দলবেঁধে ধর্ষণে নারীর গর্ভের সন্তানের মৃত্যু, আসামি ধরছে না পুলিশ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:২৯
পাবনা: স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গর্ভবতী স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এতে তার গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ঘটনার ৫ দিন পার হলেও এখনও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ঘটনার পর থেকেই নানা চাপে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের ভাষ্য, পুলিশ আসামিদের ধরতে নানা তালবাহানা করছে।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দলবেঁধে ধর্ষণ ও আসামি না ধরতে পারার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পাবনার আমিনপুরের সাগরকান্দি ইউনিয়নের চর কেষ্টপুরে এ ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণে অভিযুক্তরা হলেন, চর কেষ্টপুরের মাজেদ প্রামানিকের ছেলে সেলিম প্রামাণিক (২৩), একই এলাকার মো. শরীফ (২৪), আনিছ সরদারের ছেলে রাজীব সরদার (২১), তালেব মন্ডলের ছেলে রুহুল মন্ডল (২৬), শফিক সরদারের ছেলে লালন সরদার (২০) ও মো. শামসুলের ছেলে সিরাজুল (২৩)।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চর কেষ্টপুরে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। মাহফিলের ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী। সেখানে ওয়াজ শুনে রাত ১২টার দিকে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে তাদের গতিরোধ করেন অভিযুক্ত ৬ যুবক। একপর্যায়ে তার স্বামীকে অস্ত্র ও ব্লেডের মাধ্যমে জিম্মি করে এবং ওই নারীকে পাশের ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে অভিযুক্তদের দু’জন ধর্ষণ করেন।
একপর্যায়ে ওই নারীর স্বামী তাদের কাছ থেকে ছুটে স্থানীয়দের বললে তারা দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তদের একজনকে আটক করে গণধোলাই দেন এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।
এসময় ওই নারীকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় লিটন মন্ডল, রাজ্জাক মন্ডল, নিফাস মন্ডল ও শহিদ মন্ডল বলেন, ‘আমাদের ওয়াজ মাহফিল চলা অবস্থায় রাত ১টার দিকে ওই ছেলে ছুটে এসে বলল, কিছু ছেলে তাকে মারধর করে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়রা গিয়ে একজনকে হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দেন। আর মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরীর কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ’
মামলার বাদী ভুক্তভোগীর নারীর স্বামী বলেন, ‘আমার স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। গর্ভের সন্তান মারা গেছে। মামলা হলেও আমাদের এখনও কোনো কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। থানায় গেলে কিছু পুলিশ সদস্য নানা কথা বলেন। আর যারা ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ থেকেও নানা হুমকি ও চাপ আসছে। আমরা ধর্ষণ এবং আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চাই।’
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরী বলেন, ‘স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে এলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। পরে তাদের বলি মেয়েটাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।’
অভিযুক্তরা এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরছে কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না। এটা নিয়ে প্রশাসনের তেমন তোড়জোড় আছে বলে তেমন মনে হচ্ছে না। আমরা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’
তবে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা সবাই পলাতক। তাদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশি গাফিলতার বিষয়টি মিথ্যা। ধর্ষণের ঘটনায় মীমাংসা হয় না, বাদীকে হুমকি-ধামকির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’
সারাবাংলা/এমও