়ে ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এ ছাড়া, ভারত ১৬ কোটি ৯৬ লাখ এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে ২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার এসেছে। বাকি ৩৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার অর্থছাড় করেছে অন্যান্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম