Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পর্দা নামল ‘রুগ্‌ণ, অস্বস্তিকর, অবিন্যস্ত, শ্রীহীন’ বইমেলার

আসাদ জামান
২ মার্চ ২০২৪ ২২:৫৬

ঢাকা: ‘গত এক দশকের মধ্যে এবারের বইমেলা ছিল সবচেয়ে অগোছালো, শ্রীহীন, অরুচিকর, অবিন্যস্ত এবং অস্বস্তিকর, দরিদ্র ও রুগ্‌ণ’— নিয়মিত বইমেলায় আসা লিটলম্যাগ ভাষাতরীর সম্পাদক এম উমর ফারুকের এই মূল্যায়ন দিয়ে বইমেলার সমাপনী দিনটির গল্প শুরু হতে পারে।

ফরিদপুর থেকে বইমেলায় আসা কবি গালিব রহমানের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট, ‘এবারের মতো এত রুগ্‌ণ, অবহেলিত, চারুহীন লিটলম্যাগ চত্বর আর হয়নি। অবহেলা কাকে বলে, তা বাংলা একাডেমির কর্তাগণ দেখিয়ে দিলেন, বুঝিয়ে দিলেন তারা লিটল ম্যাগাজিন বোঝেন না।’

বিজ্ঞাপন

দুজন তরুণ সাহিত্যসেবক বইমেলা নিয়ে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, তা আর দশজন সাধারণ দর্শনার্থী বা পাঠকের মূল্যায়নের সঙ্গে মেলানোর সুযোগ নেই। কারণ সাধারণ পাঠক ৩১ দিনের মধ্যে হয়তো দুদিন বা একদিন বইমেলায় এসেছেন। কিন্তু তারা এসেছেন ৩১ দিনই! সুতরাং তাদের মূল্যায়নকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো— বাংলা একাডেমি কি এসব তরুণ সাহিত্যসেবককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে?

অধিবর্ষের কল্যাণে ২৯ দিন ছিল বইমেলার স্বাভাবিক আয়ু। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরও দুদিন বাড়িয়ে সেটিকে ৩১ দিনে উন্নীত করে বাংলা একাডেমি। এই ৩১ দিনের মধ্যে কোনোদিন হয়তো ধুলোর যন্ত্রণায় নাকাল হয়েছে পাঠক-দর্শনার্থী, কোনোদিন বা মাত্রাতিরিক্ত পানি ছিটানোর কারণে অথবা অতি বর্ষণে বইমেলাজুড়ে ছিল অস্বস্তিকর কাদা!

তারপরও আত্মতৃপ্তির ঢেকুর গিলেছেন বাংলা একাডেমির কর্তাব্যক্তিরা। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তো বলেই দিয়েছেন, ‘২০২৪-এর বইমেলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। শীতে শুরু হয়ে বইমেলা স্পর্শ করেছে বসন্ত-বাতাস। একুশের রক্তপলাশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্চের চেতনার রঙ।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না লেখক, পাঠক, প্রকাশক, দর্শনার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা। বইমেলার দুই অংশের অঙ্গসজ্জায় জরাজীর্ণ দশা, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ও পাঠক বলছি মঞ্চের শ্রীহীন অবস্থা, মসজিদের নিগিঢিগি ভাব, বাথরুমের করুণ দশা— সব কিছু মিলিয়ে এবারের বইমেলাকে দশে তিন দেওয়া কঠিন বলে মনে করছেন তারা।

বইমেলার শেষ দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দাঁড়িয়ে কথা হয় তরুণ লেখক সুধাংশু ধরের সঙ্গে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত এক দশক ধরে নিয়মিত বইমেলায় আসি। কিন্তু এবারের মতো এত রুগ্‌ণ আর শ্রীহীন বইমেলা আগে দেখিনি। যে দিকে তাকাই মেলার রুগ্‌ণ চেহারাটাই কেবল চোখে পড়ে।’

সাধারণত বইমেলার শেষ দিন মানেই মেলা প্রাঙ্গণে প্রচণ্ড ভিড়। কিন্তু শনিবার বইমেলায় সে রকম ভিড় দেখা যায়নি। আগের দিন শুক্রবারও বইমেলায় তেমন ভিড় ছিল না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, একদিন আগে বেইলি রোডে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক অগ্নিদুর্ঘটনার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভাবান্তর তৈরি হয়েছে। যার ফলে ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে বইমেলা ঢুঁ মারার পরিকল্পনা থেকে অনেকেই সরে গেছেন। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া কেউ বইমেলায় আসেননি।

রামপুরা থেকে পরিবারসহ বইমেলায় আসা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সন্দিপন স্যান্ডি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসলে বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিদুর্ঘটনার পর বইমেলায় আসার মতো মানসিক অবস্থা আমাদেরও ছিল না। কিন্তু বাচ্চাটাকে আগেই বলে রেখেছিলাম বইমেলায় নিয়ে যাব। তাই আসতে হলো।’

বইমেলার পাঠক সমাবেশের প্যাভিলিয়নে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান, পাঠক সমাবেশের স্বত্বাধিকারী সাহিদুল ইসলাম বিজু, তরুণ কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেনসহ কয়েকজন। তাদের আলোচনাতেও বইমেলার শ্রীহীন অবস্থার বিষয়টি উঠে আসছিল।

সারাবাংলাকে মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, ‘কোনোকিছু নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, চারপাশে তো ইতিবাচক কিছু দেখি না। যারা যেখানে আছেন, তারা নিজেদেরকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে জ্ঞান করেন। সমস্যাটা আমাদের এখানেই। সদিচ্ছা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে বইমেলাটা হয়তো আরও সুন্দর করা যেত।’

সাহিদুল ইসলাম বিজু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বইমেলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। তবে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যেও পাঠক এবং সাধারণ দর্শনার্থী বিপুল আগ্রহে বইমেলায় এসেছে, বই কিনেছে অথবা বই না কিনলেও ঘুরে-ফিরে মেলার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। এ জন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি, এই ধারা তারা অব্যাহত রাখবে। আর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষও তাদের ত্রুটিগুলো দূর করার ব্যাপারে যত্নবান হবে।’

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশাল এ কর্মযজ্ঞে কিছু কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি যে হয়নি, তা আমরা বলব না। আপনাদের ফাইন্ডিংসগুলো আমার গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। পরবর্তী বইমেলা এগুলো দূর করার চেষ্টা করব।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

অমর একুশে বইমেলা প্রাণের মেলা বই বইমেলা বইমেলা ২০২৪ বাংলা একাডেমি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর