Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে তুলা চাষ, প্রণোদনা দাবি

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৬

চুয়াডাঙ্গা: দেশে অধিকাংশ রফতানি আয় আসে বস্ত্র খাত থেকে। এর কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। প্রতিবছর বস্ত্র উৎপাদনে ৮০ থেকে ৮২ লাখ বেল তুলা প্রয়োজন হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া যায় মাত্র দুই শতাংশ তুলা। বাকিটা আমাদানি নির্ভর। এই নির্ভরতা কাটাতেই সরকারকে দেশে তুলা চাষে উৎসাহ ও চাষিদের প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও ইতোমধ্যে এই চাষ সম্প্রসারণে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় তুলা উন্নয়ন বোর্ড।

বিজ্ঞাপন

তুলা চাষ লাভজনক এবং জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ফলে ধীরে ধীরে তুলা চাষ চুয়াডাঙ্গার চাষিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তুলা গাছ ফুল আর পাঁকা-কাঁচা ফলে ভরে গেছে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে হাইব্রিড জাতের চারা তৈরি, তুলা চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও সাথী ফসলের সঙ্গে তুলা চাষ করে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে এ চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে চুয়াডাঙ্গা তুলা উন্নয়ন বোর্ড।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সমন্বয়ে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। চাষ হয় ৪ হাজার ২৬ হেক্টর জমিতে। ওই অর্থবছরে ১২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদিত হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দু’জেলায় ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, চাষ হয় ৪ হাজার ১৮২ হেক্টর জমি। এই অর্থবছরে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন তুলা উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে।

আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ হচ্ছে। বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করছেন চাষীরা। তুলা ছয় মাসের ফসল হলেও লাভজনক চাষ। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলা বোর্ড-১২, ১৩ ও ১৪ জাত, রূপালি-১, হোয়াইট গোল্ড-১ ও ২, ডিএম-৪ এবং শুভ্র-৩ জাতের তুলা চাষ হচ্ছে। এবার গোল ওয়ার্ম পোকা রোধের জন্য চাষিদের বিটি জাতের তুলা চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এ জাতের তুলা গাছ ক্ষতিকারক গোল ওয়ার্ম পোকা প্রতিরোধক। দেশে উৎপাদিত ধবধবে সাদা রঙ ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ তুলার বেশ চাহিদা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দো-আঁশ ও পলিযুক্ত মাটি এবং উচুঁ জমি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। বৈরী আবহাওয়া ঠেকাতে বীজতলায় বীজ বপণের ১০-১২ দিন পর মূল জমিতে চারা রোপণ করতে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে চাষিরা জমিতে চারা রোপণ করে। হাইব্রিড জাতের বীজ আগেই বপণ করতে হয়। তুলার জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বেশি। শুধু পোকা-মাকড় দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার হয়।

জানা গেছে, তুলা চাষে প্রতি বিঘা জমিতে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে যে চাষি শ্রমিক না নিয়ে নিজেই জমিতে কাজ করে তার খরচ তুলনামূলক কম। বিঘায় ১২ থেকে ১৫ মণ তুলা পাওয়া গেলে খরচ বাদে লাভ থাকে ৪৫ থেকে ৫২ হাজার টাকা। এ ছাড়া, তুলা জমি থেকে তোলার পর শুকনো গাছ চাষিরা জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে। শুকনো গাছ বিঘাপ্রতি তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলাতদিয়াড়ের তুলাচাষি সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। এবার ৬০ থেকে ৭০ মন তুলা উৎপাদন হবে। খরচ বাদে আড়াই লাখ টাকা মতো লাভ থাকবে।’ একই গ্রামের আরেক তুলাচাষি জসিম উদ্দিন সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানান, এক বিঘা জমিতে তুলার সঙ্গে তিনি সাথী ফসল হিসেবে লালশাক আবাদ করেছিলেন। সেখান থেকে আট হাজার টাকার লালশাক বিক্রি করেছেন। আর দুর্যোগের কারণে তার জমির তুলার গুটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার ফলন ভালো হয়নি। সে কারণে বিঘায় ১০ থেকে ১২ মণ তুলা উৎপাদন হবে। এক বিঘা জমিতে তার তুলা চাষে খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা বেলগাছী এলাকার তুলাচাষি সারজেত সারাবাংলাকে জানান, তিনি ১৫ কাঠা জমিতে তুলার সঙ্গে মাসকলাই আবাদ করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে মাসকলাই নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও তিনি খরচ বাদে তুলা ও মাসকলাই বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা লাভ করবেন বলে জানান।

চুয়াডাঙ্গা প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা সেন দেবাশীষ সারাবাংলাকে জানান, এবার তুলা গাছ ভালো হওয়ার পরও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু ফুল ও কুঁড়ি ঝরে গেছে। ফলে ফলন কিছুটা কম হবে। তারপরও কৃষকরা সময় মতো পরামর্শ পাওয়ায় তারা ভালো ফলন পাবে বলে আশা করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষকদের বিভিন্নভাবে তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। যেহেতু তুলা ছয় মাসের ফসল, সে কারণে তুলা চাষে দু’লাইনের মধ্যবর্তী স্থানে লালশাক, মুলা ও মাসকলাই লাগানোর পরামর্শ দিয়েছি। যাতে তারা একই সময় দুটি ফসল চাষ করে বেশি লাভবান হতে পারে এবং জমির সর্বোচ্চ সৎ ব্যবহার করতে পারে। এতে কৃষকরা তুলা চাষে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে।’

সেন দেবাশীষ আরও বলেন, ‘আগামীতে কর্মসূচি আকারে কৃষকদের সাথী ফসলের সঙ্গে তুলা চাষে সহায়তা করা হবে। গত বছর বিটি জাতের তুলা বীজ প্রদর্শনী আকারে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের বিটি জাতের তুলা বীজ দিতে পারলে তাদের জমিতে ক্ষতিকারক গোল ওয়ার্ম পোকা ক্ষতি করতে পারবে না। এতে কীটনাশক বাবদ খরচ কম হবে ও পরিবেশ দূষণ কমে যাবে। কৃষকরা এ জাতের তুলা চাষ করলে উৎপাদন বাড়বে।’

বস্ত্রখাতে চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ জোগান দিতে পারে দেশের উৎপাদিত তুলা। সে কারণে সরকারের প্রতি তুলা খাত আরও সম্প্রসারিত করে এর চাষ সমৃদ্ধশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাবাংলা/পিটিএম

চুয়াডাঙা তুলা চাষ প্রণোদনা দাবি মেহেরপুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর