Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিক্রিতে খুশি নন ‘ছোট প্রকাশকরা’, খরচ তোলা কঠিন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৯

ঢাকা: অধিবর্ষে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিন পর্দা নামার কথা ছিল বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার। প্রকাশকদের অনুরোধে বিশেষ বিবেচনায় মেলার সময়সীমা আরও দুইদিন বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলার সময়সীমা বাড়লেও বিক্রি নিয়ে খুশি হন এক ইউনিট স্টল বরাদ্দ নেওয়া প্রকাশকরা। কেউ বলছেন মেলার খরচই তারা তুলতে পারবেন না। আবার কেউ বলছেন, বিক্রি মোটামুটি হলেও তা সন্তোষজনক নয়।

বাংলা একাডেমির তথ্যমতে— এবার নতুন ২০টি প্রকাশনা সংস্থা স্টল বরাদ্দ পায়। সোহরাওয়ার্দী অংশে ৪৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৬টি প্রতিষ্ঠান এক ইউনিট, ১০৩টি প্রতিষ্ঠান দুই ইউনিট, ৩৯টি প্রতিষ্ঠান তিন ইউনিট এবং ২০টি প্রতিষ্ঠান চার ইউনিটের স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। প্যাভিলিয়ন পেয়েছে ৩৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু চত্বরে ৬৭টি প্রতিষ্ঠান স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান এক ইউনিট, ২০টি প্রতিষ্ঠান দুই ইউনিট, পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিন ইউনিট এবং তিনটি প্রতিষ্ঠান চার ইউনিটের স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে এক ইউনিটের স্টল প্রায় তিনশ।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়— সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক ইউনিটের প্রকাশক-বিক্রেতারা ‘অনেকটা অলস’ সময় কাটাচ্ছেন। কোনো কোনো স্টলের সামনে ক্রেতা নেই বললেই চলে।

নোলক প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মো. আবরার বলেন, ‘আমাদের এখানে বেশকিছু কবিতা-উপন্যাসের বই আছে। তবে উপন্যাসের চাহিদা মোটামুটি। তবে বেচাকেনা খুব জোরালো তা নয়।’

বেচাকেনার বিষয়ে আবরার বলেন, ‘দুইদিন আগে বিক্রির হিসাব করেছিলাম। কিন্তু বিক্রির অবস্থা ভালো না। এবার আমাদের বইমেলার খরচই উঠবে না।’

বিজ্ঞাপন

বটেশ্বর বর্ণনের ম্যানেজার সৈয়দ মনজিল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে। মেলায় যে খরচ হয়েছে তা এই বেচাকেনা দিয়ে পূরণ করা যাবে না।’

সম্প্রীতি প্রকাশনীর প্রকাশক রেজাউল করিম বিল্লাল এবার বইমেলা উপলক্ষে বিনিয়োগ করেছেন ৭/৮ লাখ টাকা। তিনি জানান, এ বছর নতুন বই প্রকাশ করেছেন অন্তত ২৫টি।

বই বিক্রিতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিক্রির অবস্থা মোটামুটি। কিন্তু এই বিক্রিতে খরচ উঠে আসবে না।’

এত টাকা বিনিয়োগ করলেন খরচ কীভাবে উঠবে তাহলে? প্রশ্নের জবাবে সম্প্রীতি প্রকাশনীর প্রকাশক বলেন, ‘দেখা যাক। ভবিষ্যতে কিছু না কিছু তো হবে। এবার না হোক, সামনে অপেক্ষায় আছি।’

অক্ষরবৃত্তের বিক্রয়কর্মী জিহাদ বলেন, ‘বিক্রি আশানুরূপ বলা চলে। তবে তাতে খুশিও না, বেজারও নই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রেতা না থাকায় নিজেদের মধ্যে গল্পে মত্ত শিল্পতরু প্রকাশনীর দুই প্রকাশক মো. খোকন ও সাইফুল। সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে বেচাকেনার অবস্থা জানতে চাইলে হতাশা প্রকাশ করে মো. খোকন বলেন, ‘বেচাকেনা নেই। যে পরিমাণ বেচাকেনা হয়েছে তাতে খরচ ওঠেনি।’

খোকনের কথা শেষ হওয়ার পরপরই শিল্পতরুর আরেক প্রকাশক সাইফুল বলেন, ‘মেলায় ঢুকে পাঠক-ক্রেতারা চলে যাচ্ছে বড় বড় স্টল কিংবা প্যাভিলিয়নে। এক ইউনিটের স্টলে ক্রেতারা কমই আসে। আবার কেউ এলেও তারা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বই খুঁজতে চান না।’

জ্ঞানজ্যোতি প্রকাশনীর প্রকাশক তপন কান্তি দে বলেন, ‘বইমেলায় এক ইউনিটের স্টলের পেছনে খরচ অন্তত ৮০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত কোনোমতে ৫০ হাজার টাকা বেচাকেনা করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘মেলা আছে আর দুইদিন। মেলার স্টলের খরচই উঠবে বলে মনে করি না।’

বইমেলার ২৯তম দিনে নতুন বই এসেছে ১২৭টি। গতকাল বুধবার এ সংখ্যা ছিল ৮০টি। এ নিয়ে এবারের বইমেলায় প্রকাশ হওয়া নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৩৮৩ টিতে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে বিষয়টি জানানো হয়।

জানা যায় বৃহস্পতিবার মেলাতে গল্প ১৮টি, উপন্যাস ২১টি, প্রবন্ধ ১৪টি, কবিতা ৪০টি, গবেষণা ১টি, ছড়া ১টি, শিশুসাহিত্য ৩টি, জীবনী ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ১টি, নাটক ৩টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ১টি, বিজ্ঞান ১টি, রাজনীতি ১টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ১টি, রম্য/ধাঁধা ৩টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ৪টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্যান্য ৮টি বই নতুন এসেছে।

আগামীকাল মেলার ৩০তম দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

সারাবাংলা/একে

অমর একুশে বইমেলা বইমেলা ২০২৪ বাংলা একাডেমি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর