হকারমুক্ত ফুটপাত চেয়ে রাস্তায় এবার দোকান মালিকরা
৪ মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে ফুটপাত দখল ও হকারমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে এবার রাস্তায় নেমেছে দোকান মালিক সমিতির নেতারা।
সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে নিউমার্কেটের বিপণী বিতানের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে তারা ফুটপাত থেকে হকারমুক্ত করার দাবি জানান।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছিল চট্টগ্রাম নগরীর অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খোরশেদ আলম বলেন, ‘রাস্তা ও ফুটপাত সবসময় যেন এমন থাকে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। তবে হকারদের রাস্তা-ফুটপাত ও দোকানের সামনে বসতে না দিয়ে অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। রাস্তা ও ফুটপাতে হকার বসার কারণে আমাদের সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হকারমুক্ত, সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দিতে হবে। অন্যথায় আমরা চট্টগ্রামের সমস্ত ব্যবসায়ীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলেন, রাস্তা ও ফুটপাত যাতে সবসময় জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকে এবং তারা যেন কোনো ধরনের ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই মার্কেটে আসতে পারে সেজন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) ব্যবস্থা নিতে হবে। চসিক হকারমুক্ত যে রাস্তা ও ফুটপাত করেছেন সেটা যেন স্থায়ী থাকে। চসিক মেয়র যে সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন সেজন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
এ সময় দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি এম এ সোলাইমান, নগর সভাপতি সালাম আলী, তামাকুমন্ডি লাইনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ দুলাল, টেরিবাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মো. আমিন, রিয়াজুদ্দিন বাজারের সভাপতি সালামত আল ও নিউমার্কেটের সভাপতি মো. ছগীর উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে নতুন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, ফলমণ্ডি, তামাকমুণ্ডি লেইন ও আমতলসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা থেকে হাজারেরও বেশি হকার উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এসব এলাকার ফুটপাত থেকে সড়কের একাংশ দখলে নিয়ে এসব হকার পোশাক, মোবাইল, জুতা, তৈরি খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিল। ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কারণে এসব এলাকায় নিয়মিত যানজট লেগে থাকতো।
উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকাররা বিক্ষোভ করেছিলেন। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নিয়ে হকাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পর দিন হকারদের কেউ কেউ আবারও বসতে চাইলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। এরপরও হকাররা সড়ক ও ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখলে নিতে শুরু করলে ১২ ফেব্রুয়ারি ফের অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এ সময় হকারদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাংচুর করা হয় সিটি করপোরেশনের যানবাহন। পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় হকারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
সর্বশেষ রোববার (৩ মার্চ) নিউমার্কেট মোড়ের আশপাশের এলাকায় ফের ফুটপাত দখলের চেষ্টা করা হলে আবারও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে চসিক। এদিন নগরীর রাইফেল ক্লাব, আমতল, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকমুণ্ডি লেইন হয়ে নিউমার্কেট মোড়, এর সেখান থেকে স্টেশন রোড, ফলমণ্ডি এবং এর বিপরীতে জিপিও, দোস্ত বিল্ডিংয়ের প্রবেশপথ এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
এর আগে, বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাজারখানেক শ্রমিক মিছিল নিয়ে মেয়রের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলেও মেয়র তাদের দেখা দেননি। স্মারকলিপিতে হকাররা রমজানে তাদের ফুটপাতে ব্যবসা করতে দেওয়ার দাবি জানান। তবে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি চসিকের নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সভায় সড়ক-ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হকারদের আর বসতে না দেওয়ার বিষয়ে অনড় থাকার কথা ঘোষণা করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। কোনো চাপে নত না হয়ে আরও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনারও ঘোষণা দেন তিনি।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম